নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০১ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১
একটা সময় বাংলাদেশে জনগণের কাছে রাজনীতি, নির্বাচন, ভোটের বাক্স সবচেয়ে পছন্দের বিষয় ছিল। যদিও সেসব নির্বাচনগুলোতে জাল ভোট দেয়াসহ অনেক ধরণের কারচুপিও হতো, তবে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতাও হতো। কিন্তু দেশের ভোটে এখন এক নতুন আতঙ্ক, নতুন প্রবণতা দেখা দিয়েছে। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে এখন আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হচ্ছে না। ফলে আর্থিক লেনদেনসহ নারা রকম সুযোগ সুবিধা পেয়ে নির্বাচন থেকে হাত গুটিয়ে বসে যাচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার এই ঘটনা এখন দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক চর্চার পথে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকেরা।
আগামী সাত অক্টোবর ছিল কুমিল্লা-৭ আসনের উপ-নির্বাচন। নির্বাচনে বিএনপি না আসলেও আওয়ামী লীগসহ জাতীয় পার্টি ও ন্যাপের পক্ষ থেকে প্রার্থী ছিল। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী তিন বৈধ প্রার্থীর দুইজন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়ায় সাত অক্টোবর ভোট হচ্ছে না। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
জানা যায়, আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে জাপা প্রার্থী তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। এ অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করতে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। একই অবস্থা ন্যাপ মনোনীত প্রার্থীরও। একই অবস্থা স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও। করোনা অতিমারীর কারণে স্থগিত হওয়া ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আজ হচ্ছে। এ নির্বাচনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪৫ জন প্রার্থী ইতোমধ্যে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে গেছেন। এর আগের প্রথম বারের মতো দলীয় প্রতীকে করা নবম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ২১২ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। নবম ইউপি নির্বাচনে বিএনপি অংশ্রগ্রহণ করলেও এবারের নির্বাচন বর্জন করেছে দলটি। বহু বছর আাগে স্বৈরাচার এরশাদের আমলে ১৯৮৮ সালের ইউপি নির্বাচনে ১০০ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেসময় এটিই ছিল সবচেয়ে বেশি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের রেকর্ড।
কুমিল্লা-৭ আসনের মতোই ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে একাধিক প্রার্থী না থাকায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় এখানে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। কিন্তু তিনিও তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।
আমাদের সংবিধান বলছে, নির্বাচন হতে হবে। কিন্তু এখন তো নির্বাচনই হচ্ছে না। ভোটে যদি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকে অথবা ভোটাররা যদি পছন্দের প্রার্থীকে ভোটই দিতে না পারেন তাহলে তো আর নির্বাচন হয় না। নির্বাচন মানেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন মূলত সিলেকশন। যদিও কোনো পদে একাধিক প্রার্থী না থাকলে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষণা অসাংবিধানিক বা বেআইনি নয়। ফলে এই যুক্তিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত কাউকে অবৈধ বলার সুযোগ নেই এটা যেমন সত্য, তেমনি কেন একটি পদের বিপরীতে একাধিক প্রার্থী থাকেন না, এ প্রশ্ন তোলাও সংগত এবং ইদানিং কেন এই প্রবণতা বাড়ছে তারও নির্মোহ বিশ্লেষণ অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।
নির্বাচন বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার এই প্রবণতা গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এ প্রবণতা বাড়তে থাকলে একসময় পুরো নির্বাচনি ব্যবস্থার প্রতিই মানুষের আগ্রহ শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে বলে আশঙ্কা তাদের। তারা বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতা হস্তান্তর কিংবা প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোটই প্রধান উপায়। একাধিক প্রার্থীর মধ্য থেকে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনি ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারদের প্রতিনিধি বেছে নেয়ার সুযোগকে বলা হয় প্রকৃত নির্বাচন। আর এটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। সুতরাং যখন কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন, তখন সেখানে নাগরিকের এই সাংবিধানিক অধিকারও ক্ষুণ্ন হয়। সেটি স্থানীয় সরকার হোক কিংবা জাতীয় সংসদ সব ক্ষেত্রেই একই কথা প্রযোজ্য বলেও জানান বিশ্লেষকেরা।
মন্তব্য করুন
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সভাপতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বেগম জিয়া আর ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন না, রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন এ রকম একটি বক্তব্য সামনে নিয়ে আসছেন শামীম ইস্কান্দার।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠিত করা এবং বিভেদ-বিভক্তির দূর করার জন্য যে ডাক দেওয়া হয়েছিল তারপর একটু পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল বলে বটে। কিন্তু এখন আবার উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে তৃণমূল বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সামাল দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। একদিকে নির্বাচন কেন্দ্রীক বিরোধ অন্যদিকে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে যাওয়া আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তদারকির অভাবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই।