ইনসাইড পলিটিক্স

নারায়ণগঞ্জ থেকে কি ঘুরে দাঁড়াবে বিএনপি?


প্রকাশ: 29/12/2021


Thumbnail

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন আগামী ১৬ জানুয়ারি। ইতিমধ্যে সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ করা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণা শুরুও হয়েছে। বিএনপি আনুষ্ঠানিক ভাবে এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে না। কিন্তু বিএনপি'র হেভিওয়েট প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছেন, তিনি হাতি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচন প্রচারণার শুরু থেকেই পুরো বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ দেখা গেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষে প্রকাশ্যেই ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন। তৈমুর আলম খন্দকার শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জের একজন নেতা নন বিএনপির জাতীয় রাজনীতিতেও তিনি একজন হেভিওয়েট নেতা। কাজেই তার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন একটি নতুন উত্তাপ পেয়েছে। বিএনপি গত কিছুদিন ধরেই বর্তমান সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তারা বলছে যে এই সরকার জনপ্রিয় নয়, এ সরকারের ওপর জনো আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। আর এই সমস্ত বক্তব্যগুলোর ভিত্তি দেওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন তাদের জন্য একটি টেস্ট কেস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিএনপি নেতারা স্বীকার করছেন যে নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে যদি বিএনপি অন্যরকম একটা ফলাফল বয়ে আনতে পারে তাহলে তা জাতীয় রাজনীতির উপর প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে সরকারবিরোধী আন্দোলন এর মধ্য দিয়ে নতুন রূপ পাবে। অনেকেই নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনকে ১৯৯৪ সালের ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচনের সাথে তুলনা করছেন। ওই মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. হানিফ বিএনপির প্রার্থী মির্জা আব্বাসকে পরাজিত করে জাতীয় রাজনীতিতে একটি ভিন্ন প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিলেন। মো. হানিফের ওই বিজয় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিল বলে অনেকে মনে করেন। 

সেরকমভাবে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন কেও বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রথম ধাপ হিসেবে মনে করছে। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এর সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। তারা মনে করেন যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন আর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এক জিনিস নয় দুটি প্রেক্ষাপট এবং বাস্তবতা ভিন্ন। তবে নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন যে বিএনপি'র জন্য একটি টনিক হিসেবে কাজ করতে পারে সেটি বিএনপির নেতাকর্মীরা স্বীকার করছে। আর তাই বিএনপি এখন একাট্টা হয়ে এই নির্বাচনে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী একজন সৎ, নির্লোভ এবং যোগ্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত। তিনি যে কয়বার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রতিবারই তিনি নিষ্ঠার প্রমাণ রেখেছেন এবং একজন দায়িত্বশীল নগর পিতা হিসেবে তিনি সকলের কাছে সমাদৃত। কিন্তু সেলিনা হায়াত আইভীর সমস্যা অন্য জায়গায়। আওয়ামী লীগ বিভক্ত এবং আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ সেলিনা হায়াত আইভীর বিপক্ষে কাজ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই আওয়ামী লীগের বিভক্তি নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে অন্যরকম ফলাফল আনতে পারে। আওয়ামী লীগের নেতারাও স্বীকার করছেন যে একাধিক কারণে সেলিনা হায়াত আইভী কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে রয়েছে। 

প্রথমত, আওয়ামী লীগের বিভক্তি। 

দ্বিতীয়ত, দীর্ঘদিন তিনি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে দীর্ঘদিন দায়িত্ব থাকার ফলে অনেকেই পরিবর্তনের পক্ষে। 

তৃতীয়ত, বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তিগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তৈমুর আলম খন্দকার পক্ষে। 

আর এইসব বিবেচনায় নারায়ণগঞ্জকেই রাজনীতির একটি ঘুরে দাঁড়ানোর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছে বিএনপি। বিএনপি মনে করছে যে, যেকোনো মূল্যে যদি নারায়ণগঞ্জের ফলাফল তারা পক্ষে আনতে পারে তাহলে সেই ফলাফলকে কাজে লাগিয়ে তারা সরকারবিরোধী একটি বড় ধরনের আন্দোলন করতে পারে। তবে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, নারায়ণগঞ্জে কখনোই বিএনপি ভালো অবস্থান করতে পারেনি, শুধুমাত্র যখন তার পক্ষে জোয়ার এসেছে। যেমন ২০০১ সাল এবং ১৯৯১ সালের নির্বাচন ছাড়া কোনো নির্বাচনেই বিএনপি নারায়ণগঞ্জে সুবিধা করতে পারেনি। সেই বাস্তবতায় সেলিনা হায়াৎ আইভীকে হারিয়ে কি নতুন ইতিহাস রচনা করতে পারবেন তৈমুর আলম খন্দকার।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭