নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ২৪ নভেম্বর, ২০২১
বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, তার চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করেছে। বিএনপি এখন ঢাকা ছেড়ে সারাদেশে এ আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আজ সারাদেশে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। সেই কর্মসূচি বিভিন্ন স্থানে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। বিএনপি এখন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা চান, না এই বেগম খালেদা জিয়াকে পুঁজি করে রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত করতে চান এ নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল সন্দিহান। বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি নেতাদেরকে উদ্বিগ্ন দেখা যাচ্ছে না। বরং বিএনপি নেতাদের মধ্যে এক ধরনের চাঁপা উল্লাস লক্ষ্য করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার লাশের উপর বিএনপি রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হতে চায় কিনা সেই প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির প্রধান নেতা। বিশেষ করে ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর এ পর্যন্ত সময় তিনিই বিএনপিকে আজকের অবস্থায় এনেছেন। দুই দুইবার তিনি বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে সক্ষম হয়েছেন। দুইবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। জিয়াউর রহমান নয়, বরং বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরে বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি পেয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। কিন্তু সেই বেগম জিয়ার অবদানের প্রতিদান কি বিএনপি দিতে পেরেছে? এই প্রশ্ন এখন বিএনপির মধ্যেই এসেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গতকাল একটি তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, খালেদা জিয়ার কিছু হলে বিএনপিও জনরোষে পড়বে। বেগম খালেদা জিয়া জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিলুপ্তপ্রায় বিএনপিকে নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন এবং ৯ বছর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর বিএনপিকে তিনি ক্ষমতায় এনেছেন। ২০০১ সালেও বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে বেগম খালেদা জিয়ার ইমেজের কারণে। কিন্তু বেগম জিয়া যখন সংকটে পড়েছেন তখন তার দল কি করেছে?
বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়াকে যখন ৬ নম্বর মইনুল হোসেন রোডের বাড়ি থেকে আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদ করা হয় তখন বিএনপির যে প্রতিবাদ করা উচিত ছিল সে প্রতিবাদ বিএনপি করতে পারেনি। বেগম খালেদা জিয়া এ নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়াকে যখন ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তখন অনেকে মনে করেছিল সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠবে। কিন্তু উত্তাল হওয়া তো দূরের কথা, বিএনপি একটা বড় ধরনের মিছিল করতে পারেনি বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে। এমনকি বেগম খালেদা জিয়াকে বের করে আনতে আইনগত ও আন্দোলন কোনটাই বিএনপি সফলভাবে করতে পারেনি। সেই বিএনপি এখন বেগম খালেদা জিয়ার ইস্যুকে কেন্দ্র করে আন্দোলন করছে। বিএনপি নেতারাও জানেন এই আন্দোলন একটি অন্তঃসারশূন্য। কারণ জেলা প্রশাসকের কাছে ধরনা দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি কেবল অযৌক্তিক নয়, হাস্যকরও বটে। কিন্তু তারপরও বিএনপি করছে।
বিএনপির প্রধান লক্ষ্য বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো নয়, তাদের মূল লক্ষ্য হলো বেগম খালেদা জিয়াকে ব্যবহার করে দলকে সংগঠিত করা, আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সেটি কি বিএনপি পারবে? বিএনপি একটি মানবিক রাজনৈতিক দল হলে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপির কর্মসূচির ধরন ভিন্নরকম হতে পারত। বিএনপি হয়তো মিলাদ মাহফিল, দোয়া মাহফিল বা বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা করে বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা ইত্যাদি কর্মসূচি করতে পারত। বিএনপির নেতা-কর্মীরা যে যার মতো সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করতে পারত। কিন্তু তা না করে বিএনপি যখন রাজপথে সহিংস রূপে আবির্ভূত হচ্ছে তখন মনে হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি নেতারা উদ্বিগ্ন নন, বরং তারা উল্লসিত।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।