নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৭ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
বিএনপি একটি বড় ধরনের আন্দোলন করতে চায়। কিন্তু আন্দোলন করার ক্ষেত্রে বিএনপির সব থেকে বড় বাধা হলো আতঙ্ক এবং দল ভাঙ্গার শঙ্কা। বিএনপির একাধিক নেতা মনে করেন যে বড় ধরনের আন্দোলনে গেলেই সরকার বিএনপির ভাঙ্গনের চেষ্টা করবে এবং বিএনপির যে সাংগঠনিক বিন্যাস এখন রয়েছে, সেই সাংগঠনিক বিন্যাসে বিএনপি যেকোনো সময় ভেঙ্গে যেতে পারে।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপির মধ্যে প্রকাশ্য কোন্দল দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতি অনুগত নয় দলের অধিকাংশ সিনিয়র নেতা। তারপরও দলের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এখন পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলের মহাসচিব হিসেবে রাখা হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক সদস্যই স্থায়ী কমিটির ভুমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ। তারা মনে করে যে, স্থায়ী কমিটিতে অসুস্থ এবং মৃতপ্রায় ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে। যার জন্য স্থায়ী কমিটি কোনো কাজ করতে পারছে না। আর এই নাজুক অবস্থার মধ্যে কিছু কিছু লোকের তৎপড়তায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা উদ্বিগ্ন।
বিশেষ করে লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া মনে করেন, এই লোকগুলো বিএনপির ভাঙ্গনের জন্য কাজ করছে এবং আসলে তারা সরকারের এজেন্ট। যাদেরকে নিয়ে বিএনপি আতঙ্কিত তাদের মধ্যে রয়েছে:
১. অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী: বিকল্প ধারার এই নেতা বেশ কিছুদিন ধরেই চুপচাপ ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাকে আবার তৎপর দেখা যাচ্ছে। বিএনপির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তার যোগাযোগের খবর পাচ্ছেন বিএনপি নেতারা। বিএনপিকে পরিবারতন্ত্র ছেড়ে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে ওঠার পরামর্শ তিনি দিচ্ছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের আগেও অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে নিয়ে বিএনপিতে শঙ্কা ছিলো। সেই সময় একটি জোট গঠনের ক্ষেত্রে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী এগিয়ে ছিলেন। পরে লন্ডন থেকে তারেক জিয়া অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বাদ দিয়ে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে জোট করার জন্য নির্দেশনা দিলে বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিটকে পড়েন। পরে তিনি আওয়ামী লীগের মহাজোটে যোগ দান করেন এবং ঐ নির্বাচনে মাহি বি চৌধুরী এবং আব্দুল মান্নান এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন। এখন অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপিতে পরিবারতন্ত্র বিরোধী একটি মোর্চা করার জন্য বিভিন্ন নেতাকে উস্কে দিচ্ছেন বলে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করছেন।
২. কর্ণেল (অবঃ) অলি আহমেদ: কর্ণেল অলি আহমেদ বিএনপির এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। এখন তিনি এলডিপির চেয়ারম্যান। কর্ণেল অলি আহমেদ ২০ দলীয় জোটে থাকলেও প্রকাশ্যে বিএনপির নেতৃত্বের সমালোচনা করছেন এবং বিএনপিকে বিভিন্নভাবে উপদেশ দিচ্ছেন। এটিকে বিএনপির অনেক নেতা দল ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। কর্ণেল অলি আহমেদের সঙ্গে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে বিএনপির সঙ্গেই যুক্ত। আর এ কারণে বিএনপির অনেক নেতা মনে করেন যে, সরকার হয়ত তাকে ব্যবহার করে বিএনপি ভাঙ্গার জন্য চেষ্টা করতে পারে।
৩. মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম: সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম কল্যাণ পার্টির নেতা। তিনি ২০ দলীয় জোটের সদস্য। যদিও তিনি কখনোই বিএনপি করতেন না। তবে বিএনপির অনেক নেতৃবৃন্দের সঙ্গেই তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে তিনিই সবচেয়ে বেশি তৎপর। বিশেষ করে সুশীল সমাজ, সেনাবাহিনীর প্রাক্তন কর্মকমর্তা, প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তাদের নিয়ে তিনি যেভাবে একের পর এক গেট টুগেদার করছেন তা বিএনপির বড় মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি নেতারা মনে করছে এটা সরকারবিরোধী কােনো প্লাটফর্ম না বরং বিএনপি ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র।
আর এই সমস্ত ব্যক্তিদের আতঙ্কেই বিএনপি এখনই বড় ধরনের কোনো আন্দোলনে যাওয়ার ব্যাপারে দ্বিধান্বিত। কারণ তারা মনে করছে যখনই বড় ধরনের কোনো আন্দোলন হবে এবং আন্দোলন যদি নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায় সেক্ষেত্রে এই ব্যক্তিরা দল ভাঙ্গার ক্ষেত্রে সামনে চলে আসবেন। এবং তখন বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলন করছে তার চেয়ে নিজেই ক্ষতিগ্রস্থ হবে বেশি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।