নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ২২ জুলাই, ২০২১
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার সাম্প্রতিক সময়ে অনেকগুলো ইস্যু সামনে উপস্থাপন করেছেন যে ইস্যুগুলো নিয়ে অবলীলায় আন্দোলন করা যায়। আওয়ামী লীগ যদি বিরোধীদলে থাকতো তাহলে এই ইস্যু নিয়ে তোলপাড় আন্দোলন গড়ে তুলতে পারত। কিন্তু বিরোধী দল সেই ইস্যুগুলোকে পুঁজি করতে পারছে না আন্দোলনও গড়ে তুলতে পারছে না। আন্দোলন গড়ে না তোলার ব্যর্থতা নানারকম রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা নেতৃত্বহীনতা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। সাম্প্রতিক সময়ে আড়াই বছরের বেশি বয়সী আওয়ামী লীগ সরকার অনেকগুলো কাজের জন্য সমালোচিত হচ্ছে এবং সাধারণ জনগণ মনে করছে যে, এই কাজগুলো সঠিকভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে না। কিন্তু এই ইস্যুগুলোকে নিয়ে যেভাবে বিরোধী দলের সরব হওয়া উচিত সেটি বিরোধী দল হতে পারছে না। যেকোনো ইস্যু নিয়ে সরকারের সমালোচনা মানেই সরকারের পতন নয় বরং এই ধরনের সমালোচনা সরকারকে জবাবদিহিতার মধ্যে রাখে এবং সঠিক পথে কাজ করতে সহায়তা করে। তাই একটি শক্তিশালী বিরোধী দল এবং বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়ানো একটি রাজনৈতিক দলের অন্যতম কাজ এবং এই ধারাই বাংলাদেশে চলে এসেছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সবসময়ই শক্তিশালী একটি বিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু গত ১২ বছরে বিরোধী দলগুলো সংকুচিত হতে হতে নিঃশেষিত প্রায় এবং যে কারণে আন্দোলনের অনেক ইস্যু থাকার সত্ত্বেও বিরোধী দল মাঠে নামতে পারছে না। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে নানা অভিযোগ করা হয়। বলা হয় যে সরকার দমন-পীড়ন করছে সেই জন্য বিরোধী দল আন্দোলন করতে পারছে না। কিন্তু এরকম বক্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এরশাদের আমলে কিংবা জিয়াউর রহমানের আমলে এর চেয়েও বেশি ধরনের দমন-পীড়ন করা হয়েছিল। এমনকি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের দমন-পীড়নের মাত্রা সামরিক সরকারের চেয়েও বেশি ছিল। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতেও আন্দোলন গড়ে তুলতে পেরেছিল বিরোধী দলগুলো। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে আরেকটি অভিযোগ করা হয় যে, সাংগঠনিক দুর্বলতা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সাংগঠনিকভাবে গুছানো নয়। যে কারণে তারা আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না। কিন্তু এ রকম যুক্তিও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ একটি আন্দোলন কেবল সংগঠন দিয়ে হয় না জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হয়। আর জনগণকে সম্পৃক্ত করতে না পারার জন্যই আন্দোলনগুলো হচ্ছে না। আর জনগণকে সম্পৃক্ত করার জন্য প্রয়োজন নেতৃত্ব। সেই নেতৃত্ব এখন কোনো দলেই নেই।
অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বলেন, জনগণ এখন আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত নয়। কারণ জনগণ এখন জীবন জীবিকা নিয়েই ব্যস্ত থাকে। কে ক্ষমতায় আসলো বা কে কি করছে সে নিয়ে তাদের মনোযোগ নেই। তারা নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। এরকম বক্তব্যের সঙ্গেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একমত নন। কারণ তারা মনে করেন যে, জনগণকে যদি তার স্বার্থ এবং অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা যায় তাহলে পরে জনগণ যেকোন আন্দোলনের জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকে। প্রশ্ন উঠেছে যে, সরকার কি এমন কাজ করছে যাতে আন্দোলনের কোনো ইস্যু নেই? এমন বক্তব্য সঙ্গে একমত নয়। সরকার সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নিয়েছে যে পদক্ষেপগুলো সমালোচিত হয়েছে এবং যেগুলো থেকে অবলীলায় একটি আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে। যেমন ধরা যাক গণটিকা কর্মসূচি প্রদানে ব্যর্থতা, লকডাউন নিয়ে একের পর এক সমন্বয়হীনতা, স্বাস্থ্যখাতে অব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ইস্যু নিয়ে যেকোন সময় আন্দোলন হতে পারে। কিন্তু এরকম ইস্যুগুলোকে কাজে লাগাতে পারছে না বিরোধী দলগুলো। বাংলাদেশের এখন এক ধরণের নেতৃত্বশূন্যতা বিরাজ করছে। গোটা দেশে একমাত্র গ্রহণযোগ্য এবং আস্থাভাজন নেতার নাম হলেন শেখ হাসিনা। জনগণ তার ওপরে আস্থাশীল। কিন্তু শেখ হাসিনার সমকক্ষ বিরোধী দলের নেতা বা তার অর্ধেক সমকক্ষ বিরোধীদলের নেতা এখন নেই।
বাংলাদেশে কাগজে কলমে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টিতে এরশাদের মৃত্যুর পর জি এম কাদের নেতা। জি এম কাদের একজন প্রধান বিরোধী দলের নেতা হলেও সাধারণ মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হয় বিএনপিকে। বিএনপি এখন নেতৃত্ব শূন্যতায় ভুগছে। এই দলের প্রধান নেতা বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসছেন কি নেই সেই প্রশ্ন। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে তিনি মৌনব্রত পালন করছেন। কোন ইস্যুতেই নেই। বরং তিনি কিভাবে দণ্ড থেকে রেহাই নিয়ে দেশ ত্যাগ করবেন সেটি নিয়েই ব্যস্ত। বিএনপি`র আরেক নেতা তারেক জিয়া একজন দুর্বৃত্ত এবং অর্থলোভী হিসেবে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। কাজেই তিনি কখনোই জাতীয় নেতা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে না বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। অন্যান্য যে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ আছেন তারা কেউই জাতীয় নেতা নন এবং তাদের এরকম জনপ্রিয়তা নেই যে তারা আওয়ামী লীগের প্রধান নেতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজনীতি করতে পারে। আর এই নেতৃত্বশূন্যতার কারণেই আন্দোলনের ইস্যু থাকার সত্বেও কোনো আন্দোলন গড়ে উঠছে না বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।