ইনসাইড বাংলাদেশ

সালতামামি ২০২১: নিষ্প্রভ মন্ত্রিসভায় একমাত্র আলো শেখ হাসিনা


প্রকাশ: 24/12/2021


Thumbnail

টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত হয় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি। শেখ হাসিনা এবার মন্ত্রিসভা গঠনে আরেকদফা চমক দেখান। প্রথমত, তিনি মহাজোট বা ১৪ দলীয় শরীক কাউকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেনি। দ্বিতীয়ত, মন্ত্রিসভায় তিনি দলের সিনিয়র, হেভিওয়েট সমস্ত নেতাদেরকে বাদ দেন। এমনকি শেখ হাসিনার দুঃসময়ের সাথী বেগম মতিয়া চৌধুরী এই মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পায়নি। এরকম একটি আনকোরা নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনা। অনেকে প্রত্যাশা করেছিলেন যে, আওয়ামী লীগ সভাপতির এই চ্যালেঞ্জ সফল হবে এবং অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা তাদের যোগ্যতা প্রমাণের জন্য সবটুকু নিংড়ে দেবেন। কিন্তু বাস্তবতা দেখা গেছে ভিন্ন। গত তিন বছরে মন্ত্রিসভার কোন সদস্যকে খুব একটা আলোকিত দেখা যায়নি। বরং অধিকাংশ সদস্যই নিষ্প্রভ ছিলেন, তারা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে থেকেছেন। বিশেষ করে চলতি বিদায়ী বছরের মন্ত্রিসভা ছিলো একেবারেই নিষ্প্রভ। মন্ত্রীদের অধিকাংশই নানারকম বিতর্কে জড়িয়েছেন, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করা ছাড়া মন্ত্রীরা জনগণকে কোনো আলাদা ভাবমূর্তি দিতে পেরেছেন, এমনটি সাধারণ মানুষ মনে করে না।

বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যরা ২০২১ সালে নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ সমস্ত বিতর্কের মধ্যে রয়েছে:

১. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে রোজিনা বিতর্ক: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি নথিকে কেন্দ্র করে প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটক রাখা হয় ৬ ঘণ্টা, তারপর তাকে থানায় দেওয়া হয়। রোজিনা জেলে যান। এটি এই ঘটনাটি সারা বাংলাদেশে তোলপাড় তৈরি করে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে খামচি তত্ত্ব আবিষ্কার করে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। শুধু রোজিনার ঘটনা নয়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী পুরো ২০২১ সালে নানা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। মন্ত্রণালয় থেকে নথি চুরি শুরু করে বিভিন্ন রকম নিয়োগ দুর্নীতি সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ বারবার তার বিরুদ্ধে উঠলেও তিনি বহাল তবিয়তে আছেন এবং সরকারের একজন বিতর্কিত মন্ত্রী হিসেবেই সমধিক আলোচিত।

২. দ্রব্যমূল্য বিতর্ক: বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীও পুরো বছর জুড়ে বিভিন্ন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে নানারকম বিতর্কে জড়িয়েছেন। বিশেষ করে পেঁয়াজের দাম নিয়ে তিনি নিজেই তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। এ কারণে বাণিজ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন।

৩. মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিল করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সেই সিদ্ধান্ত কি হলো জানিনা। তিনি বলেছিলেন যে, চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবর থাকবে না, সে ব্যাপারে কোনো সমাধান হয়নি। রাজাকারদের তালিকা নিয়ে যে বিতর্ক সেই বিতর্কে অবসান হয়নি। বরং মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে নিত্য নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কাজের চেয়ে রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করে তিনি নানারকমভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন।

৪. ডাক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার: ডাক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী। একসময় জাসদের তাত্ত্বিক ছিলেন, এখন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী হয়ে তিনি নানা রকম বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন উপলক্ষে ডাকটিকিট বিতর্কের কথা বাদই দিলাম। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে বিরামহীন অপপ্রচার বন্ধে তার মন্ত্রণালয় কি করেছে এই নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রচুর প্রশ্ন রয়েছে। অবশ্য এসব সত্ত্বেও মোস্তফা জব্বার তার মন্ত্রণালয়ে বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন।

৫. পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন প্রায় অলৌকিকভাবে। দায়িত্ব পেয়ে তিনি কাজের চেয়ে কথায় যে বেশি পারদর্শী তা বারবার প্রমাণ করেছেন। ইতিমধ্যে ভারত সাথে সম্পর্ক নিয়ে নানারকম গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। হঠাৎ করে বাংলাদেশের কূটনীতিতে পাকিস্তান প্রেম স্পষ্ট হচ্ছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য এবং বাস্তবতার মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।

সার্বিক বিবেচনায় মন্ত্রিসভার কোনো মন্ত্রীকে সপ্রতিভ, উদ্ভাবনী মেধাসম্পন্ন এবং দায়িত্বশীল হিসেবে দেখা যায়নি। বরং মন্ত্রীরা রুটিন কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই পুরো মন্ত্রিসভার একমাত্র আলো শেখ হাসিনা। তিনি যেন সরকারকে একা বিভিন্ন সংকট থেকে টেনে তুলছেন, এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার জন্যই ২০২১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারকে ব্যর্থ বলা যাবে না। বরং অন্যান্য দেশের বাস্তবতায় বাংলাদেশ অনেক ভালো অবস্থানে আছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭