নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০
জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ক্ষমতায় থেকে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠ পোষকতায় সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীকে ব্যবহার করে এ দলটি বিভিন্ন দল থেকে নেতাদেরকে নিয়ে এসে; জিয়াউর রহমানের ক্ষমতাকে পাকা-পোক্ত করার জন্যই গঠিত হয়েছিলো।
ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বিএনপি কখনোই সত্যিকারের নির্বাচন এবং জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। সেই ক্ষমতা তাদেরকে হারাতে হয়, আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। এরশাদ ক্ষমতায় আসেন ১৯৮২ সালে। এরপর বিএনপি দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম করে। নব্বইয়ে এরশাদের পতনের পর ‘৯১ এর নির্বাচন ছিলো একটি ষড়যন্ত্র মূলক নির্বাচন।
সাম্প্রতিক সময়ে আইএসআই এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ওই নির্বাচনে বিএনপিকে জয়ী করার জন্য আন্তর্জাতিক একটি ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত ছিলো। ২০০১ এর নির্বাচনেও বিএনপি ভারতের সঙ্গে এক ধরনের আতাঁত এবং সমঝোতা করে নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করেছিল। প্রশাসনকে ব্যবহার করে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল, যে পরিস্থিতির কারণে ভোটে জনগণের মনোভাবের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটেনি। বিএনপি-জামাত জোট ওই নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলো।
এ ছাড়া ১৯৯৬ সালে একটি প্রহসনের নির্বাচন বিএনপি করেছিল। যে নির্বাচনে কোন মানুষ ভোট দেয়নি। দুই শ‘র বেশি নির্বাচনী এলাকায় কোন ভোট কার্যক্রম পরিচালিত না হওয়ার পরও, বানোয়াট ভোটের ফলাফল দেখানো হয়েছে। কাজেই বিএনপির রাজনৈতিক চরিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বিএনপি সব সময় অন্য কোন শক্তি বা কোন ষড়যন্ত্র বা বিদেশীদের সাথে আতাঁতের মাধ্যমে সব সময় ক্ষমতায় এসেছে। সরাসরি ভোট করে, জনগণের রায় নিয়ে ক্ষমতায় আসার ইতিহাস বিএনপির নেই। আর এখনও বিএনপি একই রকম ষড়যন্ত্র করছে, বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিএনপি যখন ক্ষমতায় না থাকে, তখনও তারা ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে জনগণের শক্তি ব্যবহার না করে; বরং নানা রকম ষড়যন্ত্র এবং আতাঁতের পথ বেছে নেয়। আমরা যদি দেখি ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে। তাদেরকে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয়েছিল ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার জন্য। এরশাদকে টিকিয়ে রাখার জন্যই বিএনপি তখন ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
একইভাবে, ২০১৪ সালে বিএনপিকে বিভিন্ন বিদেশী মহল থেকে নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিলো। নির্বাচনে না গেলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে, এমন একটি ধারণা তাদেরকে দেয়া হয়েছিলো। যদিও ওই যড়ষন্ত্র সফল হয়নি। বিএনপির অনেক নেতাই বলে, ঐটি ছিলো একটি ফাঁদ। যে ফাঁদে পা দিয়ে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও বিএনপি জনগণের ওপর নির্ভরশীল নয়। জনগণের ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক দলকে সংগঠিত করা, আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে ধাপে ধাপে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা এসব বিষয়ে নাই। বরং এখন বিভিন্ন প্রাসাদ যড়ষন্ত্রের কথা শোনা যাচ্ছে। গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে সৌদি আরব, দুবাই, লন্ডনে বিএনপি যে সমস্ত যড়ষন্ত্র করছে। বিএনপি যে সমস্ত যড়ষন্ত্র করছে, তার সব খবরই তাদের কাছে আছে।
এখন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে। গত ১১ বছরে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। শেখ হাসিনা তার প্রজ্ঞা মেধা এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দিয়ে এমন এক উচ্চতায় পৌছে গেছেন যে, আন্তর্জাতিক মহল তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আন্তর্জাতিক মহল সব সময় মনে করে তিনি একজন যোগ্য নেতা, যিনি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক ক্রুটি, বিচ্যুতি, দুর্নীতি এবং ভুল-ভ্রান্তির পরেও শেখ হাসিনার কারণেই আওয়ামী লীগের ব্যাপারে এখনও দেশে-বিদেশে প্রভাবশালী সকলেই আস্থাশীল।
আর তাই প্রশ্ন উঠেছে যে, বিএনপি যে এখন নতুন করে বৈঠক করছে বা ভারতের সঙ্গে দেন-দরবার করার চেষ্টা করছে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি তার মূল চরিত্র থেকে বিচ্যুত হচ্ছে কিনা- এটি বিএনপিকে আর্দশচ্যুত করা, বিএনপিকে আরও দেউলিয়া করার ফাঁদ কিনা? ২০১৪ সালে বিএনপি যেভাবে ফাঁদে পা দিয়েছিলো। এখন বিভিন্ন মহলের সাথে দেন-দরবার করে ভারত বিরোধী অবস্থান থেকে সরে আসা। জামাতকে ত্যাগ করা বা বিভিন্ন নীতি-কৌশল পরির্বতনের মাধ্যমে বাংলাদেশে যে আওয়ামী বিরোধী ভোট ব্যাংক সেই ভোট ব্যাংকও বিএনপি হারাতে যাচ্ছে কিনা- সেই নিয়ে স্বয়ং বিএনপির মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে।
বিএনপির একাধিক নেতাই মনে করেন যে, জনগনের শক্তির ওপরেই ভর করে বিএনপিকে দাঁড়াতে হবে। বিএনপি’র ভারত বিরোধী আওয়ামী লীগ বিরোধী যে ভোট ব্যাংক, সেই ভোট ব্যাংকের উপর আস্থা রাখতে হবে। বিএনপির এখন যে পরিবর্তিত রূপ, সেই পরিবর্তিত রুপ কি বিএনপিকে পূর্ণগঠিত করতে পারবে? বিএনপিকে কি বিদেশীদের কাছে আস্থাভাজন করতে পারবে?
নাকি বিএনপি এই ফাঁদে পড়ে, আবার দেউলিয়া হবে- এই নিয়ে এখন বিএনপির মধ্যেও বির্তক চলছে।
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি বাংলাদেশের নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মেজর হাফিজ সাকিব আল হাসান কিংস পার্টি ড. মঈন খান বিএনপি
মন্তব্য করুন
মো. সিদ্দিকুর রহমান আওয়ামী লীগ বিপ্লব বড়ুয়া সুজিত রায় নন্দী
মন্তব্য করুন
আবদুল আউয়াল মিন্টু তারেক জিয়া বিএনপি ২৮ অক্টোবর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার জন্য নতুন করে আবেদন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার ভাই শামীম ইস্কান্দারের করা এই আবেদন এখন আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন যে, সচিব তাকে ফাইলটি পাঠিয়েছেন। এটি তিনি দেখছেন। আগামীকাল তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। আইনমন্ত্রী এও বলেছেন যে, এ ব্যাপারে পূর্বের সিদ্ধান্ত থেকে তিনি খুব একটা সরে আসবেন না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে কি ধোঁকা দিয়েছে—এরকম একটি প্রশ্ন এখন বিএনপির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিএনপি নেতারা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনায় এই প্রসঙ্গটি বারবার আনছেন। বিএনপির একাধিক নেতা মনে করে, বিএনপি যে আগ্রাসী অবস্থান গ্রহণ করেছিল, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিএনপি কর্মীদের মধ্যে যে তেজি ভাব এসেছিল, তার প্রধান কারণ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব এবং আগ্রহ। তাছাড়া বিভিন্ন সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা কূটনীতিকরা বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যে ভাষায় যে ভাবে কথা বলেছেন তাতে বিএনপির নেতাদের মধ্যে স্থির বিশ্বাস জন্মগ্রহণ করেছিল যে, তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে চায় না। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম এজেন্ডা। আর এ কারণেই বিএনপি নেতারা এই বক্তব্যটিকে তাদের কর্মীদের কাছে সঞ্চারিত করেছিল এবং কর্মীরা উৎসাহিত হয়েছিল।
টানা ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। ১৬ বছরে পা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ। টানা ক্ষমতায় থাকলেও আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রে একটা ভারসাম্য লক্ষ্য করা যায়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীদেরকে বিভিন্ন সময় পরিবর্তন করে একেক মেয়াদে একেক জনকে মন্ত্রী করেন এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পরিবর্তন করে নেতাদের যেমন যোগ্যতা পরিমাপ করেন, ঠিক তেমনি তাদেরকে ক্ষমতাবান করেন।
নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে একশ কোটি টাকার বেশি উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। সরকারের সঙ্গে দেন দরবার করছেন। কাকে কাকে আটক করতে হবে এবং কারা কারা বিএনপিতে বড় ধরনের আন্দোলন করতে চায়, সরকারের জন্য বিপজ্জনক সেই নামের তালিকা সরবরাহ করেছেন। কাদেরকে বাইরে রাখলে কোন সমস্যা নেই সে নামও জানিয়েছেন সরকারি দলের লোকজনকে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেন বিএনপি কোনো বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতে পারে সেজন্য আশ্বাসও দিয়েছেন। তার এই আশ্বাসের কারণেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনেকটা নির্ভর অবস্থায় নির্বাচন করেছে এবং বিএনপি যথারীতি নির্বাচন প্রতিরোধে কোন বড় ধরনের সহিংসতা বা নাশকতা করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছে।