নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৮ জুন, ২০২১
একদিকে করোনার প্রকোপ অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা। এর মধ্যে বিএনপির রাজনৈতিক অস্তিত্বের সংকট। কিন্তু তারপরও থেমে নেই বিএনপির চেষ্টা। বিএনপি এখন নতুন একটি জোটের জন্য চেষ্টা করছে বলে একাধিক বিএনপি নেতা স্বীকার করেছেন। গত ১৪ বছর ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। এই ১৪ বছরে বিএনপি বিভিন্ন রকম জোট গঠনের চেষ্টা করেছে। তাদের যে মূল জোট ২০ দলীয় জোটের ইতিমধ্যে ভাঙ্গন ধরেছে। ২০ দলীয় জোট থেকে কয়েক বছর আগে বেরিয়ে গেছেন বিজেপি নেতা আন্দালিব রহমান পার্থ এবং আরো কিছু দল। তারপরও ২০ দলীয় জোট কাগজে-কলমে রয়েছে। ২০ দলীয় জোটকে নিয়ে প্রকাশ্যে আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হল জামায়াত। কারণ জামায়াত বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিএনপি`র গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হয়। এজন্য ২০ দলীয় জোট কাগজে-কলমে থাকলেও এটির কোন তৎপরতা নেই। দীর্ঘদিন ধরে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকও হয় না। কিছুদিন আগে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া নিয়ে বিএনপির মধ্যেই তোলপাড় শুরু হয়েছিল।
বিএনপির বিভিন্ন নেতারা বলছেন যে লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে ২০ দলীয় জোটকে রাখতে চান না। আর এ কারণেই ২০ দলীয় জোট এখন অকার্যকর। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে নাটকীয়ভাবে বিএনপি নাটকীয়ভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিল। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত এই জোট একটি নির্বাচনী জোট ছিল। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, নির্বাচনের পরও এই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থাকবে। কিন্তু নির্বাচনে জামাতকে ধানের শীষ প্রতীক উপহার দিয়ে ২০টি আসনে জামায়াতের প্রার্থীদেরকে দেওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। তাছাড়া বিএনপির মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে বিশেষ করে ড. কামাল হোসেন সহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা থাকায় বিএনপির কারো কারো মধ্যে আপত্তি রয়েছে। বিএনপি নেতারা মনে করেন যে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিএনপির আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক। সে কারণে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও এখন অকার্যকর হয়ে গেছে। এককভাবে আন্দোলনের চেষ্টা বিএনপি কিছুদিন ধরে করেছিল কিন্তু বিএনপির আন্দোলন করার মতো শক্তি, নেতৃত্ব এবং মেধা কোনটাই তাদের নেই। আর এ কারণেই তারা মনে করছে যে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে টিকে থাকার জন্য জোটগত আন্দোলনের বিকল্প নেই। বিএনপি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এখন বৈঠক করছে একটি নতুন মোর্চা গঠন করার জন্য। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে, সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং সকল মত-পথের মানুষকে একত্রিত করতে হবে। কিন্তু এ নিয়ে বিএনপি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগও করেছে।
রাজনীতির মাঠে যে সমস্ত দলগুলির সক্রিয় এবং যারা সরকারের বিভিন্ন বিষয়ের সমালোচক তাদের সঙ্গেই কথা বলছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে এই কথা বলার ক্ষেত্রে বিএনপির জন্য সামনে তিনটি বাঁধা অত্যন্ত বড় হয়ে এসেছে। প্রথমত, জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক। বৃহত্তম যে বৃহত্তর মঞ্চ করতে চাচ্ছে সেখানে বাম এবং উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে রাখতে চাচ্ছে। সেখানে তাদের মূল বাধা হল জামায়াত। বামফ্রন্ট দীর্ঘদিন ধরেই স্বাতন্ত্র্য অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছে। তারা বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে আগ্রহী নয়। বাম গণতান্ত্রিক জোটের একজন নেতা বলেছেন যে, বিএনপি যে রাজনৈতিক চরিত্র তা তার সাথে বাম রাজনৈতিক আদর্শে যোজন-যোজন ফারাক রয়েছে। কাজেই আমরা তাদের সঙ্গে ঐক্যের কথা ভাবছি না। তবে বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, তারা বামদলগুলো শুধু সরকার বিরোধী ইস্যুতে একটি যুগপৎ আন্দোলনে বিশ্বাসী কিন্তু শর্ত হলো জামায়াতের সঙ্গে বিএনপিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক ত্যাগ করতে হবে। এছাড়াও যে রাজনৈতিক দলগুলো ক্রিয়াশীল তারেক জিয়ার ব্যাপারে তাদের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব রয়েছে। কিছু কিছু রাজনৈতিক দল মনে করে যে, তারেক বিএনপির নেতৃত্বে থাকলে বিএনপির সঙ্গে জোট করা সম্ভব নয়। আর সর্বশেষ যে বিএনপির যে আদর্শিক ইস্যু সেই আদর্শিক ইস্যু বৃহত্তর জোট গঠনের ক্ষেত্রে এখন বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতি এখন একমাত্র বিএনপি এবং জামায়াত ছাড়া সকল রাজনৈতিক দলই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকার করেন। তারা সকলেই আগস্টের হৃদয়বিদারক ঘটনাকে ইতিহাসের জঘন্যতম ঘটনা মনে করেন। কিন্তু এই সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে বিএনপির অবস্থান দোদুল্যমান, অস্পষ্ট এবং বিতর্কিত। আর সে কারণেই নতুন জোটের সন্ধান করলেও শেষ পর্যন্ত বিএনপি জোট গঠন করতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটে আগামী ৮ মে। গতকাল সোমবার (২২ এপ্রিল) ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এদিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সরে দাঁড়ানোয় তিন উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ কয়েকজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
জানা গেছে, নোয়াখালীর হাতিয়া ও ফেনীর পরশুরাম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বান্দরবানে উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে রোয়াংছড়ি উপজেলায় আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী চহ্লামং মারমা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হচ্ছেন। সোমবার ( ২২ এপ্রিল ) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সরে দাঁড়ানোয় তিন উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ বেশ কয়েকজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
হাতিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তিনজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তাঁরা হলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশিক আলী, স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস ও জাতীয় পার্টির নেতা মুশফিকুর রহমান। গতকাল আশিক আলী ছাড়া বাকি দুজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। হাতিয়া উপজেলা পরিষদের বাকি দুটি পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।
জানতে চাইলে মুশফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর রাজনীতির হাতেখড়ি সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর হাতে। তিনি ওই পরিবারের একজন সদস্যের মতো। মাঝখানে কিছু ভুল–বোঝাবুঝির কারণে দূরত্ব থাকলেও তা ঘুচে গেছে। আশিক আলীর সমর্থনে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জোড় করাতে তাঁর ছেলে প্রার্থী হয়েছেন। দলের অন্য কেউ আগ্রহ দেখাননি। ছেলের প্রতিদ্বন্দ্বীরা নিজ থেকেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।
ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থীর মধ্যে দুজন গতকাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। এতে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন কেবল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ফিরোজ আহমেদ মজুমদার। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন উপজেলা পরিষদের তিনবারের চেয়ারম্যান ও পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন মজুমদার ও উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হাসেম চৌধুরী।
ভাইস চেয়ারম্যান পদের চারজনের মধ্যে তিনজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। বর্তমানে একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নুর মোহাম্মদ শফিকুল হোসেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন ইকরামুল করিম মজুমদার, নজরুল ইসলাম ও আবদুল রসুল মজুমদার।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেত্রী শামসুন নাহার পাপিয়া। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন নিলুফা ইয়াসমিন।
এদিকে বান্দরবানে উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে রোয়াংছড়ি উপজেলায় আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী চহ্লামং মারমা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল চারজন প্রার্থীর মধ্যে তিনজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় চহ্লামং মারমা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বলে রিটার্নিং এস এম কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন।
তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুরোধ ও প্রচ্ছন্ন চাপে তাঁরা প্রার্থিতা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছেন। রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের তিনজন ও জনসংহতি সমিতির সাবেক এক নেতা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। চারজনের মনোনয়নই রিটার্নিং কর্মকর্তা বৈধ ঘোষণা করেছিলেন। প্রার্থীরা নিজেদের মতো করে প্রস্তুতিও নিয়েছেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর প্রার্থীরা জানিয়েছেন, গতকাল প্রত্যাহারের শেষ দিনে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের নেতারা তৎপর হয়ে ওঠেন। প্রার্থিতা তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করে এবং প্রচ্ছন্নভাবে চাপ দিতে থাকেন।
মন্তব্য করুন
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জুনাইদ আহমেদ পলক নাটোর তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জুনাইদ আহমেদ পলক টানা তিনবারের প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু রাজনীতিতে তার পদ পদবী তেমন নেই। রাজনীতিতে এখনও তিনি তরুণ এবং পিছনের সারির নেতা হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্ব এবং প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তিনি বিভিন্ন সময়ে সুনাম কুড়িয়েছেন। কখনও বিতর্কিত হয়েছেন। তবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তার পরীক্ষা হলো এবার এবং সেই পরীক্ষায় তিনি শুধু কৃতকার্যই হননি, এ প্লাস পেয়েছেন বলেও অনেকে মনে করছেন।
দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস পর রাজপথের কর্মসূচি ঘোষণা তা আবার প্রত্যাহার করতে হলো ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে। এবার প্রকৃতিও যেন বিএনপি সঙ্গে বৈরি আচরণ করলো। আগামী শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ দলের কারাবন্দী নেতা কর্মীদের মুক্তির দাবিতে সমাবেশের ঘোষণা করেছিল দলটি। আর এই সমাবেশের ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে আবার রাজপথে আন্দোলনের কর্মসূচি পুনরায় শুরু করতে যাচ্ছিল ক্ষমতার বাইরে থাকা এই রাজনৈতিক দলটি।