নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৯ পিএম, ২৯ অক্টোবর, ২০২০
২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর। বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস এবং সংবিধান বিপন্ন করার এক কলঙ্কিত দিন। আর এই দিনেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে চিরদিনের জন্য কবর দিয়েছিল বিএনপি-জামাত জোট সরকার। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ছিল বিএনপি জামাতের শেষ দিন। আর এই দিনেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের শপথ গ্রহণ করার কথা ছিল। আওয়ামী লীগ সহ সকল দল বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তারা লাগাতার আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ২৮ অক্টোবর ঢাকা শহরে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। আর এই সংঘর্ষের জের ধরেই বিচারপতি কে এম হাসান জানিয়ে দেন যে, তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে অক্ষম, অপরাগ।
এর পরপরই তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদ কোন সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে নিজেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন। ওই সময়ে এই সমস্ত ঘটনায় জড়িত একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে পাওয়া গেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ২৭ তারিখে বেগম খালেদা জিয়া মোটামুটিভাবে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, কে এম হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হতে রাজি নয়। তিনি বিরোধী দলের আন্দোলনে ভয় পেয়েছিলেন বলে জানা যায়। যদিও তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। কিন্তু নির্ঝঞ্ঝাট জীবনযাপনে অভ্যস্ত এই সাবেক প্রধান বিচারপতি নিজেকে নতুন করে ঝামেলায় জরাতে চাননি। তিনি যখন অস্বীকৃতি জানালেন, তখন বেগম খালেদা জিয়া তার বাসভবনে সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য যে, জেনারেল মঈন ইউ আহমেদকে সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। আর তাকে সেনাপ্রধানও বানানো হয়েছিল ৭ জনকে ডিঙ্গিয়ে। জানা গেছে, এর প্রধান উদ্দেশ্যে ছিল নির্বাচন; নির্বাচনের সময় সেনপ্রধান যদি অনুগত থাকে তাহলে ক্ষমতাসীন দল অনেকগুলো সুবিধা পায়। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটা এমন ছিল যে, সেখানে যদি নিজের অনুগত একজন তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখা যায়; রাষ্ট্রপতি যদি পক্ষে থাকে; সেইসাথে সেনাপ্রধানও যদি পক্ষে থাকে; তাহলে নির্বাচনে কারচুপি ও জালিয়াতি করাটা অনেক সহজ হয়ে যায়। আর এই রকম একটি মহা পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছিল বিএনপি। কিন্তু বিরোধী দল যখন আন্দোলনে নামে বিচারপতি কে এম হাসান তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হতে অস্বীকৃতি জানান। তখন বেগম খালেদা জিয়া ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ উপর খুব একটা ভরসা পাচ্ছিলেন না।
কারণ ইয়াজউদ্দীন আহম্মেদ ছিলেন একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। আর ছাপোষা এই মানুষটিকে দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ঝুঁকি বেগম খালেদা জিয়া নিতে চাননি। বেগম খালেদা জিয়া চেয়েছিলেন আপদকালীন সময়ের জন্য সামরিক শাসন। আর এই কারণেই ২৭ তারিখ রাতে জেনারেল মঈন ইউ আহমেদকে মইনুল হোসেনের বাসভবনে ডেকে নিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, সে সময় জেনারেল মঈন ইউ আহমেদের সঙ্গে প্রায় ৩০ মিনিট কথা হয় বেগম খালেদা জিয়ার। সেনাপ্রধান বেগম খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন হলেও সেদিন কথা রাখেন নি তিনি। সে সময় বেগম খালেদা জিয়া তাকে বলেছিলেন দেশের এই পরিস্থিতিতে কে এম হাসান দায়িত্ব গ্রহণ করেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং ইয়াজউদ্দিনের উপর তার কোন আস্থা নেই। কারণ ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ চাপ সহ্য করতে পারবেন কি না তা নিয়ে বেগম জিয়ার যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ তখন বিভিন্ন রোগ-শোকেও আক্রান্ত ছিলেন।
কাজেই একটা একটা কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি দৃঢ়তা দেখাতে পারবেন কি না তা নিয়ে তারেক ও খালেদা জিয়ার মধ্যে সন্দেহ ছিল। আর এ কারণেই তারা চাচ্ছিলেন যে, মঈন ইউ আহমেদ ক্ষমতা নিক। এক বছর বা দু’বছর দায়িত্ব পালন করে পুরো দেশের পরিস্থিতি ঠিক হলে আবার বিএনপি দেশের শাসন ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু মঈন ইউ আহমেদ সে সময় বেশ চাতুর্যের পরিচয় দেন। তাৎক্ষনিকভাবে তিনি হ্যা না কিছু না বলে; বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে তিনি জানাবেন বলে জানান। কারণ সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণ কোন একক ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। এটি পুরো সেনাবাহিনীকে একত্রিত করার বিষয় আছে। এ কারণে তাকে ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
বেগম খালেদা জিয়া মঈন ইউ আহমেদের কথায় সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। আর তাই তিনি কে এম হাসানকে আপদকালীন সময়ের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে মেনে নিতে আপত্তি করেননি। বেগম খালেদা জিয়া জানতেন যে, মঈন ইউ আহমেদ যে কোন সময় ক্ষমতা গ্রহণ করবে। এ কারণেই মঈন ইউ আহমেদরা বঙ্গভবনে গিয়ে ইয়াজউদ্দীন আহমেদকে সরিয়ে দেওয়ায় বেগম খালেদা জিয়া কিছুটা খুশীই হয়েছিলেন। বেগম খালেদা তার ঘনিষ্ঠ অন্তত দু’জনকে বিএনপি নেতাকে বলেছিলেন, সব কিছুই তাদের ছক মতোই হয়েছে। মঈন ইউ আহমেদ তাদের পক্ষেই ক্ষমতা নিচ্ছেন। কিন্তু মঈন ইউ আহমেদ যে একটা ডিগবাজী দিবেন এবং অন্যান্য সুশীল ও বিভিন্ন কূটনীতিকদের সঙ্গে মিলে উল্টো বিএনপিকেই বিপদে ফেলবেন এটা বেগম খালেদা জিয়া বুঝতে পারেননি।
আবার মঈন ইউ আহমেদের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, বেগম খালেদা জিয়ার সবুজ সংকেত পেয়েই মঈন ইউ আহমেদ বুঝতে পারেন যে, ক্ষমতা গ্রহণ করা যায়; অন্তত বিএনপির পক্ষ থেকে কোন প্রতিরোধ হবে না। আর এই কারণেই এরপর থেকে মঈন ইউ আহমেদ সামরিক বাহিনীর মধ্যে তার বন্ধু এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করেন। ১১ জানুয়ারি ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে এবং ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান থেকে হটিয়ে দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।