ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা অধিকাংশই ত্যাগী, পরীক্ষিত


প্রকাশ: 29/12/2021


Thumbnail

চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয় জয়কার। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, প্রায় ৩৫ ভাগ এলাকায় বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক বিজয় হয়েছে ৫২ শতাংশ আর অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বাকি ইউনিয়ন পরিষদ গুলোতে নির্বাচিত হয়েছে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় বিপর্যয়। এ পর্যন্ত চারটি ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন  পরিষদ নির্বাচনে প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অনেক রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যারা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে কিন্তু এসব সত্ত্বেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহ কমেনি। বরং বিদ্রোহী প্রার্থীরা আরো বেশি জোর দিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছে। কেনো এই পরিস্থিতি এটি বিশ্লেষণ করছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এবং বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন।  

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে যে, যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের ৭০ থেকে ৮০ ভাগই দলের ত্যাগী,পরীক্ষিত নেতা। এরা বিভিন্ন সময়ে বঞ্চিত হয়েছেন, কখনো কিছু পাননি। এবার তারা চূড়ান্ত প্রতিবাদ করেছেন। বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে যে, আওয়ামী লীগের এমপি বা প্রভাবশালীরা দলের সুবিধাবাদী কাউকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা এমপিদের হাতে হেনস্তা হয়েছেন, অপমাণিত হয়েছেন। অগত্যা আওয়ামী লীগের ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা একাট্টা হয়েছেন, বৈঠক করেছেন এবং সব শেষে তাদের মধ্যে থেকে  যিনি জনপ্রিয় ব্যক্তি তাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনীত করেছেন। এটি স্বতঃস্ফূর্ত তৃণমূলের বিক্ষোভ বলেই মনে করছেন। অন্তত ১০০ ইউনিয়ন পরিষদে দেখা গেছে যেখানে গোটা আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং বিএনপি জামায়াত বা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মীকে নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রচার করেছেন। কোথাও কোথাও তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

সম্প্রতি নৌকা প্রতীক নিয়ে একজন জামানাত হারানো ব্যক্তির এলাকা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক যে প্রতিবেদন দিয়েছেন তা উল্লেখ করার মতো। সেখানে তিনি বলেছেন যে, সেখানে পুরো আওয়ামী লীগ নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছে। অন্যদিকে আগে যারা বিএনপি জামায়াত করত তারা নৌকা প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন করেছেন। ফলে যা হবার তাই হয়েছে, নৌকার প্রার্থীর ভরাডুবি ঘটেছে। তবে সর্বত্র যে চিত্রটি এমন তা না। কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি দেখা গিয়েছে। পারিবারিক ঐতিহ্য এবং স্থানীয় বিরোধের কারণে যাকে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে অন্য প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, এমপি যাকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে চেয়ে ছিলেন তিনি মনোনয়ন পাননি। পরবর্তীতে এমপি তাকে দাঁড় করিয়েছেন এবং স্থানীয় প্রভাব বিস্তার সহ বিভিন্ন রকমের অপচেষ্টার মাধ্যমে ওই প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য চেষ্টা করেছেন। তবে লক্ষণীয় ব্যাপার হল যে, এমপিরা যাদেরকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন তাদের বিজয়ের হার খুবই কম। বরং যেখানে সঠিক মনোনয়ন হয়েছে সেখানে আওয়ামী লীগ একাট্টা হয়েই নির্বাচন করেছে। এরকম তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করছে আওয়ামী লীগের নেতারা। আগামী কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পরিস্থিতি, বিদ্রোহ এবং দলীয় শৃঙ্খলা ইত্যাদি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে দলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭