ইনসাইড থট

ক্ষমা প্রার্থী, আনিসুল হক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/12/2017


Thumbnail

শেষ পর্যন্ত সব গুজবের অবসান হলো। আনিসুল হক পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। মরে তিনি প্রমাণ করলেন তাকে নিয়ে যা ছড়ানো হয়েছিল সেসব স্রেফ গুজব, অপপ্রচার। এ যেন সেই উক্তির মতোই, ‘কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই।’ আনিসুল হকও মৃত্যু দিয়ে প্রমাণ করলেন, তাঁকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের যেসব গল্প ফাঁদা হয়েছিল সেগুলো ভয়ংকর মিথ্যা, দায়িত্বজ্ঞানহীন অপপ্রচার।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ডিজিটাল বাংলাদেশ চালু করেছে। স্মার্ট ফোন হাতে হাতে, ফেসবুক এখন ঘরে ঘরে। একেকটা ফেসবুক যেন একেকটা বোমা। একেকটা গুজব ছড়ানোর মেশিন। আওয়ামী লীগ ইন্টারনেট ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে, আর এর সুযোগটা নিচ্ছে জামাত এবং স্বাধীনতা বিরোধী দুর্বৃত্তরা। সোশাল মিডিয়া এখন এদের নিয়ন্ত্রণে, এরা লাগাতার বিরামহীন অপপ্রচারে লিপ্ত। সরকার এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে এরা পরিকল্পিত সাইবার যুদ্ধ চালাচ্ছে। এদের নিখুঁত মিথ্যাচারে সত্য মিথ্যা একাকার হয়ে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণহীন বিভিন্ন ব্লগ এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে যেসব অসত্য প্রোপাগান্ডা করা হচ্ছে সেগুলো না পড়লে বিশ্বাস করা যায় না। এই আক্রমণের স্বীকার প্রগতিশীল মুক্তিযুদ্ধের চর্চারত প্রতিটি মানুষ। এধরনের মিথ্যাচারের সবচেয়ে বড় উদাহারণ সম্ভবত আনিসুল হক।

২৯ জুলাই আনিসুল হক পারিবারিক সফরে লন্ডনে যান। সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ব্যস, এরপর থেকে আনিসুল হককে নিয়ে কতরকম মিথ্যাচার, তা হিসেব করে শেষ করা যাবেনা। শেষ দিকে অনেক বিজ্ঞজনও একান্ত আলাপচারিতায় জানতে চাইতেন, আচ্ছা আনিসুল হক কি করেছিল? তিনি নাকি অসুস্থ নন? প্রধানমন্ত্রীর সাথে নাকি তার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে? এরকম প্রশ্ন শুনে আমার নিজেরও বিশ্বাস হয়েছিল। সত্যি কি কিছু হয়েছিল? আনিসুল হক চলে গিয়ে প্রমাণ করলেন, এসবই ছিলো নোংরা অপপ্রচার।

৩০ নভেম্বর মৃত্যুর আগে আনিসুল হককে বার কয়েক মেরে ফেলা হয়েছিল। মৃত্যুর তিনদিন আগে তো সোশ্যাল মিডিয়া নয় মূলধারার গণমাধ্যমের একটি টেলিভিশন চ্যানেল তার মৃত্যুর খবর ব্রেকিং নিউজ হিসেবে প্রচার করেছিল। চলে গিয়ে তিনি সব গুজব সব বিতর্কের অবসান ঘটালেন।

নিজেকেই প্রশ্ন করি, আনিসুল হক কে নিয়ে এসব গুজবের কারণ কি? আনিসুল হকের মৃত্যর পর এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে জলের মতো পরিস্কার হয়ে গেলো। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মানুষ সরকারে খুবই কম। আনিসুল হক তাঁর স্বল্প মেয়াদে প্রমাণ করেছিলেন যে, তিনি স্বপ্ন পূরণের কাজে পারদর্শী। তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ, গাবতলীতে যানজট পরিস্কার কিংবা গুলশান বনানীকে ঢেলে সাজানো-এসব কাজই ঈর্ষা জাগানিয়া। দ্রুত ঢাকাকে তিনি পাল্টে ফেলছিলেন। যে পাল্টে ফেলার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের দূরদর্শী কৌশল ছিলো। মেয়র ভবনকে তিনি রাজনৈতিক আখড়া থেকে বের করে একটা সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান বানাতে চেয়েছিলেন।

আনিসুল হককে আওয়ামী লীগের লোকজন খুব একটা পছন্দ করতো না। এজন্য গুজব গুলো ডাল পালা মেলার সুযোগ পেয়েছিল। তাঁর কাজের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি বরং আমরা ছিদ্রান্বেষণ করছি। আজ যখন তিনি সব বিতর্কের আড়ালে চলে গেছেন, যখন কোন কুৎসা তাকে ছুঁবে না তখন আমি একান্তে বলতে চাই ‘দু:খিত আনিসুল হক, আমরা আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমরা আপনার প্রতি ন্যায় বিচার করতে পারিনি।

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭