ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপি: কাগজে ঐক্যবদ্ধ, বাস্তবে বিভক্ত


প্রকাশ: 26/12/2021


Thumbnail

বিএনপি যতই আন্দোলনমুখী হচ্ছে ততই দলটির বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিচ্ছে। ইতিমধ্যে দলটি বাস্তবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার অনুসারীরা এবং তার পক্ষের লোকজন আলাদাভাবে বৈঠক করছেন। অন্যদিকে দলের অন্যতম সিনিয়র নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন তার বাসভবনে বিএনপির আরেক গ্রুপের নিয়মিত বৈঠক করছেন এবং রাজনৈতিক কৌশল সম্পর্কে আলাপ আলোচনা করছেন। কাগজে-কলমে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ থাকলেও বাস্তবে দলটির বিভক্তি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আর এ বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে খুলনার বিএনপির অন্যতম প্রভাবশালী জনপ্রিয় নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অব্যাহতির মধ্যে দিয়ে। তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী ভালোভাবে নেয়নি। শুধু নজরুল ইসলাম মঞ্জু নয়, এর আগে বিএনপি নেতা শওকত মাহমুদ এবং মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। এমনকি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নেতা মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধেও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। এই বিষয়গুলো নিয়ে বিএনপিতে দীর্ঘদিন ধরে উত্তাপ-উত্তেজনা চলছিল। কিন্তু যেহেতু বিএনপি কোনরকম কর্মসূচির মধ্যে ছিলো না, সেই জন্য এই ধরনের বিভক্তি এবং মতপার্থক্য গুলো প্রকাশ্য রূপ নেয়নি। কিন্তু এখন যখন বিএনপি প্রকাশ্য আন্দোলনের পক্ষে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশে বক্তব্য রাখছে তখন বিএনপিতে বিভক্তি গুলো প্রকাশ্য রূপ ধারণ করছে।

সম্প্রতি ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাসভবনে বিএনপির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই বৈঠকে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়া নিয়ে বিএনপি ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে বলেও কয়েকজন নেতা মন্তব্য করেছেন। তাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, এই রকম আন্দোলন করলে বেগম জিয়ার মুক্তিও যেমন হবে না, তেমনি সরকারের পতন হবে না বলে এক বিবৃতিতে তারা মন্তব্য করেন। তারা মনে করছেন যে, বিএনপিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে হলে যে জনপ্রিয়, দক্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ তাদেরকে গলাটিপে হত্যা করা হচ্ছে এবং তাদেরকে কাজে লাগানো হচ্ছে না। অন্যদিকে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অনুসারীরা মনে করছেন যে, ধাপে ধাপে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। খালেদা জিয়ার ইস্যুটি একটি ইস্যু মাত্র, এই ইস্যুটিকে ধরে সংগঠন গোছাতে হবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনপন্থীদের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরপন্থীরা মনে করছেন যে, সংগঠন গোছানোই হলো প্রধান কাজ। আগে সংগঠন গোছাতে হবে, তারপর ধাপে ধাপে আন্দোলন করতে হবে। অন্যদিকে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনপন্থীরা মনে করছেন যে, সংগঠন গোছানোর সময় এখন নেই। এখনই চূড়ান্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আর এ কারণেই তারা মনে করেন যে, কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সরকার পতনের আন্দোলনকে একসূত্রে গাঁথা হবে।

কিন্তু বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররাই হলেন তারেক জিয়ার অনুসারী এবং তারেক জিয়া যে যেরকম নির্দেশ দিচ্ছেন তারা সেটি প্রতিফলন করছেন। ফলে বিএনপির আসলে তারেক জিয়া বনাম আন্দোলন প্রত্যাশীদের মধ্যে বলে মনে করা হচ্ছে। তারেক জিয়া এই আন্দোলনকে দীর্ঘমেয়াদী করে আগামী নির্বাচনে একটি বড় ধরনের আন্দোলনের পক্ষে। এর সঙ্গে দেশি-বিদেশি নানা চক্রান্তকে যুক্ত করে নির্বাচনের আগে সরকারকে অকার্যকর করতে চায়। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীরা মনে করেন যে, তারেক জিয়া অতীতে বিভিন্ন ফর্মুলা দিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। এবারেও তার ফর্মুলা গুলো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। এ ধরনের পদক্ষেপ কখনোই বিএনপি'র জন্য ইতিবাচক ফলাফল আনবেনা বলে তারা মনে করেন। ফলে যত আন্দোলনের সময় বাড়বে বিএনপির মধ্যে বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিবে। এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি যেকোনো সময় বিভক্ত হয়ে যেতে পারে বলেও কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭