নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১
সিরিজ বৈঠকের প্রথম দফায় গত মঙ্গলবার থেকে টানা তিন দিন বৈঠক করেছে বিএনপি। আবার আগামী মঙ্গবার থেকেও টানা তিন দিনের বৈঠকে বসবে দলটি। আগের বৈঠকটি নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে হলেও এবার বৈঠকটি বিএনপির জেলা পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে হবে। জেলা পর্যায়ের সভাপতি-সাধারণ সম্পদকেরা এ বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। পাশাপাশি নির্বাহী কমিটির সদস্যরাও থাকবেন বলে জানা গেছে।
এ দিকে গতকাল শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। দলটির নেতৃত্বস্থানীয় নেতারা প্রকাশ্যে বলেছেন যে, এক দফা আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। এ আন্দোলন হবে সরাকার পতনের আন্দোলন। এ জন্যই এই সিরিজ বৈঠকগুলো করছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে, এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে তারা একটি কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। এবং এ কর্মসূচির মাধ্যমেই সরকার পতনে রাজপথে নামবে।
তবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বৈঠকটি যতটা না আন্দোলন কেন্দ্রিক, তার চেয়েও বেশি অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনেই ব্যতি ব্যস্ত ছিল। বর্তমানে বিএনপির মধ্যে ক্ষোভ, হতাশা, নেতৃত্ব কেন্দ্রিক দ্বন্দ এবং রাজপথে আন্দোলন কেন করতে পারছে না এ নিয়ে চলছে তীব্র কোন্দল। এবং এ কোন্দল ঠেকাতেই এ বৈঠক হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। বিএনপির নেতৃত্বস্থানীয় নেতারা যদিও বাইরে দেখানোর চেষ্টা করছে যে একটি সরকারবিরোধী আন্দোলন হবে, তবে বাস্তবতার সঙ্গে এ দাবি ঠিক মিলছে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে এত বৈঠকের দরকার নেই। বিএনপি যেই এক দফা আন্দোলনের কথা বলছে তার জন্য সিরিজ বৈঠক করার কি দরকার আছে তাও বোধগম্য নয়। বিএনপি যদি মনে করে তারা সরকার পতন ঘটাবে তাহলে তাদের রাস্তায় আন্দোলন করতে হবে। এ নিয়ে এত বৈঠক করার দরকার নেই বলেও মতামত দেন বিশ্লেষকেরা। এ সিরিজ বৈঠক ও নেতাদের কথার আড়ালের কথা নিয়ে বিশ্লেষকেরা ৫টি কারণ চিহ্নিত করেছেন।
প্রথমত, বিএনপি আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত নয়। যাদের প্রধান নেতা গ্রেফতার হওয়ার পরও ১০ জনের একটি মিছিল করতে পারে না, তারা বর্তমানে কিভাবে আন্দোলন করবে?
দ্বিতীয়ত, বর্তমানে বিএনপির যেই সাংগঠনিক অবস্থা তা দিয়ে একটি আন্দোলন গড়ে তোলার সক্ষমতা তাদের নেই।
তৃতীয়ত, বিএনপি কোন ইস্যু নিয়ে আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করবে এ নিয়ে তাদের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ এবং এক ধরণের দিধাদ্বন্দ রয়েছে।
চতুর্থত, যে কোনো আন্দোলন করতে জনসম্পৃক্ততা লাগে। জনগণ ইতোমধ্যে জানে দলটির প্রধান দুই নেতা দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত। এদের মধ্যে একজন আবার পলাতক। ফলে জনসম্পৃক্ত করার মতো পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি।
শেষ ও পঞ্চমত, বিএনপির মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, মতবিরোধ, নেতৃত্বের দ্বন্দ চরমে। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে যে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষেই একটা আন্দোলন গড়ে তোলা অত্যন্ত কঠিন।
আর সে কারণেই বিএনপি বোধহয় বৈঠক করছে যে কিভাবে দলের কোন্দল ও মতবিরোধ মেটানো যায়।
একদিকে বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সংখ্যা অনেক বেশি। ৮০ ভাগ কমিটিরই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন দলের কাউন্সিল হয় না। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের অর্ধেকেরও বেশি অসুস্থ। অনেকে আবার নিষ্ক্রিয়। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে একটি রাজনৈতিক দলকে আন্দোলন করতে গেলে দলের ভেতরে যে ধরণের ঐক্যের দরকার, সে ঐক্য বিএনপির মধ্যে অনুপস্থিত। আর এ কারণেই হয়ত বিএনপি বৈঠকগুলো করছে যেন দলের ভাঙ্গন ঠেকানো যায়।
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।