ইনসাইড বাংলাদেশ

জঙ্গিগোষ্ঠী আরসা কি বাংলাদেশের নতুন মাথাব্যথা?


প্রকাশ: 24/12/2021


Thumbnail

মিয়ানমারের সেনা অভিযানের নির্যাতনকে পুঁজি করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নতুন করে সক্রিয় হচ্ছে উগ্রপন্থি দলগুলো। বিশেষ করে মিয়ানমারভিত্তিক 'উগ্রপন্থি' সংগঠন আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা)  ক্যাম্পগুলোতে উপস্থিতি নিয়ে অনেকেই ভয়ার্ত, শঙ্কিত। ইতোমধ্যে আরসা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে তাদের নিজস্ব মুদ্রা ছেড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গ্রুপ খুলে এ মুদ্রার পক্ষে প্রচারণাও শুরু করেছে তারা। প্রাথমিকভাবে কয়েকটি ক্যাম্পে এ মুদ্রা চালু হয়েছে। অচিরেই প্রত্যেক শরণার্থী ক্যাম্পে এ মুদ্রা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। মিয়ানমার সরকার এরই মধ্যে আরসাকে 'সন্ত্রাসী' সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিলেও বাংলাদেশে আশ্রিত অধিকাংশ রোহিঙ্গা বিশ্বাস করে যে, আরসা গোপনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর স্বার্থেই কাজ করছে। এমতাবস্থায় আরসা বাংলাদেশের জন্য আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। 

কোনো দেশ প্রতিষ্ঠা লাভের পর সাধারণত নিজস্ব মুদ্রানীতি চালু করে থাকে। কিন্তু একটি জঙ্গি সংগঠনের নিজস্ব মুদ্রানীতি চালু করার বিষয়টি সন্দেহজনক এবং একই সাথে ভয়াবহও বটে। জানা গেছে, কয়েক মাস আগ থেকেই আরসার সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন মুদ্রার বিষয়ে প্রচারণা চালিয়ে আসছিল। ইতোমধ্যে নতুন মুদ্রা দিয়ে বিনিময় শুরু হয়েছে  কিছু কিছু ক্যাম্পে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই আরসার নিয়ন্ত্রণাধীন ক্যাম্পগুলোতে নতুন মুদ্রা দিয়ে বিনিময় পুরোদমে শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ১ হাজার, ৫০০ এবং ১০০ টাকার নতুন নোট ছেড়েছে আরসা। আর এসব নোটে শোভা পাচ্ছে আরসার নেতা আতাউল্লাহর ছবি। এছাড়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে অধিপত্য বিস্তারেও তৎপর আরসা। জঙ্গি এ সংগঠনটি মিয়ানমার থেকে মাদক ও অস্ত্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিয়ে আসছে। পাশাপাশি তারা টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তকে ব্যবহার করে গুম, খুনসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বিপরীতে তাদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে দেশি-বিদেশি কয়েকটি এনজিওর বিরুদ্ধে। দেশ-বিদেশে অবস্থান করা ষড়যন্ত্রকারীদের মদদে তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় চরম হুমকি তৈরি করছে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
 
অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে জঙ্গি সংগঠন আরসাসহ আরেক সংগঠন আরএসওর তৎপরতা নিয়ে উদ্বেগজনক বেশকিছু তথ্য উঠে এসেছে। বিশেষ করে এ বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়ায় ক্যাম্পের ভেতরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। তিনি আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার মৃত্যুর পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে গোয়েন্দারা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের বিতর্কিত এ দুই সংগঠন বিভিন্ন ধরনের নাশকতা ও হামলার ছক কষছে। কক্সবাজার অঞ্চলে কোনো কোনো পুলিশ চেকপোস্টে হামলা চালিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পারে, এমন শঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। এমনকি দেশি-বিদেশি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আরসা-আরএসওর জড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তীক্ষষ্ট নজর রাখা হচ্ছে। তাই দুটি সংগঠনের কর্মকাণ্ডের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেওয়া হয় প্রতিবেদনে। এ জন্য গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর তাগিদও দেওয়া হয়েছে। 

নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠালাভ করা জঙ্গি সংগঠনগুলো মাঝখানে মিলিয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে গুলশানের হলি আর্টিজেন ঘটার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার ফলে জঙ্গিগোষ্ঠী প্রায় নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। মরে গিয়েছিল। সেখান থেকে এখন এই রোহিঙ্গা, আরসা ও অন্যান্য উগ্র জঙ্গি সংগঠনগুলো যে ধরণের তৎপরতা চালাচ্ছে, এই তৎপরতার কারণে জঙ্গিবাদের নতুন করে উত্থান ঘটছে। এসব সংগঠনগুলোর সঙ্গে জঙ্গিদের একটি নেটওয়ার্ক পেয়েছে গোয়েন্দারা। সরকারের উচিত মাথাচাড়া দেওয়ার আগে রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা। নইলে এসব সংগঠন বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে। রোহিঙ্গাদের উপর যদি আলাদা করে নজর না দেয়া যায়, তাহলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭