প্রেস ইনসাইড

মাহফুজ আনামের কলাম: মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলোর পর্যালোচনা

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ০৪ জুন, ২০২২


Thumbnail মাহফুজ আনামের কলাম: মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলোর পর্যালোচনা

মাহফুজ আনাম। ডেইলি স্টারের সম্পাদক এবং বাংলাদেশের সুশীল সমাজের অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবেও তিনি অত্যাধিক পরিচিত। রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে সুশীল সরকারের পক্ষে তিনি সবসময় সোচ্চার। সবসময় তিনি মার্কিনপন্থী সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত। কিন্তু গত শুক্রবার (০৩ জুন) ডেইলি স্টারে তার নিজের নামে লেখা সম্পাদকীয়তে তিনি বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী অবস্থানের সমালোচনা করেছে। 'রিডিং ইনটু দ্যা রিসেন্ট স্পিসেস অব দ্যা ইউএস অ্যাম্বেসেডর' এই শিরোনামে মাহফুজ আনামের লেখাটি ডেইলি স্টারে প্রকাশিত হয়েছে। আর এই লেখাটি নিয়ে এখন সারাদেশে আলোচনা চলছে। পাঠকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে মাহফুজ আনামের 'রিডিং ইনটু দ্যা রিসেন্ট স্পিসেস অব দ্যা ইউএস অ্যাম্বেসেডর' শিরোনামের লেখাটির বাংলা অনুবাদ হুবহু তুলে ধরা হলো।

একটা সময় ছিল যখন মার্কিন সরকার ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হেন কোনো পন্থা নেই যা অবলম্বন করেনি। বছরের পর বছর ধরে, সেই সরকারের বিরুদ্ধে জঘন্য প্রচারণা চালানো হয়েছিল, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক আর্থিক সংযোগগুলি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল, যে দেশগুলি ভেনেজুয়েলার তেল কিনবে তাদেরকে কিছু কঠিন পরিণতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে অন্যদের সাথে ভেনেজুয়েলাকে বিচ্ছিন্ন করার একটি প্রচারণা শুরু হয়েছিল। এর পরপরই সবচেয়ে বিতর্কিত কূটনৈতিক পদক্ষেপটি নিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ভেনেজুয়েলার বৈধ সরকার হিসাবে স্বল্প পরিচিত এবং অনভিজ্ঞ বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়াইদোর গঠিত একটি বিকল্প সরকারকে মাদুরোর বিপরীতে স্বীকৃতি দিয়েছিল আমেরিকা। ২০২২ সালের ১৭ মে ‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মাদুরো সরকারের সাথে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার জন্য পূর্বের নিষেধাজ্ঞাগুলি শিথিল করবে এবং শেভরনকে ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল ও গ্যাস কোম্পানির (Petróleos de Venezuela, South America) সাথে লেনদেনের অনুমতি দেবে। স্পষ্টতই ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে সৃষ্ট জ্বালানি সংকট মোকাবেলা করার জন্য আমেরিকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মার্কিন সরকারের নিজস্ব স্বার্থে কী নীতি অনুসরণ করা উচিত সে সম্পর্কে মন্তব্য করা আমাদের কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। মার্কিনরা নিজেরাই নিজেদের নীতি নির্ধারক এবং তা বাস্তবায়ন করার জন্য যথাযথ সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ এবং কর্তৃত্ব তাদের রয়েছে। তাহলে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো যখন নিজেদের ব্যাপারে একই পন্থা অবলম্বন করে, তখন কেন মার্কিনীরা সেটা মেনে নিতে পারে না এবং অন্য দেশের রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করে?

বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস মঙ্গলবার ‘ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের’ (ডিসিএবি) সাথে কথা বলতে গিয়ে বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়গুলিকে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এটা নিয়ে কোনো অজুহাত দেই না।" তিনি যা বোঝাতে চেয়েছেন তা হলো এই নীতিতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো অজুহাত গ্রহণ করবে না। এইক্ষেত্রে মার্কিনীদের দীর্ঘদিনের মিত্র সৌদি আরব এবং ন্যাটো সদস্য তুরস্কের মানবাধিকার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সম্পর্কে কী বলা যায়?

যখনই কেউ জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে ইতিবাচক কথা বলে, আমরা সাংবাদিকরা উল্লাস করি। তাই বাংলাদেশে মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতি মার্কিন সমর্থন আমাদের কানে আনন্দধারার মত প্রবাহিত হয়। যাইহোক, আমরা এও ভুলে যেতে পারি না যে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৫ সালে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী থাকাকালীন আমেরিকান টিভি শো ‘সিক্সটি মিনিটে’ স্কট পেলির সাথে একটি সাক্ষাত্কারে মন্তব্য করেছিলেন, "আমার পরিচিত সবচেয়ে খারাপ লোকদের মধ্যে বেশিরভাগই সাংবাদিক।" রাষ্ট্রপতি হিসাবে ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সংবাদ মাধ্যমকে "আমেরিকান জনগণের শত্রু" বলে অভিহিত করে টুইট করেছিলেন ট্রাম্প।

তিনি আমেরিকার ক্ষমতায় থাকাকালীন শুধুমাত্র ফক্স নিউজ বাদে মার্কিন প্রতিটি স্বাধীন মিডিয়াকে নিপীড়ন করেছিলেন। ট্রাম্পের শাসনামলে অন্য সমস্ত বিখ্যাত এবং প্রভাবশালী মার্কিন মিডিয়া আউটলেটগুলোর তুলনায় ফক্স নিউজ সবচেয়ে ঘৃণ্য, বর্ণবাদমূলক, বিভক্তিকর এবং ভুল তথ্য প্রচার করত। সুতরাং, আমরা মনে করি এটি জিজ্ঞাসা করা ন্যায্য হবে যে, যদি মার্কিন রাষ্ট্রদূত হাস বর্তমান প্রসিডেন্ট বাইডেনের না হয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিনিধিত্ব করতেন তাহলেও কি তিনি একই বক্তব্য দিতেন? আগামী নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন এখনই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সুতরাং, যদি ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় আসেন (আল্লাহ্ মাফ করুন) তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি স্বাধীন সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে একই নীতি অনুসরণ করবে? আমরা কি বিশ্বাস করব যে বাংলাদেশে মুক্ত গণমাধ্যমকে সমর্থন করা বাইডেন প্রশাসনের নীতি হোয়াইট হাউসে ক্ষমতা রদবদলের সাথে সাথে পরিবর্তন হতে পারে? আমরা কি আমাদের অভ্যন্তরীণ নীতিগুলি আবার সেইসব দিনের মার্কিন প্রশাসনের সাথে মানানসই করার আশা করি?

যেকোন নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে আমরা অবশ্যই সেটি চাইবো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এই বিষয়ে একমত জেনে আমরা আনন্দিত। কিন্তু একটি নির্বাচন কতটা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে এবং কিসের ভিত্তিতে তা বিচার করবে?

মার্কিন মিডিয়া অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সম্পূর্ণ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পরেও রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বিশ্বাস করে তাদেরকে জোচ্চুরি করে নির্বাচনে হারানো হয়েছে। এমনকি গত মার্কিন নির্বাচনের সত্যতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে আদালতের বেশ কয়েকবার রায় ঘোষণার পরেও রিপাবলিকানদের একটি বড় অংশ এখনও বিশ্বাস করে যে, গত নির্বাচনে তাদের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পই নির্বাচিত হয়েছিলেন কিন্তু তাকে ভোট কারচুপি করে হারানো হয়েছে। সুতরাং, ধরা যাক, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরে যদি পরাজিত দল দাবি করে যে তাদের কাছ থেকে নির্বাচন চুরি হয়েছে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রদূত হাস কিভাবে এই প্রচারণা ব্যাখ্যা করবেন?

আমি খুব মনোযোগ সহকারে গত ৩১ মার্চ, ২৪ এপ্রিল; ১০, ২৪ মে এবং ৩১ তারিখে দেওয়া রাষ্ট্রদূত হাসের সাম্প্রতিক বক্তৃতাগুলি পড়েছি এবং নতুন করে চিন্তা করার মতো অনেক কিছু পেয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-কৌশলগত চিন্তাভাবনাগুলো বাংলাদেশের জন্য কেমন হতে পারে তার একটা প্রমাণ পাওয়া যায় গত ৩১ মার্চ ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)এ অনুষ্ঠিত "মুভিং ফরওয়ার্ড ইন দ্য ইন্দো-প্যাসিফিক" শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পিটার হাসের বক্তৃতায়। রাষ্ট্রদূত হাস "স্বাধীন এবং উন্মুক্ত, সংযুক্ত, সমৃদ্ধ, সুরক্ষিত এবং স্থিতিস্থাপক" এই পাঁচটি উপাদানকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন নীতির মূল উপাদান হিসাবে উচ্চারণ করেছেন; এই মূল উপাদানগুলির সাথে আমাদের কোনো দ্বিমত এবং সমস্যা নেই। কিন্তু হাসের এই বিশদ বিবরণের মধ্যেই আসল গল্পটি নিহিত রয়েছে। যখন মার্কিন রাষ্ট্রদূত বললেন, "ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জনগণও গণতন্ত্র চায় এবং তাদের মানবাধিকারকে সুরক্ষিত করতে ও সম্মান জানাতে চায়" এবং যখন তিনি আরও বলেন, "আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করব... এখানে হুমকি প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে। আমাদের নিরাপত্তা পদ্ধতিও অবশ্যই এই হুমকির বিপরীতেই বিকশিত হবে," তিনি আসলে কোন দেশের কথা বলছেন তা আমাদের বুঝতে মোটেই সমস্যা হবে না। যাই হোক না কেন, গরীবের ঘরের সেই হাতিটি যে চীন, তা বুঝতে খুব সহজ সরল মানুষেরও সমস্যা হবার কথা না।

১৯৭১ সালে চীনের সাথে সমঝোতার পর থেকে, মার্কিন-চীন সম্পর্ক বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়ে ওঠে এবং বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের দারিদ্র্যের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেতে ও বৈশ্বিক সমৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে। চীনের মুক্ত বাজার অর্থনীতি অনুসরণ এবং তাদের দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্যান্য বিদেশী বিনিয়োগের অনুমোদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেবেছিল যে, হয়তো পরবর্তীকালে সময়ের সাথে সাথে চীন তার কেন্দ্রীভূত অর্থনৈতিক কাঠামোকে শিথিল করবে এবং তারাও পশ্চিমা পুঁজিবাদী বিশ্বের একটি অংশ হয়ে উঠবে। কিন্তু আদোতে তা বাস্তবায়িত হয় নি বরং চীনের অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী, প্রযুক্তিগতভাবে আরও দক্ষ ও সমৃদ্ধ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), বায়োটেকনোলজি ইত্যাদিতে অভূতপূর্ব অগ্রগতির ফলে ভীত হয়ে- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময় থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে চীনের সাথে প্রতিযোগিতা শুরু করে এবং এখন তারা বিশ্বব্যাপী চীনের আঞ্চলিক অবস্থান ও গ্রহনযোগ্যতা নষ্ট করতে তৎপরতা শুরু করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিনের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের চীন বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গিকে প্ররোচিত করে একত্রিত করার জন্য একটি শক্ত ভিত্তি প্রদান করে। রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণ আমেরিকার চীন-রাশিয়া বিরোধী কার্যক্রমকে আরও তরান্বিত করেছে।

এই দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং বিপজ্জনকভাবে চলিত  বিশ্বে বাংলাদেশকে অবশ্যই দক্ষতার সাথে নিজেদের চালনা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এবং একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ খাতে চীনা বিনিয়োগের অনুমতি দিয়ে অত্যন্ত প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। এই নীতি আমাদের ব্যাপকভাবে উপকৃত করেছে। ভারতের নিজস্ব সমস্যা সত্ত্বেও তারা বহিরাগত শক্তিকে চীনের সাথে তাদের সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে দেয়নি। চীন-ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০২১ সালে ৪৩.৩ শতাংশ বেড়ে ১২৫.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।

যাইহোক, এটি প্রতীয়মান যে, আমেরিকার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া এবং বাংলাদেশে আমাদের জন্য গভীর প্রভাব ফেলছে। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের সম্পর্কের উন্নতির সমস্ত সম্ভাবনাকে স্বাগত জানাই এবং আমরা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সমস্ত সম্ভাবনার দুয়ার অন্বেষণ ও উন্মোচন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যাইহোক, এশিয়া এবং এশিয়ার বাইরের অন্যান্য দেশের সাথে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রটি কেমন এবং সেখানে কি কি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে সে সম্পর্কে বাংলাদেশের খুব সচেতন হওয়া উচিত। এই সূত্রে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেমনটি বলেছেন, "এশীয় দেশগুলির অভিন্ন উন্নয়ন কাঠামো এবং প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এবং সেগুলো সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করা উচিত," - হ্যাঁ বিভক্তভাবে নয়, বরং সম্মিলিত প্রচেষ্টাই এশিয়ার জন্য সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে।

অনুবাদ করেছেন - অরুণাভ বিলে

মাহফুজ আনাম  


মন্তব্য করুন


প্রেস ইনসাইড

শেরপুর প্রেসক্লাবের নতুন কমিটি ঘোষণা

প্রকাশ: ০৩:২২ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বিটিভি ও দৈনিক সমকাল পত্রিকার শেরপুর জেলা প্রতিনিধি দেবাশীষ ভট্রাচার্যকে সভাপতি ও বাংলা ইনসাইডারের স্টাফ রিপোর্টার প্রতিনিধি মোঃ মেরাজ উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে শেরপুর প্রেসক্লাবের ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি নির্বাচন করা হয়েছে।

 

এর আগে ক্লাবের বিপুল সংখ্যক সদস্যসহ জেলার প্রায় পৌনে দুইশ সাংবাদিকের উপস্থিতিতে ইতিপূর্বে সম্পূর্ন অনিয়মতান্ত্রিকভাবে গঠিত শেরপুর প্রেসক্লাবের কমিটি ক্লাবের স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম ও ব্যর্থতার অভিযোগে ক্লাবের সদস্যদের দাবীর মুখে শেরপুর প্রেসক্লাবের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করা হয়। এতে ক্লাবের দুই তৃতীয়াংশ সদস্য সর্বসম্মত সমর্থন প্রদান করেন।   

 

এর আগে বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে শেরপুরের প্রবীন সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযুদ্ধা আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মত বিনিময় সভায় ভার্চুয়ালী যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখেন সংসদ উপ নেতা ও শেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেরপুর-১ সদর আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ছানুয়ার হোসেন, শেরপুর-৩ আসনের এমপি এডিএম শহিদুল ইসলাম, শেরপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমান, শেরপুর পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন, শেরপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ রফিকুল ইসলাম, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুন্নাহার কামাল, জেলা জাসদের সভাপতি শেরপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মনিরুল ইসলাম লিটন, শেরপুর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবিহা জামান শাপলা, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বায়েযীদ হাসানসহ আরো অনেকে।

 

এসময় বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান সরকার সাংবাদিকদের কল্যাণে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্বাধীনভাবে খবর প্রচার করে আসছে। আমরা শেরপুরের সাংবাদিকদের কল্যাণে সব ধরনের সহযোগিতা করবো। আমি নতুন নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানাই।’ 

 

আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সদস্যরা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে। পরে সর্বসম্মতিক্রমে উপদেষ্টা পরিষদের কাছে দায়িত্ব অর্পন করা হয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করার জন্য। উপদেষ্টা পরিষদ সভাপতি হিসেবে বিটিভি ও দৈনিক সমকালের শেরপুর জেলা প্রতিনিধি দেবাশীষ ভট্রাচার্যকে সভাপতি ও ইনডিপেনডেন্ট টিভির স্টাফ রিপোর্টার মেরাজ উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তাব করলে তা সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত করা হয়। 


প্রেসক্লাব   নতুন কমিটি  


মন্তব্য করুন


প্রেস ইনসাইড

প্রথম আলো বিক্রি: দর কষাকষিতে চারটি শিল্প গ্রুপ

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

মিডিয়া স্টার লিমিটেডের মালিকানাধীন প্রথম আলো বিক্রির জন্য মালিকপক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারা প্রথম আলো বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের সাথে কথাবার্তা বলছেন। প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান নিজেই দু একটি শিল্প গ্রুপের সাথে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়াও মালিকপক্ষের অন্যরা সিমিন রহমান শাজরেহ হক দুজনই প্রথম আলো বিক্রির জন্য বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ করছেন বলে জানা গেছে। 

বিষয়ে বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, প্রথম আলো বিক্রির জন্য যে দর হাঁকা হয়েছে সেটি অনেক বেশি এবং একারণে আলাপ আলোচনা শুরু হলেও দর কষাকষি চলছে বেশ ভালোভাবেই। সাবের হোসেন চৌধুরীর মালিকানাধীন কর্ণফুলী গ্রুপ প্রথম আলো কিনতে আগ্রহী ছিল। কিন্তু প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যে দাম চাওয়া হয়েছে সেই দামে কর্ণফুলী গ্রুপ প্রথম আলো কিনতে রাজি নয় বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। 


বিভিন্ন সূত্রগুলো জানিয়েছে, কর্ণফুলী গ্রুপের দর কষাকষির প্রেক্ষাপটে আরও কয়েকটি বড় বড় শিল্প পরিবার প্রথম আলো কেনার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছে এবং তারাও মিডিয়া স্টারের পরিচালকদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরু করেছে। 

যে সমস্ত শিল্প গ্রুপ প্রথম আলো কেনার ব্যাপারে আগ্রহ উঠেছে তাদের মধ্যে এখন সবার শীর্ষে রয়েছে এস আলম গ্রুপ। এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এক সময় প্রথম আলোতে কর্মরত ছিলেন এবং তিনি মতিউর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ প্রিয় ভজন হিসেবে পরিচিত। রাজনৈতিক ভাবেও তারা এক সময়ে কমিউনিস্ট রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার মাধ্যমেই এস আলম গ্রুপ এখন প্রথম আলো গ্রুপের সঙ্গে পত্রিকা বিক্রির বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু করেছেন। 

প্রথম আলোর বেশ কয়েকজন সাংবাদিক এখন এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তারা এই বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে দর কষাকষি করছে বলে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। দর কষাকষিতে পিছিয়ে নেই দেশের অন্যতম শিল্প গ্রুপ স্কয়ারও। স্কয়ার গ্রুপের সঙ্গে প্রথম আলোর একটি আলাদা সম্পর্ক রয়েছে। মতিউর রহমানের সঙ্গে স্কয়ার গ্রুপের মালিক দুই ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে স্কয়ার গ্রুপের অর্থায়নে প্রতি বছর প্রথম আলো মেরিল প্রথম-আলো উৎসব করে থাকে, যেখানে তারকাদেরকে পুরস্কার দিয়ে প্রথম আলোর একান্ত অনুগত করে রাখা হয়। স্কয়ার গ্রুপের পক্ষ থেকেও পত্রিকাটি কেনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে বলে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। 


উল্লেখ্য, স্কয়ারের মালিকানাধীন মাছরাঙা টেলিভিশন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্কয়ার গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার অঞ্জন চৌধুরী পত্রিকা কেনার ব্যাপারে প্রথম আলোর মালিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছেন বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও একাত্তর টেলিভিশনের মালিক প্রতিষ্ঠান এমজিআই বা মেঘনা মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজও প্রথম আলো কিনতে আগ্রহী। এমজিআই অন্যতম দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং একাত্তর টেলিভিশনের মালিকানায় রয়েছে। তারা প্রথম আলো কেনার ব্যাপারে ইতোমধ্যে কথাবার্তা বলছে বলে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

একাধিক সূত্র বলছে, প্রথম আলো বিক্রির জন্য যে দাম চাওয়া হচ্ছে সেটি অনেক বেশি। আর এ কারণেই এখন দর দামের বিষয়টি মূখ্য হয়ে উঠেছে। তবে প্রথম আলো যে শেষ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে সেটি এখন পর্যন্ত মোটামুটি নিশ্চিত।

প্রথম আলো   স্কয়ার গ্রুপ   মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ   একাত্তর টিভি   মিডিয়া স্টার লিমিটেড  


মন্তব্য করুন


প্রেস ইনসাইড

‘নিবন্ধনের জন্য আবেদনের বাইরে থাকা অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করা হবে’

প্রকাশ: ০৯:১৮ পিএম, ২০ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেনে, সাংবাদিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আবেদনের বাইরে থাকা অনিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) রাজধানীতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী।

মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের ২১৩টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল আছে। এর বাইরে শুধু অনলাইন নিউজ পোর্টালের নিবন্ধন আছে ২১৩টির। এই ৪২৬টির পাশাপাশি আরও কতগুলো নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে, ছাড়পত্রও হয়েছে। সেগুলোর একটি তালিকা আছে। এর বাইরে আরও কতগুলো আছে, যেগুলো আবেদন করেছে, প্রক্রিয়াধীন আছে, তবে ছাড়পত্র হয়নি। সব কটির তালিকা করতে বলা হয়েছে। এগুলো বিটিআরসিতে পাঠাতে বলা হয়েছে। এর বাইরে যতগুলো অনলাইন নিউজ পোর্টাল আছে, যেগুলো অনিবন্ধিত, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার দাবি ছিল সাংবাদিকদের। অনলাইন গণমাধ্যমের কমিটি, প্রেসক্লাবসহ অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনও একই দাবি করেছে। সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে’।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তারপর নতুন করে যারা আবেদন করবে, তখন তা চালু হবে। আবেদন না করলে চালু হবে না। আবেদন করলে নিবন্ধন পাওয়ার আগপর্যন্ত চালু থাকবে। কারণ, তাকে চলতে হবে, দেখতে হবে যে কেমন হচ্ছে। তারপর যদি ছাড়পত্র না হয়, তখন আবার বন্ধ। কিন্তু আবেদন করল না, কোনো প্রক্রিয়ায় যায়নি, সেগুলো যদি চলে, সেখানে যদি অসত্য ও অপতথ্যের মাধ্যমের চকটদার খবর দেওয়া হয়, তাহলে সেই ধরনের সাংবাদিকতা পেশাদারির সঙ্গে যারা সাংবাদিকতা করছেন, তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই সাংবাদিকদের সুরক্ষার স্বার্থে, সাংবাদিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’।

এছাড়াও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জায়গাটি সমুন্নত রেখে অপতথ্য রোধ করতে চান বলে জানান মোহাম্মদ আলী আরাফাত। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকতার জন্য চমৎকার পরিবেশ তৈরি করতে চাই। তথ্যপ্রবাহকে অবারিত করতে চাই।’

গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন দ্রুত সময়ের মধ্যে পাস করার প্রত্যাশার কথা জানান তথ্য প্রতিমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান।



অনলাইন নিউজ পোর্টাল   তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী   মোহাম্মদ আলী আরাফাত  


মন্তব্য করুন


প্রেস ইনসাইড

প্রথম আলো বিক্রি: কর্ণফুলী গ্রুপের সাথে আলোচনা শুরু?

প্রকাশ: ০২:০০ পিএম, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

প্রথম আলো বিক্রির গুঞ্জন সত্য হিসেবে পল্লবিত হতে শুরু করেছে। প্রথম আলো বিক্রির জন্য দু’টি প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ অনানুষ্ঠানিকভাবে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে। ট্রান্সকম গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘মিডিয়া স্টার লিমিটেড’ বিক্রির বিষয়টি নিয়ে পর্দার আড়ালে আলাপ-আলোচনা এবং দর কষাকষি শুরু হয়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে, প্রথম আলোর সম্পাদক এবং প্রকাশক মতিউর রহমান যিনি মিডিয়া স্টার লিমিটেডের অন্যতম অংশীদারও বটে। তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের সঙ্গে প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, মতিউর রহমানের আগ্রহ পত্রিকাটি সাবের হোসেন চৌধুরীর কাছে বিক্রি করা। সাবের হোসেন চৌধুরী এর আগেও তার মালিক ছিলেন।

মতিউর রহমান সাপ্তাহিক একতার সম্পাদক ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টির মালিকানাধীন পত্রিকাটি থেকে গ্লাসনোস্ট এবং পেরেস্ট্রোইকা পর সরে যান মতিউর রহমান। এরপর তিনি আজকের কাগজের বিশেষ প্রতিবেদক হিসেবে নাঈমুল ইসলাম খানের অধীনে যোগদান করেন। আজকের কাগজে যোগদানের পরে তিনি আজকের কাগজের ভাঙ্গন প্রক্রিয়া তরান্বিত করার চেষ্টা করেন। আজকের কাগজের তরুণ-উদ্দীপ্ত কর্মীবাহিনীকে কাজে লাগিয়ে তিনি নতুন করে একটি পত্রিকা করার প্রক্রিয়া শুরু করেন। সেই সময় তিনি পর্দার আড়ালে বর্তমান পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেন।

সাবের হোসেন চৌধুরীর সাথে তার চুক্তি ছিল আজকের কাগজের পুরো কর্মী বাহিনী নিয়ে তিনি আরেকটি নতুন পত্রিকা তৈরী করবেন। এবং সেই আলোচনার ফলশ্রুতিতেই আজকের কাগজে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে এবং এক পর্যায়ে প্রয়াত কাজী শাহেদ আহমেদ পত্রিকার কর্তৃত্ব গ্রহণে বাধ্য হন। এসময় মতিউর রহমান সাবের হোসেন চৌধুরীর অর্থায়নে ‘ভোরের কাগজ’ প্রকাশের উদ্যোগ নেন। সেই সময় শাহবাগ থেকে ভোরের কাগজ প্রকাশের জন্য যে অফিস তা আজকের কাগজের ভাঙ্গনের বহু আগেই মতিউর রহমান নিয়েছিলেন।

মতিউর রহমান ‘আজকের কাগজ’ পত্রিকাতে গিয়েছিলেন পত্রিকা থেকে কর্মীদেরকে ভাগিয়ে নেওয়ার জন্য বলেও আজকের বাস্তবতায় প্রতিয়মান হয়। আজকের কাগজ থেকে ভোরের কাগজের জন্ম হওয়ার সময় প্রথমে এই পত্রিকার প্রকাশক ছিলেন নাঈমুল ইসলাম খান। এর পিছন থেকে অর্থ বিনিয়োগ করেন সাবের হোসেন চৌধুরী এবং কর্ণফুলী গ্রুপ।

প্রথম দিকে সাবের হোসেন চৌধুরী কাগজ পত্রে কোন মালিকানায় ছিলেন না। এরপর ঘটে নাটকীয় ঘটনা। নাঈমুল ইসলাম খানকে ভোরের কাগজ থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং সেখানেও সাংবাদিকদের কৌশলে ব্যবহার করেন মতিউর রহমান। মতিউর রহমান যেহেতু রাজনৈতিকভাবে অভিজ্ঞ। কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন সেকারণে তিনি আজকের কাগজের বিভাজন প্রক্রিয়া ভোরের কাগজে পুনঃপ্রয়োগ করেন এবং ভোরের কাগজের তরুণ সংবাদকর্মীদের উত্তেজিত করে নাঈমুল ইসলাম খানকেই ভোরের কাগজ থেকে সরিয়ে দিতে সফল হন।

এরপর ভোরের কাগজে পাদপ্রদীপে আসে কর্ণফুলী গ্রুপ এবং সাবের হোসেন চৌধুরীরা। তাদের প্রিন্টার্স লাইনে নাম প্রকাশিত হয়। ভোরের কাগজ যখন একটি মর্যাদার জায়গায় পৌঁছে গেছে এবং ভোরের কাগজ যখন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য নাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে ঠিক সেই সময় নতুন করে ষড়যন্ত্র করেন মতিউর রহমান। তিনি ভোরের কাগজের কর্মীদের নিয়ে ট্রান্সকম গ্রুপের লতিফুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ভোরের কাগজ থেকে সিংহভাগ কর্মীদের বের করে নিয়ে গিয়ে প্রথম আলো তৈরী করেন। যেটি ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকানাধীন ছিল। শুধুমাত্র শ্যামল দত্ত ছাড়া ভোরের কাগজে উল্লেখযোগ্য আর কেউ থাকেননি। সবাই মতিউর রহমানের সাথে প্রথম আলোতে যোগদান করেন। অচিরেই ভোরের কাগজের জনপ্রিয়তা প্রথম আলো গ্রহণ করে। এখন মতিউর রহমান ট্রান্সকম গ্রুপের অভ্যন্তরীণ বিরোধ এবং মালিকানার দ্বন্দ্বের কারণে পত্রিকাটি অন্য মালিকের কাছে হস্তান্তর করতে চেষ্টা করছেন।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, প্রথম আলো বিক্রির পিছনে দুই বোনের বিরোধ থাকলেও প্রথম আলোকে ট্রান্সকম গ্রুপের থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা রাখছেন মতিউর রহমান নিজেই। কারণ সামনের দিনগুলোতে সিমিন রহমান এবং শাজরেহ হক এর বিরোধ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এ নিয়ে একটি অনিশ্চয়তা রয়েছে। আর একারণেই তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে আবার ফেরত যেতে চাইছেন। মতিউর রহমান ভোরের কাগজ থেকে বের হওয়ার পর কিছুদিন সাবের হোসেন চৌধুরীর সম্পর্কের শিথিলতা থাকলেও এখন তা আবার আগের মত হয়েছে বলে জানা গেছে।

একাধিক সূত্র বলছে যে, কর্ণফুলী গ্রুপের সঙ্গে মতিউর রহমানের পর্দার আড়ালের বৈঠক ফলপ্রসূ হলে মিডিয়া স্টারের বোর্ড সভায় প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টি মতিউর রহমান নিজেই উপস্থাপন করতে পারেন।

তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, মিডিয়া স্টারের অন্যতম মালিক ট্রান্সকম গ্রুপের দুই বোন শেষ পর্যন্ত কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে পত্রিকা বিক্রি করবেন নাকি অন্য কোন বৃহত্তর শিল্প গ্রুপের কাছে পত্রিকাটি বিক্রি করবেন সেটি বোঝা যাবে আরও পরে।

প্রথম আলো   কর্ণফুলী গ্রুপ   ট্রান্সকম গ্রুপ  


মন্তব্য করুন


প্রেস ইনসাইড

ট্রান্সকমের বিরোধ: বিক্রি হচ্ছে প্রথম আলো?

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ট্রান্সকম গ্রুপের পারিবারিক বিরোধের কারণে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে—এমন গুঞ্জন এখন মিডিয়া পাড়ায়। বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে যে, মামলার সমঝোতা করতে গিয়ে দুই বোন একটি আপস ফর্মুলা আসার চেষ্টা করছে এবং সেই আপস ফর্মুলা অংশ হিসেবে তারা কিছু প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন। এই পরিকল্পনা যদি শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত হয় তাহলে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাবে। 

ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকানাধীন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এই দৈনিক পত্রিকাটিকে কেনার জন্য অন্তত দুজনের আগ্রহের কথা শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে অন্যতম হল দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরা। অন্যজন হলেন বর্তমান পরিবেশ পরিবেশ এবং জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর কর্ণফুলী গ্রুপ। 

উল্লেখ্য, ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত লতিফুর রহমানের মৃত্যুর পর তাদের দুই বোনের বিরোধ এখন আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। গত পয়লা ফেব্রুয়ারি লতিফুর রহমানের ছোট মেয়ে শাজরেহ হক ট্রান্সকম গ্রুপের সিইও এবং তার বড় বোন সিমিন রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত, প্রতারণা এবং শেয়ার জালিয়াতের মামলা করেন। এই মামলায় তিনি তার মা, বোন, ভাগ্নে সহ আটজনকে অভিযুক্ত করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত, সম্পত্তি দখল এবং শেয়ার হস্তান্তরের অভিযোগ আনেন। এই অভিযোগ এখন তদন্ত করছে পিবিআই। 

অভিযোগে বলা হয়েছে, জাল জালিয়াতি করে শেয়ার হস্তান্তর করা হয়েছে। কোনো দলিলে তিনি সই করেননি। অথচ তার এবং ভাইয়ের নামে যে শেয়ার দেওয়া হয়েছে তার প্রায় দ্বিগুণ শেয়ার আছে সিমিনের নামে। এরপর ২২ মার্চ শাজরেহ হক আরেকটি মামলা করেন, যেখানে তিনি তার ভাইকে হত্যার অভিযোগ আনেন। এতে আসামি করা হয় বোন সিমিন রহমান এবং যারাইফ আয়াত হোসেনসহ ১১ জনকে। মাকে এই মামলার আসামি করেননি। 

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ১৬ জুন গুলশানের বাসায় নিজের শোবার ঘরে মারা যান সিমিন এবং শাজরেহের ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমান। তিনি নিঃসন্তান এবং তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল। আর এই হত্যা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, সিমিন রহমান এবং অন্যরা যোগসাজশ করে তার ভাইকে হত্যা করেছে। আর এই মামলায় ইতিমধ্যে সিমিন রহমান আদালতে গিয়ে জামিন নিয়েছেন। 

পারিবারিক বিরোধের কারণে ট্রান্সকম গ্রুপের অবস্থা যখন টলটলয়মান ঠিক সেই সময় ট্রান্সকম নিয়ন্ত্রিত দেশের অন্যতম প্রভাবশালী দৈনিক প্রথম আলো বিক্রির গুঞ্জন উঠেছে। উল্লেখ্য, ট্রান্সকম গ্রুপের পরিচালক হিসাবে এখনও মেয়ে শাজরেহ হক রয়েছেন। পারিবারিক বিরোধের কারণে বিভিন্ন সম্পত্তিগুলো তারা ভাগ বাটোয়ারা করার চেষ্টা করছেন। আদালতের বাইরে এই বিরোধ মেটানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন মা শাহানাজ রহমান। তিনি দুই বোনের সঙ্গে কথা বলছেন এবং বিষয়টি মীসাংসা করার চেষ্টা করছেন। এমনকি সম্পত্তিগুলো ভাগ বাটোয়ারা করার ক্ষেত্রেও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যেতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্র আভাস দিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে প্রথম আলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে কেউই কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

ট্রান্সকম গ্রুপ   প্রথম আলো  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন