নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২২ জুন, ২০২১
আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠার ৭২ তম বার্ষিকী পালন করবে আগামীকাল। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রাচীনতম এ রাজনৈতিক সংগঠনটিতে বহু নেতা এসেছেন গেছেন, বহু নেতা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, কারাবরণ করেছেন কিন্তু বিচ্যুত নেতার সংখ্যাও কম নয়। খন্দকার মোশতাক বা তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের মত মীর জাফরও আওয়ামী লীগেই জন্ম হয়েছিল। বাংলাদেশের রাজনীতি এমন কিছু নেতা আছে যারা একসময় আওয়ামী লীগ করতেন কিন্তু এখন আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ, আওয়ামী লীগে তারা নেই। কেউ কেউ আওয়ামী লীগের সমালোচকও বটে। এদের মধ্যে কয়েকজনকে নিয়ে এই প্রতিবেদন।
ড. কামাল হোসেন: ড. কামাল হোসেন এখন গণফোরামের নেতা। তিনি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তিনি ১০ই জানুয়ারি পাকিস্তান থেকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে প্রথম আইনমন্ত্রী নিযুক্ত করেছিলেন। জাতির পিতার নির্দেশ পালন করেই তিনি বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন। কিন্তু ১৯৯১ সালে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে যান। গণফোরাম গঠন করেন। এই গণফোরাম এখন অস্তিত্বহীন একটি রাজনৈতিক সংগঠন হলেও সংগঠনটি এখন আওয়ামী লীগের কট্টরবিরোধী।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী: বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ছিলেন সেই নেতাদের অন্যতম যিনি ৭৫ এর পরে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন, দেশ ত্যাগ করেছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিশোধের জন্য সাহসী উচ্চারণ করেছিলেন। কিন্তু তিনিও আওয়ামী লীগের রাজনীতি এখন নেই। তিনি কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ নামে একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার আদর্শিক দূরত্ব না থাকলেও মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব রয়েছে।
অধ্যাপক আবু সাইয়িদ: অধ্যাপক আবু সাইয়িদ আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে তিনি তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের সময় সংস্কারপন্থী হওয়ার কারণে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বিচ্যুত হন। এরপর ২০১৪ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। এখন তিনি গণফোরামের একাংশের নেতা।
সুলতান মোহাম্মদ মনসুর: সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আওয়ামী লীগের ৭৫ পরবর্তী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ৭৫ পরবর্তীতে প্রথম ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনে তিনি সংস্কারপন্থী হওয়ার কারণে তিনি দলে দুর্বল হয়ে পড়েন, এক পর্যায়ে তিনি দল ত্যাগ করেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে থেকে গত নির্বাচনে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। এখন এমপি হলেও কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন তিনি।
মাহমুদুর রহমান মান্না: মাহমুদুর রহমান মান্না ডাকসুর ভিপি ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগে এসেছিলেন। ৭৫ পরবর্তী সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও হয়েছিলেন। ওয়ান-ইলেভেনে সংস্কারপন্থী হওয়ার কারণে তিনি আওয়ামী লীগে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তারপর তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে যান এবং নাগরিক ঐক্য বলে একটি নামসর্বস্ব সংগঠন করে সেটি নিয়েই বেঁচে আছেন।
শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন: শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন পঁচাত্তরের আত্মস্বীকৃত খুনিদের অন্যতম সহযোগী বলে বিবেচিত এবং খন্দকার মোশতাকের অনুসারী ছিলেন। ৭৫ পরবর্তীতে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে যান। এখন তিনি বিএনপির একজন নামসর্বস্ব নেতা হিসেবে আছেন।
কাজী ফিরোজ রশীদ: কাজী ফিরোজ রশীদ ৭৫ পূর্ব আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগ-যুবলীগ করতেন। ৭৫ পরবর্তী রাজনীতিতে তিনি আর আওয়ামী লীগে থাকেননি। এখন জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শেখ শহীদুল ইসলাম: শেখ শহীদুল ইসলাম সম্ভবত বঙ্গবন্ধু পরিবারের একমাত্র সদস্য যিনি এখন আওয়ামী লীগ করছেন না। ৭৫ পরবর্তী তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। এরশাদ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। এখন জেপি নামে একটি সংগঠনের অন্যতম নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মোস্তফা মোহসীন মন্টু: মোস্তফা মোহসীন মন্টু আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। বিশেষ করে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগ পূনঃসংগঠনের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে তিনি সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগে বহিষ্কৃত হন। পরে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দীর্ঘদিন গণফোরাম করেছেন। এখন তিনি কামাল হোসেন থেকে আলাদা হয়ে গেছেন।
হাবিবুর রহমান হাবিব: হাবিবুর রহমান হাবিব ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যজোটের নেতা ছিলেন। এরপর তিনি মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপিতে যান এবং এখনও তিনি বিএনপিতে ধুঁকে ধুঁকে রয়েছেন।
এরকম আরো অনেক নেতাই আছেন যারা এখনো রাজনীতিতে আছেন কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে নেই। তারা আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করলেও একটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়, তারা বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে আপসহীন এবং অন্যদল করলেও বঙ্গবন্ধুর নামটি উচ্চারণ তারা সবসময় করেন।
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।