ইনসাইড পলিটিক্স

রিজভীর প্রশ্নের লা-জবাব ফখরুল


প্রকাশ: 28/12/2021


Thumbnail

বিএনপিতে বিতর্ক যেন থামছেই না। বিএনপি কেন আন্দোলন করছে, আন্দোলন থেকে বিএনপি কি অর্জন করতে চায় -এমন প্রশ্ন করেছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কয়েকদিন ধরে বিএনপিতে উত্তপ্ত বিতর্ক চলছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন আসলে কোন পথে, এই আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপি কি অর্জন করতে চায়, এই প্রশ্ন এখন উঠেছে বিএনপির মধ্যে। বিশেষ করে আন্দোলনের শুরুতেই বিএনপির বিভিন্ন ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না তৃণমূলের কর্মীরা। গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে এ নিয়ে কথা বলেন দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রুহুল কবির রিজভীর কাছে এসেছিলেন দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত কর্মীরা। তারা এসে জানতে চান যে, আমরা আসলে কি করতে চাচ্ছি। এভাবে আন্দোলন করলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিও হবেনা, অন্যদিকে সরকারেরও পতন হবে না। তাহলে এই আন্দোলনের অর্থ কি। বিএনপির অনেকেই মনে করছে যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০১৮ সালের মত আরেকটি ফাঁদ পেতেছেন। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি বিএনপিকে আবার নির্বাচনের গর্তে ফেলতে চান। সরকারের ফাঁদে পা দেয়ার জন্যই এই আন্দোলনের নাটক করছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন যে, বিএনপি যদি খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্যই আন্দোলন করতে চায় তাহলে সে আন্দোলন হতে হবে আরও জোরালো। এই প্রশ্নটি টেলিফোনে রুহুল কবির রিজভী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে করেন। তিনি বলেন যে, আমাদেরকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। আমরা কোথায় যাব, কতদূর আন্দোলন করবো এবং আমাদের গন্তব্য কি। যদি আমরা গন্তব্য ঠিক না করতে পারি তাহলে এ ধরনের আন্দোলনের নাটক দলকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কিন্তু  রুহুল কবির রিজভীর এই প্রশ্নের উত্তর দেননি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুধু রুহুল কবির রিজভীর প্রশ্নের উত্তর না, বিএনপির মধ্যে অনেক নেতাই আন্দোলনের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি চান। তারা জানতে চান যে, বিএনপি কি করতে চায়? বিএনপি কি খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়? খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন করা ভালো, নাকি সরকারের সাথে দেন-দরবার করা ভালো। বিএনপির মধ্যে অনেকেই মনে করেন যে, এখন যে বিএনপির অবস্থা সেই অবস্থায় আন্দোলন করে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি অসম্ভব ব্যাপার। আর তাই আন্দোলন না করে বরং সরকারের সাথে যদি একটি সমঝোতা করা যায় তাহলে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার একটা সম্ভাবনা হলেও হতে পারে। কিন্তু কোন অদৃশ্য ইশারায় খালেদা জিয়াকে জিম্মি করে দল গোছানো হচ্ছে, এই প্রশ্নের উত্তর মিলছে না বিএনপির অনেকেরই।

বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা বলছেন যে, এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে যেখানে খালেদা জিয়া জেল থেকেও বের হতে পারবেন না এবং বিএনপির অনেকে প্রত্যাশা করছেন, চাইছেন বেগম খালেদা জিয়ার যেন মৃত্যু হোক এবং মৃত্যু হওয়ার পর যেন বিএনপি আন্দোলন করতে পারে। অর্থাৎ খালেদা জিয়ার লাশের ওপর আন্দোলনের পরিকল্পনা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর করছেন। এই পরিকল্পনাটিকেই বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীরা মেনে নিতে পারছেন না। তাঁরা মনে করছেন যে, এটি অনৈতিক। খালেদা জিয়াকে যদি তারা বিদেশ পাঠাতে পারেন তারপরে আন্দোলনের প্রচুর সময় আছে। তাছাড়া এখনই সরকার পতনের আন্দোলনের কোন বাস্তব অবস্থা নেই বলেও বিএনপির অনেক নেতা মনে করছেন। সেজন্যই রুহুল কবির রিজভীর প্রশ্ন হঠাৎ করে আন্দোলন কেন? বিভিন্ন মহল মনে করে যে, এই আন্দোলনের পেছনে বিএনপির অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে। বিশেষ করে মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার অবস্থান পাকাপোক্ত করার জন্যই এই আন্দোলন করছেন বলে অনেকে মনে করে।

তবে বিএনপির সিনিয়র নেতারা মনে করেন যে, এই আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য হলো তারেক জিয়ার কর্তৃত্ব প্রদর্শন করা। বেগম খালেদা জিয়া যদি বেঁচেও থাকেন তাহলে তিনি কর্তৃত্বহীন একটি জীবন্ত লাশ হিসেবে বিএনপিতে থাকবেন, তার কোনো ক্ষমতা থাকবে না বিএনপিতে। সেই আয়োজন করার জন্যই এই আন্দোলন। এই আন্দোলনে তারেক জিয়ার তিন দিক থেকে লাভ। প্রথমত, বেগম খালেদা জিয়াকে যদি মুক্তি না দেয় তাহলে তিনি আন্দোলন করছেন, এই আন্দোলনকে আরো বেগবান করবেন। দ্বিতীয়ত, বেগম খালেদা জিয়া যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার লাশকে কেন্দ্র করে তারা রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করবেন। তৃতীয়ত, বেগম খালেদা জিয়াকে যদি বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয় তাহলেও তারেক জিয়া বিএনপির রাজনীতির পূর্ণ কর্তৃত্ব নিবেন। আর বিএনপির রাজনীতির পূর্ণ কর্তৃত্ব মানেই হলো অর্থের ভাণ্ডার।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭