নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৯ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
১১ জুন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মুক্তি পান এবং পরদিন তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। শেখ হাসিনার মুক্তির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সংস্কারপন্থীদের কর্তৃত্ব শেষ হয়ে যায় এবং দল ঐক্যবদ্ধ থাকে। শুধুমাত্র মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মনসুর, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ছাড়া আর কোনও উল্লেখযোগ্য নেতাই আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনাকে মাইনাসের জন্য চ্যালেঞ্জ করার পক্ষে ছিলেন না। এমনিক শীর্ষ ৪ নেতা যারা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তারাও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরবর্তী নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে অভিন্ন মত পোষণ করেন এবং জিল্লুর রহমানের সঙ্গে সখ্যতা রেখে দলীয় কর্মকাণ্ডের দিকে মনোযোগী হন। কিন্তু শেখ হাসিনার মুক্তির মধ্য দিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
এ সময় সাইফুর রহমান এবং মেজর হাফিজ উদ্দিনের বিএনপি, মূল বিএনপি হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং এই বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় কার্যালয় দখল করা হয়। নির্বাচন কমিশনে ধানের শীষ প্রতীক চেয়ে এই দুই নেতা আবেদন করলে নির্বাচন কমিশন সেই আবেদন মঞ্জুর করে খোন্দকার দেলোয়ারের বিএনপিকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দিতে অস্বীকৃতি জানান। এটি নিয়ে বিএনপির মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং বিএনপির শীর্ষ নেতারা সকলেই খালেদা জিয়ার বিপক্ষে ছিলেন আর কেউ কেউ ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে।
এস সময় সাইফুর রহমান, মান্নান ভূঁইয়াসহ স্থায়ী কমিটির ৯০ শতাংশ সদস্যই বেগম খালেদা জিয়া এবং জিয়া পরিবারকে মাইনাস করে একটি নতুন বিএনপি গঠনের পক্ষে। অন্যদিকে সাদেক হোসেন খোকার মতো নেতারা চেয়েছিলেন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে গা বাঁচিয়ে চলতে। আর সেই জন্য সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে শতকোটি টাকার দুর্নীতির মামলা থাকলেও তিনি গ্রেফতার হননি।
বিএনপিতে একটি ক্ষীণ ধারা খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলো। এই ধারায় ছিলেন হান্নান শাহ, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন এবং রুহুল কবির রিজভী। এই ত্রিমুখী বিরোধে বিএনপি কার্যত এবং দৃশ্যত ভেঙে যায়। এর মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে একটি আবেদন দিয়ে তার দুই ছেলের মুক্তি দাবি করেন। শেখ হাসিনার মুক্তির ঠিক এক সপ্তাহ পর ১৭ জুন বেগম খালেদা জিয়ার এই আবেদনটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিএনপির মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপির নেতারা বলেন যেখানে হাজারো নেতাকর্মী কারাগারে সেখানে দুই পুত্রের মুক্তি চাওয়া অবিশ্বাস্য। তবে খালেদা জিয়া এসব কথা গায়ে না মেখে ১/১১ তে সম্পৃক্ত সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠকের মাধ্যমে সমঝোতায় উপনীত হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। আর এই প্রক্রিয়ায় বেগম জিয়াকে সহায়তা করেন তার ভাই সাঈদ ইস্কান্দার। জানা যায় যে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ একাধিক ব্যক্তির কয়েকদফা বৈঠকে শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়া তার দুই পুত্রের মুক্তি আদায় করতে সক্ষম হন। ওই বৈঠকে যারা ছিলেন তারা জানিয়েছিলেন বেগম জিয়া কখনই জাতীয় রাজনীতি বা নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আগ্রহী ছিলেন না বরং তিনি চেয়েছিলেন তার দুই পুত্র যেন মুক্তি পেয়ে বিদেশে চলে যায়।
এরকম একটি অবস্থায় শেষ পর্যায়ে এসে বেগম খালেদা জিয়া এই শর্তে রাজি হন যে তারেক জিয়া এবং কোকো কোনও রাজনীতি করবে না। এই শর্তে তাদের মুক্তি দিয়ে বিদেশে পাঠানো হবে। এই প্রক্রিয়া শেষে ১১ সেপ্টেম্বর বেগম জিয়া জামিনে মুক্তি পান। একই সঙ্গে তার পুত্র তারেক জিয়াকেও চিকিৎসার জন্য মুক্তি দেয়া হয় এবং তারেক জিয়া একটি মুচলেকা দেন যে তিনি আগামী ৩ বছর রাজনীতি করবেন না। যদিও বিএনপি পরবর্তীতে এই মুচলেকার কথা অস্বীকার করে।
জেল থেকে বেরিয়ে বেগম খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে তারেক জিয়াকে দেখতে গিয়ে সেখানে তিনি কান্নায় ভেঙে পরেন। এর পরপরই তিনি সাংবাদিকদের বলেন আমার দুই ছেলে শেষ হয়ে যাচ্ছে, আমার ছেলেরা ভালো নেই, দেশও ভালো নেই। তবে খালেদা জিয়ার এই পুত্রপ্রেম দেশবাসীকেতো নয়ই বিএনপিতেও কোনো আবেগ ছড়াতে পারেনি বরং তিনি পরিবারকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন এই বিষয়টি আলোচনায় আসে। তারেক জিয়া চলে যাওয়ার পর খালেদা জিয়া দলকে শক্ত করার চেষ্টা করেন কিন্তু সেই চেষ্টা খুব একটি সফল হয়নি।
আগামীকাল পর্ব-৪০: নির্বাচনের পথে দেশ
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।