ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন তারেক জিয়া


প্রকাশ: 24/12/2021


Thumbnail

কাগজে কলমে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। লন্ডনে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হেন ষড়যন্ত্র নাই যেটি তিনি করেন না। বাংলাদেশ থেকে তার জন্য টাকা পাচার হয়ে আসে। সেই পাচারকৃত টাকায় লন্ডনে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। তার রাজকীয় জীবনের জীবনযাপনের অর্থ কোত্থেকে আসে সেটি কেউ জানেনা। লন্ডনে তিনি প্রাসাদসম একটি বাড়িতে থাকেন, যে বাড়িটি তিনি কিনে নিয়েছেন। এই বাড়ি কেনার অর্থ তিনি কোথায় পেলেন সেটিও একটি বড় প্রশ্ন। তার বিলাসবহুল তিনটি গাড়ি এবং অন্যান্য খরচপাতি দেখে যে কেউ মনে করবেন তিনি বোধহয় সাক্ষাৎ বিলিয়নিয়ার। কিন্তু সবকিছুই পরিচালিত হয় লুটের টাকায়।

সম্প্রতি বাংলা ইনসাইডার তার সম্পর্কে অনুসন্ধান করে পেয়েছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। ব্রিটিশ কোম্পানি হাউজের তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, তারেক জিয়া এখন ব্রিটিশ নাগরিক। বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়ে ২০০৭ সালে তারেক লন্ডনে এসেছিলেন। এরপর তিনি ২০১৪ সালের পর পাসপোর্ট আর নবায়ন করেননি। এই সময় তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন। ২০১৮ সালের কোনো এক সময় তিনি ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন বলে নিশ্চিত তথ্য পেয়েছে বাংলা ইনসাইডার।

লন্ডনে এসে তিনি হোয়াইট এন্ড ব্লু কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ওই প্রতিষ্ঠানে তিনি হলেন একমাত্র পরিচালক। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, জালিয়াতি প্রতারণাসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। হোয়াইট এন্ড ব্লু কোম্পানির কর্ণধার হিসেবে তারেক জিয়া কোম্পানি হাউজে যে তথ্য দিয়েছেন তাতে তিনি নিজেকে ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আমরা অনুসন্ধান করে দেখেছি যে, এরকম কোম্পানি হাউজে যেকোনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যদি ভুল তথ্য দেয়া হয় সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দীর্ঘদিন ধরেই তারেক জিয়াকে দেশে নিয়ে আসার জন্য নানা রকম কথাবার্তা বলা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস কতটা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে এই নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশীদের। কারণ প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যে এলেই এনিয়ে দূতাবাস তোড়জোড় করে কিন্তু বাকি সময় দূতাবাসের কর্মকর্তাদের মধ্যে তারেক বিরোধী কোন প্রবণতা দেখা যায়নি। এমনকি তারেকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট যে পাঁচটি অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল বিভিন্ন সময়ে সেই অভিযোগগুলোকে এগিয়ে নেওয়া এবং অভিযোগগুলো নিয়ে ব্রিটিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রেও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসের চরম অনীহা। বরং দূতাবাসের কেউ কেউ গোপনে তারেক জিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন বলেও বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে। তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে দূতাবাসে হামলা, ভাঙচুর, দেশ বিরোধী অপতৎপরতা, জঙ্গিবাদ এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থের অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়াও বাংলাদেশে দুটি মামলায় দণ্ডিত হয়ে তারেক জিয়া পলাতক।

কাজেই তারেক জিয়াকে দেশে ফেরানোর জন্য যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ দূতাবাস যে উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিৎ সেই উদ্যোগ তারা গ্রহণ করেনি। এর সূত্র ধরেই বাংলা ইনসাইডারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, সমস্যাটা আসলে অন্য জায়গায়। তারেক জিয়া ২০১৮ সালের কোনো এক সময় ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। হোয়াইট এন্ড ব্লু কোম্পানিটি আসলে একটি কাগজে কোম্পানি। এটি একটি পিআর ফার্ম হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু মূল বিষয় হলো যে, তার অবৈধ অর্থকে বৈধ করাই এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কাজ। সম্প্রতি ব্রিটিশ অর্থ বিভাগ এই কোম্পানির ব্যাপারে অনুসন্ধান করেছে এবং তারেক জিয়ার একটি একাউন্ট স্থগিত করেছিল। কিন্তু অদৃশ্যভাবে তারেক জিয়া সেই অ্যাকাউন্টটিও পরে ছাড়িয়ে নিয়েছেন। হোয়াইট এন্ড ব্লু কোম্পানির কর্মতৎপরতা সম্পর্কেও কোনকিছু জানা যায়নি। যে অফিসের ঠিকানা এখানে ব্যবহার করা হয়েছে এখন সেই অফিসটি হচ্ছে না বলেও জানা গেছে।

ব্রিটিশ নাগরিক হওয়ার পরও তারেক জিয়া কিভাবে বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে সেটি যেমন প্রশ্ন, তারচেয়েও বড় প্রশ্ন হলো যে, রাজনৈতিক আশ্রয়ে এসে কীভাবে তিনি ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেলেন। তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, ব্রিটেনের আইন অনুযায়ী কেউ যদি স্থায়ীভাবে ১০ বছর বসবাস করেন তাহলে তিনি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। সে আবেদন বিবেচনা করা না করা ব্রিটিশ সরকারের বিষয়। কাজেই ২০০৭ সালে আসা তারেক জিয়ার ২০১৭ সালে ১০ বছর পূর্ণ হয় এবং তারপরই তিনি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে যে, ২০১৭ সালের শেষদিকে তিনি প্রথম তাঁর কন্যা জাইমা রহমানের নামে আবেদন করেন। তারপর তিনি তার স্ত্রীর নামে স্থায়ী বসবাসের আবেদন করেন এবং সর্বশেষ তারেক জিয়া এই আবেদন করেছেন -এমন তথ্য সম্পর্কে বাংলা ইনসাইডার নিশ্চিত হয়েছে। তবে একজন দণ্ডিত অপরাধীকে ব্রিটিশ সরকার নাগরিকত্ব দিলো কিভাবে সেটি একটি প্রশ্ন।

তবে ব্রিটেনের একজন এটর্নি বলেছেন, সম্ভবত তিনি নাগরিকত্ব পাননি, তিনি পিআর পেয়েছেন। পিআর মানে পার্মানেন্ট রেসিডেন্স। কোন ব্যক্তি স্থায়ীভাবে বসবাস করলে তাকে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেয়া হয়, সেটি হলো পিআর। তবে তারেক জিয়ার এই তথ্য প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশে তার আর ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা নাই। রাজনৈতিক পরিচয় তারেক জিয়া এখন ব্যবহার করছেন শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭