নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১
তিন দিনব্যাপী বিএনপির ধারাবাহিক বৈঠকের প্রথম দিন ছিল উত্তপ্ত। বিকেল চারটায় শুরু হওয়া এই বৈঠকে আন্দোলন-সংগ্রাম এবং বিএনপির ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সময় বৈঠক চলছিল। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া লন্ডনে থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠকের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রথম দিনের বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যমণ্ডলী এবং নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যানরা যোগ দিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ৭৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন ৩৫ জন। এদের মধ্যে আজকের বৈঠকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৩ জন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ৭০ জনের যোগ দেয়ার কথা ছিল। বৈঠকের শুরুতেই লন্ডন থেকে তারেক জিয়া বিএনপির করণীয়, আন্দোলন এবং ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তিনি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নতুন করে উত্থাপনের জন্য পরামর্শ দেন এবং দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবেনা এই দাবি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে কলুষিত করেছে, ধ্বংস করে ফেলেছে। কাজেই, আর কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এটাও বলেন যে, সামনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন যেন নিরপেক্ষ হয় সেজন্য তারা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। তারা রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ করবেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করতে চায়। এরপর এই দুজনের বক্তব্যের পর ফ্লোর ওপেন করে দেয়া হলে বিএনপির একাধিক নেতা বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব এবং আন্দোলনের কৌশলের তীব্র সমালোচনা করেন। তারা বলেন যে, একদিকে আমরা সরকারের পতন চাইছি অন্যদিকে আমরা সরকারের কাছেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আবেদন নিবেদন করছি। এটা হতে পারে না। যদি আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে না যায় তাহলে ২০১৮ সালে কেন নির্বাচনে গেলাম সেই প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন একজন ভাইস চেয়ারম্যান।
বিএনপির একাধিক নেতা এই বৈঠকে বলেছেন যে, দলের ভেতর সরকারের এজেন্টরা লুকিয়ে আছে। এরা হলো বিএনপি`র মীরজাফর। এই মীরজাফরদেরকে যদি চিহ্নিত করে দল থেকে বের করে না দেওয়া হয় তাহলে বিএনপি কোনো কিছুই করতে পারবেনা। বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য বৈঠকে তীব্র ভাষায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন যে, আমরা আন্দোলন করছি না সরকারের সাথে সমঝোতা করছি সেটি এখন জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। তিনি বলেন যে, আন্দোলন করতে গেলে আমাদেরকে সবকিছু বিসর্জন দিয়ে আন্দোলন করতে হবে। দিনের বেলা আন্দোলন রাতে বেলা সরকারের সাথে সমঝোতা -এরকম নীতি করে কোন আন্দোলন হবে না। তিনি এটাও বলেন যে, এখন থেকে যদি আমরা আন্দোলন গড়ে না তুলতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে কোনো আন্দোলনেই করা যাবে না।
বিএনপি একজন ভাইস চেয়ারম্যান বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন যে, বিএনপিতে কিছু সরকারের এজেন্ট রয়েছে যারা বিএনপি কি করছে না করছে সব তথ্য সরকারের কাছে ফাঁস করে দেয়। আর এ কারণেই বিএনপি কোনো কিছু করতে পারে না। তিনি বলেন যে, আমাদের দুঃখিত হওয়া উচিত যে চেয়ারপারসনের মুক্তির জন্য আমরা আন্দোলন করতে পারিনি। বিএনপি`র আরেকজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, শুধু টকশো করে এবং প্রেসক্লাব আর ঘরোয়া বৈঠক করে সরকার পতন করা যাবেনা। সরকার পতনের জন্য রাজপথে যেতে হবে। তিনি বলেন যে, কর্মীরা প্রস্তুত কিন্তু নেতারা আন্দোলনের কথা ভাবতে পারেনা, তারা আন্দোলনের চিন্তাভাবনাও করে না। এভাবে একটি দল চলতে পারেনা। বৈঠকে বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের অন্তত দুইজন সদস্য বলেন যে, আমাদেরকে একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা কি করতে চাই। আমরা ঘরে বসে থাকব নাকি ঝুঁকি নেব সেই সিদ্ধান্ত বৈঠকে নেয়া হবে। উল্লেখ্য যে, আজকের বৈঠকের পর আগামীকাল এবং বৃহস্পতিবারও দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে এবং এই বৈঠকের পর বিএনপি নির্বাচন কমিশন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং অন্যান্য রাজনৈতিক বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করবে বলে জানা গেছে।
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।