নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৯ পিএম, ২৪ জুন, ২০২১
খালেদা জিয়ার মুক্তি, তার বিদেশে চিকিৎসার জন্য সংলাপ চায় বিএনপি। আর এই সংলাপের অনুরোধ জানিয়ে সরকারের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ শুরু করেছে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আওয়ামী লীগের দুইজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম কথা বলেছেন বলেও জানা গেছে। তবে এই দুই নেতাই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কোন আশ্বাস দিতে পারেননি। বরং তারা বলেছেন যে এটি সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়। আর বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার ভুক্ত। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন।
কিন্তু বিএনপি নেতৃবৃন্দ মনে করছেন যে, সরকার চাইলেই বেগম খালেদা জিয়াকে স্থায়ী জামিন দিতে পারে এবং তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে। বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো নিয়ে কূটনৈতিক মহলেও যোগাযোগ করেছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্তত তিনটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছিলেন এবং এ ব্যাপারে তাদের ভূমিকা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু তিনটি দেশের কূটনীতিকরাই জানিয়ে দিয়েছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার জামিন মুক্তি আইনগত বিষয় এবং সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘনের শামিল। আর এ কারণেই কূটনীতিকরা বিএনপির আবেদনে সাড়া দিতে পারেননি। বরং তারা পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপি যেন সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে ডায়লগ (সংলাপ) করে।
কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন সরাসরি বৈঠক করতে আওয়ামী লীগের অনাগ্রহ রয়েছে। আর একারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজেই বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সহানুভূতি চাওয়া হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করছেন বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এই মুহূর্তে সাক্ষাৎ সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। বিএনপির একটি অংশ এবং বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা এখন যেকোনো মূল্যে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে যেতে চান। বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার বিবরণ দিয়ে তারা বিভিন্ন মহলে দেন-দরবার করছেন।
উল্লেখ্য যে, বেগম জিয়া গত এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হন। আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথমে তিনি বাসায় চিকিৎসা নিয়েছিলেন। এরপর তার ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়লে তাকে প্রথমে পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং দীর্ঘ প্রায় ১ মাস হাসপাতালে থাকার পর সম্প্রতি তিনি বাড়িতে এসেছেন এবং বাড়ি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দল নিয়মিত তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন।
কিন্তু চিকিৎসক দলের একজন সদস্য বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার যে অসুস্থতাগুলো আছে সেগুলো জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদী। তার হার্টের সমস্যা রয়েছে, তার লিভারের জটিলতা বেড়েছে এবং কিডনির সমস্যা দেখা দিয়েছে। আর এ কারণেই তারা মনে করছেন তার দীর্ঘমেয়াদি উন্নত চিকিৎসা দরকার। এটি করার জন্য তারা বিদেশে যেতে চান। তবে বেগম জিয়ার পরিবারে একটি সূত্র বলছে যে, সারাবিশ্বে করোনা পরিস্থিতি খারাপ থাকার কারণে বেগম খালেদা জিয়াই এখন দ্রুত বিদেশে যেতে আগ্রহী নন। বরং পরিস্থিতির উন্নতি হলে তারা এ ব্যাপারে জোর দেবেন বলে জানা গেছে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারে অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি। তারা মনে করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া যেহেতু দণ্ডিত সেহেতু তার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ আপাতত নেই।
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি বাংলাদেশের নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মেজর হাফিজ সাকিব আল হাসান কিংস পার্টি ড. মঈন খান বিএনপি
মন্তব্য করুন
মো. সিদ্দিকুর রহমান আওয়ামী লীগ বিপ্লব বড়ুয়া সুজিত রায় নন্দী
মন্তব্য করুন
আবদুল আউয়াল মিন্টু তারেক জিয়া বিএনপি ২৮ অক্টোবর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার জন্য নতুন করে আবেদন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার ভাই শামীম ইস্কান্দারের করা এই আবেদন এখন আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন যে, সচিব তাকে ফাইলটি পাঠিয়েছেন। এটি তিনি দেখছেন। আগামীকাল তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। আইনমন্ত্রী এও বলেছেন যে, এ ব্যাপারে পূর্বের সিদ্ধান্ত থেকে তিনি খুব একটা সরে আসবেন না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে কি ধোঁকা দিয়েছে—এরকম একটি প্রশ্ন এখন বিএনপির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিএনপি নেতারা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনায় এই প্রসঙ্গটি বারবার আনছেন। বিএনপির একাধিক নেতা মনে করে, বিএনপি যে আগ্রাসী অবস্থান গ্রহণ করেছিল, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিএনপি কর্মীদের মধ্যে যে তেজি ভাব এসেছিল, তার প্রধান কারণ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব এবং আগ্রহ। তাছাড়া বিভিন্ন সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা কূটনীতিকরা বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যে ভাষায় যে ভাবে কথা বলেছেন তাতে বিএনপির নেতাদের মধ্যে স্থির বিশ্বাস জন্মগ্রহণ করেছিল যে, তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে চায় না। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম এজেন্ডা। আর এ কারণেই বিএনপি নেতারা এই বক্তব্যটিকে তাদের কর্মীদের কাছে সঞ্চারিত করেছিল এবং কর্মীরা উৎসাহিত হয়েছিল।
টানা ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। ১৬ বছরে পা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ। টানা ক্ষমতায় থাকলেও আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রে একটা ভারসাম্য লক্ষ্য করা যায়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীদেরকে বিভিন্ন সময় পরিবর্তন করে একেক মেয়াদে একেক জনকে মন্ত্রী করেন এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পরিবর্তন করে নেতাদের যেমন যোগ্যতা পরিমাপ করেন, ঠিক তেমনি তাদেরকে ক্ষমতাবান করেন।
নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে একশ কোটি টাকার বেশি উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। সরকারের সঙ্গে দেন দরবার করছেন। কাকে কাকে আটক করতে হবে এবং কারা কারা বিএনপিতে বড় ধরনের আন্দোলন করতে চায়, সরকারের জন্য বিপজ্জনক সেই নামের তালিকা সরবরাহ করেছেন। কাদেরকে বাইরে রাখলে কোন সমস্যা নেই সে নামও জানিয়েছেন সরকারি দলের লোকজনকে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেন বিএনপি কোনো বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতে পারে সেজন্য আশ্বাসও দিয়েছেন। তার এই আশ্বাসের কারণেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনেকটা নির্ভর অবস্থায় নির্বাচন করেছে এবং বিএনপি যথারীতি নির্বাচন প্রতিরোধে কোন বড় ধরনের সহিংসতা বা নাশকতা করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছে।