কালার ইনসাইড

জন্মদিনে আসহায়দের পাশে দাঁড়ালেন ইলিয়াস কাঞ্চন


প্রকাশ: 24/12/2021


Thumbnail

জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালক সুভাষ দত্তের হাত ধরে সিনেমার নায়ক হিসেবে অভিষেক হয়েছিলো ইলিয়াস কাঞ্চনের। সময়টা সত্তরের দশকের শেষের দিকে। সেই যে শুরু এরপর আর থেমে থাকেননি। আশির দশক ও নব্বই দশক দাপিয়ে বেড়িয়েছেন সিনেমার ইন্ড্রাস্ট্রি। হয়েছিলেন পর্দার সেরা নায়ক। আজ এই নায়কের জন্মদিন। বাংলা ইনসাইডারের পক্ষ থেকে রইলো জন্মদিনের শুভেচ্ছা। 

বরাবরই জন্মদিনে তেমন কোন আয়োজন রাখেন না ইলিয়াস কাঞ্চন। এমনকি তার জন্মদিনে ভক্তদের কেক না কাটার অনুরোধ জানান। কেক না কেটে সেই টাকা জমিয়ে অসহায় মানুষের কল্যানে খরচ করতে বলেন। প্রতিবারের মতো এবারের জন্মদিনেও কেক কাটেননি তিনি। তবে করেছেন বিশেষ আয়োজন। আর তা হলো জন্মদিনের টাকা দিয়ে শীত বস্ত্র বিতরণ করেন। 

শুক্রবার বিকেলে সেগুন বাগিচায় নিরাপদ সড়ক চাই'র প্রধান কার্যালয়ে প্রায় সারে তিনশো মানুষের মাঝে কম্বোল বিতরণ করেন ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ খ্যাত এ নায়ক। এসময় তার সঙ্গে দেখা দিয়েছে নায়িকা নিপুণ আক্তার ও নায়ক সাইমন সাদিককে। 

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সব সময় আমি বলি দেশটা স্বাধীন হয়েছে আমাদের সবার জন্য। কিছু মানুষ সুবিধা ভোগ করবে সেটার জন্য স্বাধীন হয়নি। আমরা ‘নিরাপদ সড়ক চাই’  অন্দোলনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীও কখনো কেক কেটে পালন করি না। ঐ টাকা জমিয়ে সাথে আরও কিছু টাকা নিজেরা যুক্ত করে পঙ্গু, সড়ক দূর্ঘটনায় আহত মানুষদের সহায়তা করি। আজ আমার জন্মদিন উপলক্ষে আমার ছোট ভাই-বোন নিপূণ ও সাইমন আমার সাথে যুক্ত  হয়ে প্রায় সারে তিনশো কম্বল গরীব, অসহায় মানুষদের দিচ্ছি।

বাংলাদেশের বৃহৎ সামাজিক আন্দোলন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। জন্মেছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায় আশুতিয়াপাড়া গ্রামে ১৯৫৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর। বাবার নাম হাজী আব্দুল আলী, মাতার নাম সরুফা খাতুন।

১৯৭৫ সালে কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন তিনি। কৈশোর থেকেই অভিনয় করতেন। যুক্ত ছিলেন নাট্য সংগঠনের সঙ্গে। কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক সুভাষ দত্তের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন ১৯৭৭ সালে। প্রথম সিনেমা ‘বসুন্ধরা’। সেই ছবিতে ববিতার বিপরীতে নায়ক হয়েছিলেন তিনি।

তিনি একই সাথে রোমান্টিক, অ্যাকশন, কমেডিয়ান ধাঁচের সিনেমা করেছেন। পরিবারের সুবোধ বালক হিসেবেও বেশ কিছু সিনেমায় দেখা গেছে তাঁকে। ৩০০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। ১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তাঁর অভিনীত ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ সিনেমাটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবসা সফল ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্র।

১৯৭৯ সালে জাহানারা কাঞ্চনকে বিয়ে করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর বান্দরবানে একটি চলচ্চিত্রের শুটিং করছিলেন তিনি। ঢাকা থেকে তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান তার কাছে আসছিলেন গাড়িতে। চট্টগ্রামের অদূরে চন্দনাইশের পথে একটি দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় ইলিয়াস কাঞ্চনের সব কিছু। সেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তার প্রিয়তমা স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন। এরপর শোকাহত ইলিয়াস কাঞ্চন ঘোষণা দেন চলচ্চিত্র জগত থেকে দূরে সরে যাওয়ার।

কিন্তু এক সময় শোককে শক্তিকে পরিণত করেন তিনি। নামেন রাস্তায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে। পর্দায় মানুষের দু:খ-দুর্দশা দুর করার জন্য নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হতেন মিছেমিছি। সেই পর্দার নায়ক এবার সত্যি সত্যিই আবির্ভূত হলেন বাস্তবের মহানায়ক হিসেবে। ২৬ বছর ধরে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। এ জন্য তাকে অনেকের চক্ষুশূলও হতে হয়েছে। পদে পদে বাধা-বিপত্তি এসেছে। এরপরও তিনি থেমে থাকেননি। এগিয়ে যাচ্ছেন সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করতে।

১৯৮৬ সালে তিনি পরিণীতা সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে যৌথভাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ২০০৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্র অভিনেতা হিসেবে শাস্তি সিনেমার জন্য জাতীয় পুরস্কার পান।  ২০১৮ সালে সমাজ সেবার জন্য তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭