ইনসাইড থট

পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, অধিক উৎপাদনশীল জাত উদ্ভাবনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ গবেষণায় গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন


প্রকাশ: 30/12/2021


Thumbnail

দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে, দু‘লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম স্বপ্ন ছিল এ দেশের স্বাধীনতা অর্জন ও সাধারণ মানুষের মুক্তি। স্বাধীনতা অর্জনের পর তাঁর দ্বিতীয় স্বপ্ন ছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনারবাংলায় রূপান্তরিত করা। তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলায় তিনি দেখতে চেয়েছিলেন দেশের কৃষি ও কৃষকের সর্বাঙ্গীণ উন্নয়ন এবং স্বনির্ভরতা। 

বঙ্গবন্ধু কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে তখন কৃষি গবেষণা ও কৃষি শিক্ষার গুরুত্ব দেন। কৃষি শিক্ষায় ও কৃষি গবেষণায় মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের আকৃষ্ট করার জন্য ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এক সমাবর্তন  অনুষ্ঠানে কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা দেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি কৃষির গবেষণার গুরুত্ব অনুধাবন করে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রতিষ্ঠা ও কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক কৃষি উন্নয়ন তথা কৃষি এবং কৃষকের কথা ভেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের জনগণের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্তির লক্ষ্যে কৃষি উন্নয়নের বৈপ্লবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। 

১৯৭৩ সালে গঠন করা হয় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বারি), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট(ব্রী) ও বাংলাদেশ আণবিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র (বিনা)। এসব প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে দেশে ধান, শাকসবজি ও ফলমূল সহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে উচ্চফলনশীল জাত এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশ  কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল নামক একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। উক্ত কৃষি গবেষণা কাউন্সিল পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে একটি আইন প্রণয়নের মাধ্যমে জাতীয় কৃষি গবেষণা সিস্টেম প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

বঙ্গবন্ধুর সময় দেশে প্রথম কৃষি ঋণ ব্যবস্থার প্রচলন করা হয়। কৃষকরা যাতে সহজভাবে ঋণ পেতে পারে এ লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে কৃষি ব্যাংক স্থাপন করা হয়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ একই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘খাদ্য বলতে শুধু ধান, চাল, আটা, ময়দা আর ভুট্টাকে বুঝায় না বরং মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, শাকসবজি এসবকেও বুঝায়। সুতরাং কৃষির উন্নতি করতে হলে এসব খাদ্যশস্যের সমন্বিত উৎপাদনের উন্নতি করতে হবে।’

কিন্তু কৃষির উন্নয়নে সেই যাত্রাপথে ছেদ পড়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা পরবর্তী সামরিক সরকার সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ব্যবস্থা করেনি। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর সে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করে ধীরে ধীরে গড়ে তুলছেন সোনার বাংলা, কৃষিতে সমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ। এগিয়ে চলেছে কৃষি উন্নয়নের ধারা।

কৃষির উন্নতি মানে শুধু ধান-গম বা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি নয়। ভাত-রুটি খেয়ে পেট ভরে ঠিকই, কিন্তু মেধাবী জাতি গঠনে দরকার সুষম খাদ্য ও পুষ্টি। এ ছাড়া মেধাবী জাতি ছাড়া কোনো দেশের উন্নতি হয় না। সেজন্য প্রধান খাদ্যের পাশাপাশি মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদির উৎপাদন বাড়ানোর উপরও জোর দেওয়া প্রয়োজন। 

মেধাবী জাতি গঠনে সুষম খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহারে ‘পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ‘ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার সরকার স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘একটি বাড়ী-একটি বাড়ী খামার‘ প্রকল্প, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে 'প্রানীসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্প‘সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ করেছে এবং বাস্তবায়ন করছে। 

গত ২৩ ডিসেম্বর ২০২১ বাংলাদেশ আণবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের ‘বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা‘য় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ডঃ মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা দানাদার খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ  হয়েছি, ...কিন্তু পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাছ মাংস ডিম ও দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে আরও গবেষণা করতে হবে‘।
১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিএফআরআই), বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিএলআরআই) প্রতিষ্ঠা হলেও মাছ, মাংস, ডিম, দুধ উৎপাদনে আশানুরূপ সাফল্য অর্জন হয়নি। মাছ মাংস ডিম দুধ ইত্যাদি প্রাণীজ আমিষ জাতীয় খাদ্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করতে কৃষি শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়।  সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রাণীজ আমিষ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি হলেও চাহিদা পূরণে সক্ষমতা অর্জন হয়নি। বারি, ব্রী, বিনা  ও বিএফআরআই যেমনিভাবে উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে, তেমনিভাবে বিএলআরআই থেকেও অধিক উৎপাদনক্ষম জাত উদ্ভাবন করে মাংস ডিম দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করার দিকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বিএলআরআই এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাসহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি ভাবে প্রয়োজন।

গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করে উন্নতজাত উদ্ভাবন করে খামারীদের মাঝে বিতরণ করা এবং খামার স্থাপনে  ঋণ গ্রহণে সহজীকরণ করা প্রয়োজন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এর ন্যায় ‘বাংলাদেশ প্রানিসম্পদ উন্নয়ন কর্পোরেশন‘ স্থাপন করে পশুখাদ্য সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহে ভুর্তকির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭