নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৯ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
১০ অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠিত হয়। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন বেগম খালেদা জিয়া। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয় তৃতীয়বারের মতো তিনি প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন এক প্রহসনের নির্বাচন করেছিলো বিএনপি। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষণিকের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। যদিও এটাকে কোনো বৈধ সরকার হিসেবে মনে করা হয় না। তারপরেও বিএনপি মনে করে বেগম জিয়া তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী।
এইবার সরকার গঠন করে খালেদা জিয়ার ক্ষমতা সংকুচিত হয়ে যায়। দুটি সমান্তরাল সরকারের ক্ষমতা দৃশ্যমান হয়। একটি হাওয়া ভবনের সরকার অন্যটি প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সরকার। হাওয়া ভবনের সরকারে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে একটি করে প্রতিমন্ত্রী রাখা হয়। যে প্রতিমন্ত্রী আসলে নিলামে ওঠা অর্থ সম্পদ দিয়ে তারেক জিয়ার একান্ত অনুগতরা প্রতিমন্ত্রীর আসনটি দখল করেন। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার অনুগতরা পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পায়। উদাহরণ হিসেবে দেখানো যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী করা হয় খালেদা জিয়ার অনুগত এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে অন্যদিকে প্রতিমন্ত্রী করা হয় বাবরকে যিনি হাওয়া ভবনের তারেকের অনুগত ছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় ওসমান ফারুককে আবার প্রতিমন্ত্রী দেয়া হয় এহসানুল হক মিলনকে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী করা হয় মোরশেদ খানকে আর প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয় ড. রিয়াজ রহমানকে। এভাবে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে দুজন মন্ত্রী দিয়ে হাওয়া ভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ক্ষমতার ভারসাম্য রাখার চেষ্টা দৃশ্যমান হয়।
সংকট দেখা দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কিভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে অবধারিত ছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার দেহরক্ষী এবং গত ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব মোসাদ্দেক আলী ফালু। কিন্তু হাওয়া ভবনের কর্তৃত্ব বাড়ার সাথে সাথে ফালুর প্রভাব প্রতিপত্তি কমতে থাকে। এ সময় তারেক জিয়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নিয়ন্ত্রণের জন্য হারিসকে পছন্দ করেন। হারিস চৌধুরী দীর্ঘদিন হাওয়া ভবনের লোক এবং তারেক জিয়ার একান্ত অনুগত। তবে তারেক জিয়ার চাঁদা সংগ্রাহক হিসেবেই বিএনপিতে তার খ্যাতি ছিলো। হারিস চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হওয়ায় হাওয়া ভবনের নিয়ন্ত্রণে আসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
হারিস চৌধুরী ও তারেক জিয়া মিলে সচিবদের তালিকা করে। সচিবদের মধ্যে যারা টাকা দিতে পারবেন তাদেরকেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক পদে নিয়োগ দেয়া হবে। এ সময় প্রধান বনসংরক্ষক পদে নিয়োগ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। হাওয়া ভবনকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা দিয়ে গনি মিয়া প্রধান বনসংরক্ষকের পদ বাগিয়ে নেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এসময় এল জি ই ডির প্রধান প্রকৌশলীর পদও অর্থের বিনিময়ে নেয়া হয়। এভাবে যে সমস্ত জায়গাগুলোতে বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে সেসব পদের জন্য হাওয়া ভবন সরাসরি টাকার খেলা শুরু করে। টাকা দিতে পারলেই গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হবে। এখানেই বিষয়টি থেমে থাকেনি। সচিব পদের জন্য তালিকা তৈরি করে সাক্ষাৎকারের জন্য তলব করা হয়। এই সময়ে হাওয়া ভবনে সচিবদের ভীড় লক্ষ্য করা য়ায়। সচিবদের কে কত টাকা দিতে পারবে সেই বিষয়ে মুচলেকা দেয়া সাপেক্ষে কে কোথায় যাবে সেই তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হতো এরপর সেখান থেকে চলে যেত তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে (বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়)।
এই ব্যবস্থাপনায় বাধা হয়ে দাঁড়ান প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব নুরুল ইসলাম। নুরুল ইসলাম ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে ফেনীর ডিসি ছিলেন। সেময় খালেদা জিয়া নুরুল ইসলামের সততা ও নিষ্ঠার কারণে পছন্দ করেছিলেন। আর এ কারণে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পরে তাকে প্রথমে একান্ত সচিব পরে তাকে প্রধানমন্ত্রীর সচিব হিসেবে নিয়োজিত করা হয়েছিলো। এসময় নুরুল ইসলাম তারেক জিয়ার দুর্নীতি-অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার এক পর্যায়ে তিনি বেগম খালেদা জিয়ার কাছে তারেক জিয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার বিষয়টি পছন্দ হয়নি এবং সে কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করেন।
নুরুল ইসলামের চাকরিচ্যুতির পর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগে বাণিজ্যের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এই টাকা লেনদেনের প্রধান ব্যক্তিটি ছিলেন হারিস চৌধুরী।
পর্ব-৪: হাওয়া ভবনের টাটা কেলেঙ্কারি
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।