নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০৭ মে, ২০২১
পাকিস্তানের সামরিক একনায়ক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ ১৯৯৯ সালের ১২ই অক্টোবর থেকে ২০০৮ আগস্ট পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই দায়িত্ব পালনের পর তার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এবং মামলা হয়েছে যেটি পাকিস্তানের রাজধানীতে হয়। এই সমস্ত পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য ২০০৮ সালের ২৩ নভেম্বর তিনি লন্ডনে পালিয়ে যান। এরপর লন্ডন থেকে তিনি আরেকবার দেশে এসেছিলেন সাংবাদিকদের নিয়ে কিন্তু সেখানে তার বিভিন্ন মামলায় সরকারের সঙ্গে আরেক দফারফা করে ২০১৬ সালে দুবাই চলে যান এবং দুবাইয়ে এখন তিনি নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখন বিদেশে যাচ্ছেন। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা এবং বিএনপি নেতৃবৃন্দরা। এই বিদেশযাত্রা কতদিনের জন্য হবে, এই যাওয়াই তার শেষ যাওয়া হবে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রশ্নের মধ্যেই অনেকে মনে করছেন বেগম খালেদা জিয়ার পরিস্থিতি পরিণতি কি পারভেজ মোশাররফের মতোই হতে যাচ্ছে কিনা। কারণ এর আগে দেখা গেছে যে, ২০০৭ সালে বিএনপির দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি তারেক জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছেন এবং লন্ডনে যাওয়ার আগে তিনি মুচলেকা দিয়েছিলেন যে তিনি কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবেন না এবং দল থেকে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু লন্ডনে যাওয়ার পরপরই তিনি ঐ মুচলেকার কথা ভুলে যান। এখন তিনি লন্ডন থেকেই বিএনপির কলকাঠি নাড়ছেন। মনে করা হয়, তিনিই হলেন বিএনপির মূল নেতা। আদালত তার বিরুদ্ধে একাধিকবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে কিন্তু গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে পাত্তা না দিয়ে এখন তিনি লন্ডনের নাগরিকত্ব নিয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন।
তবে তারেক জিয়ার পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে বলা হয়েছে যে, তিনি লন্ডনের নাগরিকত্ব নেননি। তবে তার কন্যা যে লন্ডনের নাগরিকত্ব নিয়েছে তার ব্যাপারে কোন সন্দেহই নেই। এখন প্রশ্ন হলো যে, তারেক জিয়া যেমন লন্ডনে যেয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন ঠিক তেমনিভাবে বেগম খালেদা জিয়াও কি লন্ডনে যেয়ে স্থায়ী হবেন নাকি তিনি চিকিৎসা শেষে ফিরে আসবেন। যদিও বিএনপির অনেক নেতারা মনে করেন যে, বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল এ নিয়ে যথেষ্ট সংশয় প্রকাশ করছেন। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন বটে তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন না হলে বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন এমনটি মনে করার কোন কারণ নাই। আর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন হলেই চলবে না সেই পরিবর্তন যদি বিএনপির পক্ষে না হয় তাহলে বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন বলে অনেকে মনে করেন না। এজন্যেই পারভেজ মোশাররফের সঙ্গে তাকে তুলনা করা হচ্ছে।
কারণ পারভেজ মোশাররফ যখন ক্ষমতার পালাবদল হয় তখন তিনি মনে করেছিলেন যে এখন বোধহয় দেশে যাওয়া যাবে এবং তিনি নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। তার রাজনৈতিক দল নিয়ে নতুন করে ক্ষমতা গ্রহণের জন্য তিনি এসেছিলেন কিন্তু পাকিস্তানের যেই মিথস্ক্রিয়া সেই মিথস্ক্রিয়ায় পারভেজ মোশাররফের আর দেশে থাকা হয়নি। বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে যদি শেষ পর্যন্ত যান তাহলে তিনি লন্ডন থেকে চিকিৎসা শেষে ফিরে আসবেন এই কথাটি বোধহয় বাংলাদেশের কোন মানুষই বিশ্বাস করে না। বরং বেগম খালেদা জিয়া নির্বাসিত জীবনযাপন কীভাবে করবেন এবং লন্ডনে গিয়ে তিনি সরকারের প্রতিপক্ষ অবস্থান কীভাবে নিবেন এবং সেখান থেকে দল কীভাবে পরিচালনা করবেন, এটি নিয়েই বিএনপির মধ্যে নানামুখী জল্পনা-কল্পনা চলছে। তবে রাজনীতি যদি হতো তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি বিদেশ যাওয়া নিয়ে সরকার যে উদারতা দেখিয়েছে, বেগম খালেদা জিয়া যদি শেষ পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যান তাহলে সেই উদারতার প্রতিদান হিসেবে তার চিকিৎসা শেষে ফিরে আসাই হবে সুস্থ মানসিকতার পরিচয়। কিন্তু সেটা তিনি করবেন কিনা এ নিয়ে অনেকের মধ্যে সংশয় রয়েছে।
মন্তব্য করুন
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সভাপতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বেগম জিয়া আর ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন না, রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন এ রকম একটি বক্তব্য সামনে নিয়ে আসছেন শামীম ইস্কান্দার।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠিত করা এবং বিভেদ-বিভক্তির দূর করার জন্য যে ডাক দেওয়া হয়েছিল তারপর একটু পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল বলে বটে। কিন্তু এখন আবার উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে তৃণমূল বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সামাল দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। একদিকে নির্বাচন কেন্দ্রীক বিরোধ অন্যদিকে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে যাওয়া আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তদারকির অভাবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই।