ইনসাইড পলিটিক্স

রাষ্ট্রপতির সংলাপ: বিভক্ত বিএনপি


প্রকাশ: 24/12/2021


Thumbnail

রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছেন। এই সংলাপে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে যে, বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে পরে আমন্ত্রণ জানানো হবে। বিএনপি যে রাষ্ট্রপতির সংলাপে যাবার আমন্ত্রণ পাচ্ছে এটি নিয়ে কোনো সংশয় নেই বলে বঙ্গভবনের একজন মুখপাত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু সংলাপে বিএনপির যাবে কিনা এ নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। ইতিমধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংলাপকে নাটক বলেছেন এবং এই ধরনের সংলাপের সমালোচনা করেছেন। প্রকাশ্য সমালোচনা করলে কি হবে, বিএনপির মধ্যে অনেকেই সংলাপের সুযোগ গ্রহণের পক্ষপাতী। বিশেষ করে যখন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি একটি বড় ইস্যু এবং বিএনপির প্রধান দাবি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, সেজন্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের সুযোগটিকে তারা কাজে লাগাতে চায়। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সুস্পষ্ট বিভক্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিল। সেই ঐক্যফ্রন্টের নেতা ছিলেন ড. কামাল হোসেন। তিনি নির্বাচনের আগে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করার জন্য সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। এই সময় নাটকীয়ভাবে প্রধানমন্ত্রী সংলাপের প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং সবগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন। 

তারও আগে ২০১৪ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে সংলাপের জন্য গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া সেই গণভবনের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন। এবার সংলাপ হচ্ছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া কি হওয়া উচিত সে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণ করছেন। জানা গেছে যে, এই মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি একটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করবেন। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে দুটি পদ্ধতি এখন আলোচিত হচ্ছে। একটি আইন প্রণয়ন করা, আরেকটি সার্চ কমিটি গঠন করা। যদিও আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন যে, এই মুহূর্তে আইন প্রণয়ন করা অত্যন্ত কষ্টকর। পরবর্তী নির্বাচন কমিশন হয়তো আইনের দ্বারা হবে তবে এবারের নির্বাচন কমিশন সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠন হতে পারে বলেই তিনি ইঙ্গিত করেছেন। যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন গঠন হোক না কেন সেই নির্বাচন কমিশন যেন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এ কারণেই রাষ্ট্রপতির সংলাপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো সংলাপে বিএনপির যোগদান করা।

বিএনপির মধ্যে সংলাপের যোগদান নিয়ে দুই ধরনের মতামত পাওয়া যাচ্ছে। এক ধরনের মতামতে নেতৃবৃন্দ মনে করছেন যে, এইসব সংলাপের যাওয়া মানে সরকারকে বৈধতা দেওয়া এবং এসব সংলাপের মাধ্যমে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে সে নির্বাচন কমিশনকে সংলাপে গিয়ে বিএনপি বৈধতা দিবে মাত্র। কাজেই বিএনপির সংলাপে যাওয়া উচিত হবে না। তারা মনে করছেন যে, নির্বাচন কমিশন প্রধান বিষয় নয়, প্রধান বিষয় হলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন না করে শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে বিএনপির এই অংশের নেতারা মনে করছেন। তাদের ধারণা যে, নির্বাচন কমিশন যেই হোক না কেন শেষ পর্যন্ত সরকারের তল্পিবাহকই হবে।  

তবে বিএনপির একটি বড় অংশ এরকম মতামতের সঙ্গে একমত নন। তাঁরা মনে করছেন যে, এই মুহূর্তে বিএনপির প্রধান ইস্যু হলো বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন করে তেমন কোন ফলপ্রসূ সমাধান পাওয়া যাবে না বলেই তারা মনে করেন। তারা মনে করেন, এজন্য সরকারের সঙ্গে একটি দেন-দরবার করতেই হবে। এই দেন-দরবারের ধরন প্রকৃতি নিয়েও নানামুখী আলোচনা আছে। তবে বিএনপির নেতৃবৃন্দ মনে করেন যে, রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপে গিয়ে যদি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুটি সামনে তুলে ধরা হয় তাহলে হয়তো একটি ইতিবাচক ফলাফল হবে। এটি সরকারের ওপর একটি চাপও তৈরি হতে পারে বলে বিএনপি নেতারা মনে করছেন। কৌশলগত কারণে বিএনপি নেতারা বলছেন যে, নির্বাচন কমিশন নিয়ে সংলাপ হলেও সেখানে আমরা যেকোনো ইস্যু নিয়ে কথা বলতে পারি এবং সেই ইস্যুর মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়া ইস্যুটিও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটেই শেষ পর্যন্ত সংলাপের ব্যাপারে নাটকীর সিদ্ধান্ত নিতে পারে বিএনপি এমনটি মনে করছেন অনেকে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭