ইনসাইড বাংলাদেশ

সালতামামি ২০২১: গ্রহণযোগ্যতার সংকটে স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো


প্রকাশ: 29/12/2021


Thumbnail

টানা তিন বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে কতগুলো স্বাধীন, স্বাতন্ত্র্য  প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, তথ্য অধিকার কমিশন তার অন্যতম।  দুর্নীতি দমন কমিশন আওয়ামী লীগের আগেই গঠিত হলেও এই কমিশনটাকে কার্যকর করার ক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশে যে কতগুলো স্বাধীন, স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রহণযোগ্যতা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং স্বকীয়তা নিয়ে সাধারণ জনগনের প্রশ্ন উঠেছে। বিদায়ী বছরে এই প্রতিষ্ঠানগুলো নানা কারণে বিতর্কিত হয়েছে। সবচেয়ে বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশন: নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক ভাবে একটি স্বাধীন স্বাতন্ত্র্য  প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এই নির্বাচন কমিশন দেশে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে কতটা সফল হয়েছে এ নিয়ে জনগণের মধ্যে নানারকম প্রশ্ন রয়েছে। সাধারণ মানুষ মনে করে যে, নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ডহীনতা এবং অযোগ্যতার কারণে দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা বিতর্কিত হচ্ছে এবং সাধারন মানুষ নির্বাচনের ব্যাপারে আস্থার সঙ্কটে ভুগছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে নতুন বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিদায়ী বছরে নির্বাচন কমিশন নানা কারণে বিতর্কিত হয়েছিল। তাই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে মানুষ এই বিতর্কের অবসান ঘটতে চায়। নতুন বছরের মানুষ কি বিতর্ক মুক্ত একটি নির্বাচন কমিশন পাবে, এটি একটি বড় প্রশ্ন। 

দুর্নীতি দমন কমিশন: দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয়েছিল স্বাধীন, স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রম কখনোই জনআস্থার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের কিছু কিছু দৃশ্যমান কার্যক্রম রয়েছে তারপরও এই কমিশনটি কতটুকু নির্মোহ, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে এ নিয়ে জনগণের মধ্যে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রচুর ক্ষমতা রয়েছে কিন্তু এই ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে এই কমিশন কতটা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে সেটি দেখার বিষয়। 

তথ্য অধিকার কমিশন: বর্তমান সরকার তথ্য অধিকার নিশ্চিত করার জন্য তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করে এবং এই আইনের আওতায় তথ্য অধিকার কমিশন গঠন করে। কিন্তু আমলাদের কর্তৃত্বে তথ্য অধিকার কমিশন তার স্বাতন্ত্র্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। বরং এটি আমলাদের একটি অবসর ক্লাবে পরিণত হয়েছে। রুটিন কাজের মধ্য দিয়েই তথ্য অধিকার কমিশন তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, সুশাসন, জবাবদিহিতা এবং গণতন্ত্র নিশ্চিত করার জন্য তথ্য অধিকার কমিশনের মত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও স্বাতন্ত্র্য এবং স্বাধীন করা দরকার। ২০২১ সালে তথ্য অধিকার কমিশন ছিল নিষ্প্রভ। ২০২২ সালে কি এই কমিশন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, এমন প্রশ্ন অনেকের মাঝে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন: জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বর্তমান সরকার গঠন করেছিল। এবং বর্তমান সরকারই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদে স্বাক্ষর করেছিল। স্বাধীন, স্বাতন্ত্র্য মানবাধিকার কমিশন সুশাসন এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বিদায়ী বছরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠানটির প্রতি সুবিচার করতে পারেনি বরং বিভিন্ন মানবাধিকার ইস্যুতে তার নির্মোহতা এবং সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির দিকে তাকিয়ে থাকার প্রবণতা এই প্রতিষ্ঠানটির স্বাতন্ত্র্য অস্তিত্বকে ক্ষুণ্ন করেছে। মানবাধিকার কমিশন অনেক ইস্যুতেই গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে পারে নাই। কিছু কিছু ইস্যুতে মানবাধিকার কমিশন ছিল একেবারে নির্লিপ্ত এবং উদাসীন। এর ফলে এই প্রতিষ্ঠানটির গ্রহণযোগ্যতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে জাতীয়ভাবে প্রশ্ন উঠেছে। একটি দেশের গণতন্ত্রকে সংহত করার জন্য স্বাধীন স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্রিয়তা, স্বাতন্ত্র্যতা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু বিগত বছরে এই প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি। ফলে বাংলাদেশে সুশাসন, দুর্নীতিমুক্ত এবং জবাবদিহি প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে। নতুন বছরে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কতটা কার্যকর হয় সেটাই হল একটি বড় চ্যালেঞ্জ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭