ইনসাইড বাংলাদেশ

নতুন কূটনৈতিক বলয়ে বাংলাদেশ


প্রকাশ: 25/12/2021


Thumbnail

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে নানামুখী আলোচনা হচ্ছে কূটনৈতিক মহলে। বিশেষ করে সাত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানো ইত্যাদির প্রেক্ষাপটে অভিজিৎ এর হত্যাকারীদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা কূটনৈতিক মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সম্পর্কে এখন নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে। এই নেতিবাচক মনোভাবের ফলে বাংলাদেশের ওপর কি প্রতিক্রিয়া হবে এবং বাংলাদেশ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে নানারকম জল্পনা-কল্পনা চলছে। যদিও কূটনৈতিক মহল বলছে যে, আগের বাংলাদেশ আর এই বাংলাদেশ এক নয়। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা বা নেতিবাচক মনোভাব বাংলাদেশের ওপর কোন বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া ফেলবে না বলেই কেউ কেউ মনে করছেন। আবার অনেকে মনে করছেন যে, এটি বাংলাদেশের ওপর সুদূরপ্রসারী ফলাফল বয়ে আনবে। কিন্তু এই বিতর্কের মধ্যে লক্ষণীয় ব্যাপার হলো যে, বাংলাদেশ কূটনীতিতে একটি আলাদা বলয় তৈরি করেছে এবং এই বলয়টি পশ্চিমা বিশ্ব থেকে আলাদা। বাংলাদেশ গত ১২ বছরের সুস্পষ্টভাবে তার কাছের বন্ধু এবং স্বজনদেরকে চিহ্নিত করেছে। যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোর কথায় বাংলাদেশ খুব একটা প্রতিক্রিয়া দেখায় না। আনুষ্ঠানিকভাবে তারা এই নেতিবাচক মন্তব্যের প্রতিবাদ জানায় মাত্র।

ভারত: গত ১৩ বছরে বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক উন্নয়ন করেছে ভারতের সাথে। ভারত এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটতম বন্ধু হিসেবে পরিচিত। যদিও দু'দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনের কথা শোনা যায়। কিন্তু এই টানাপোড়েন শর্তেও বাংলাদেশই ভারতের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী এবং এই ধারা বাংলাদেশ অব্যাহত রাখতে চায়। বিশেষ করে বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ জানানো কিংবা আগামী ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানোর মধ্য দিয়ে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক একই উচ্চতায় আছে।

চীন: চীনের সঙ্গে গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে একটি অভাবনীয় সম্পর্ক তৈরি করেছে এবং দুই দেশ এখন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রধান পার্টনার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সবগুলো মেগা প্রকল্পে চীন অংশগ্রহণ করছে এবং এটির কারণে বাংলাদেশ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে চক্ষুশূল হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। আবার এটির ফলে বাংলাদেশে পশ্চিমা চোখ রাঙানি এড়াতে পারছেন বলেও কেউ কেউ মনে করেন।

সোভিয়েত ইউনিয়ন: সোভিয়েত ইউনিয়ন বর্তমান রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ গত ১৩ বছরে অত্যন্ত সুসম্পর্ক করেছে। রাশিয়া বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মিত্র। সে কারণে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরই রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প সহ বিভিন্ন রাশির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করছে এবং দুই দেশের সম্পর্ক এখন অনেক বেশি গভীর।

মধ্যপ্রাচ্য: বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে একটি সুসম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এবং এই উদ্যোগের বাস্তব প্রতিফলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। যার ফলে বাংলাদেশে এখন পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর অতটা আগের মত নির্ভরশীল নয়।

জাপান: জাপান বাংলাদেশের একাত্তরের আরেক বন্ধু এবং জাপানের সঙ্গেও বাংলাদেশ এখন সম্পর্ক উন্নয়ন করেছে এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জাপান বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সহযোগী।

তুরস্কসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো: বাংলাদেশ গত ১৩ বছরে তুরস্কসহ নতুন যে দেশগুলো উন্নত হচ্ছে সে দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বিনির্মাণ করেছে।

ফলে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবয়ব এবং বন্ধু বদল হয়েছে। যে কারণে পশ্চিমা দেশগুলো বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের এক ধরনের দূরত্ব যেমন তৈরি হয়েছে, তেমনি নির্ভরশীলতাও কমেছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭