ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপিতে তারেক-ফখরুলের প্রতি গণঅনাস্থা


প্রকাশ: 27/12/2021


Thumbnail

বিএনপিতে এখন গণপদত্যাগের হিড়িক শুরু হয়েছে। খুলনায় ৫৬১ জন পদত্যাগ করেছে, এর আগে ঢাকায় ১৫৪ জন পদত্যাগ করেছিলো, চট্টগ্রামে পদত্যাগ করেছে ৭৫ জন। আর নারায়ণগঞ্জে ৫১ জন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন দলের চেয়ারপারসনের বরাবরে। আর এই সবকিছু নিয়ে বিএনপিতে এখন টালমাটাল অবস্থা চলছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে, বিএনপিতে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার নেতাকর্মী গণপদত্যাগের জন্য নোটিশ দিয়েছেন। এর আগেও বিএনপিতে গণপদত্যাগের ঘটনা ঘটেছিল, তবে এবারের মত ব্যাপক মহামারী আকারে গণপদত্যাগের ঘটনা ঘটেনি। কেন এবার গণপদত্যাগের ঘটনা ঘটলো, এর উত্তরে বিএনপিতে নানা রকম মন্তব্য পাওয়া গেছে। তবে সবচেয়ে বড় বক্তব্য যেটি এসেছে তা হলো তারেক এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতি অনাস্থা।

বিএনপি নেতারা এখন প্রকাশ্যে বলেছেন যে, তারেক জিয়া এখন বিএনপির কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার জন্যই ব্যস্ত। তিনি যেভাবে দল পরিচালনা করছেন তাতে এই দলের কোনো ভবিষ্যৎ নেই এবং এই দলটি আস্তে আস্তে নিঃশেষিত হবে। বিএনপির অন্য একজন নেতা বলেছেন, তারেক জিয়া এখানে বিএনপিকে তাঁর টাকা উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন, আর অন্যদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হোসেন তার ক্যাশিয়ার। দলকে ভুল পথে পরিচালিত করা হচ্ছে, যার মাশুল দিতে হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়াকে। প্রকাশ্যেই বিএনপি নেতারা মনে করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার এই পরিণতির জন্য তারেক জিয়া এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই দায়ী। তারা বেগম খালেদা জিয়ার লাশের ওপর রাজনীতি করতে চাইছেন। এ জন্যই এই রকম আন্দোলনের নাটক করছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। কেন তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় এ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হচ্ছে বিএনপিতে। বলা হচ্ছে সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নজরুল ইসলাম মঞ্জু জানতে চেয়েছেন, সংগঠনের কোন শৃঙ্খলা তিনি ভঙ্গ করেছেন। তাছাড়া শুধু নজরুল ইসলাম মঞ্জু নয়, বেছে বেছে গুরুত্বপূর্ণ এবং মাঠের কর্মীদেরকে বাদ দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ বিএনপিতে যারাই দলের পক্ষে তীব্র আন্দোলন গড়তে চায় বা দলের পক্ষে জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় তাদেরকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আওতায় আনা হচ্ছে। বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন যে, বিএনপি আসলে ততটুকই আন্দোলন করছে যতটুকুতে সরকার বাঁধা দেবে না বা সরকারের সায় আছে। আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যারা আন্দোলনকে বেগবান করতে চান, আন্দোলনের গতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান তাদেরকে বেছে বেছে দল থেকে বহিষ্কার করছেন, এটি মেনে নেওয়া যায় না।

উল্লেখ্য যে, আপাতদৃষ্টিতে এটি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ঘটনা বলে মনে হলেও বাস্তবতা হলো ভিন্ন। বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই তারেক জিয়া এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরোধী একটি অবস্থান ছিলো। এর আগে মির্জা আব্বাসকে কারণ দর্শানো নোটিশের ফলেও ঢাকা মহানগরীতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল। পরবর্তীতে ওই অবস্থান থেকে তারেক-ফখরুল জুটি সরে আসলেও এনিয়ে অস্বস্তি বিএনপিতে এখনো কাটেনি। বিএনপি নেতারা বলছেন যে, সামনে যতই আন্দোলনের সময় আসছে ততই বিএনপির মধ্যে বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ ধারণ করছে। বিশেষ করে তারেক জিয়া এবং ফখরুল যে বিএনপিতে অনুপযুক্ত এবং বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই, এ বিষয়টি প্রকাশ্যে হয়ে উঠছে। আর ফলে পুরো বিএনপির মধ্যেই একটি অস্থিতিশীলতা এবং নৈরাজ্য তৈরি হচ্ছে। বিএনপিতে নেতারাই বলছেন যে, সামনের দিনগুলোতে অনেক সিনিয়র নেতাও যদি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন তাহলে অবাক হবার কিছু নাই। কারণ, বিএনপিতে কোন ব্যক্তিত্ববানরা আর রাজনীতি করতে পারবে না। বিশেষ করে তারেক জিয়া বিএনপি নেতাদের সাথে যে ভাষায় কথা বলেন তা রীতিমতো চাকর-বাকরের মত। তাছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি তার ন্যূনতম মমত্ববোধ এবং তার মুক্তির বিষয়ে ন্যূনতম পরিকল্পনা তারেক জিয়ার নেই। আর তারেক জিয়া যে নির্দেশ দিচ্ছেন তা বাস্তবায়ন করছেন ফখরুল। তাই বিএনপিতে গণঅনাস্থার একটা আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে তারেক এবং ফখরুলের বিরুদ্ধে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭