ইনসাইড পলিটিক্স

সহিংস হয়ে উঠছে রাজনীতি


প্রকাশ: 30/12/2021


Thumbnail

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে ক্রমশ সহিংস হয়ে উঠছে রাজনীতি। আগামী বছরে এই সহিংসতার মাত্রা আরো বাড়তে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ফেনীতে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আজ আওয়ামী লীগ-বিএনপি'র মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে সিরাজগঞ্জে। আস্তে আস্তে এই রাজনৈতিক সহিংসতা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে। বিএনপি এখন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জায়গার সভা-সমাবেশ করে তাদের সাংগঠনিক শক্তি প্রয়োগের চেষ্টা করছে এবং এর ফলে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। টানা ১৩ বছর ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। ১৩ বছরের মধ্যে ২০১৪ এবং ১৫তে বড় ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা মোকাবেলা করতে হয়েছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। এরপর রাজনৈতিক সহিংসতা আস্তে আস্তে অপসারিত হয়ে যায় এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আস্তে আস্তে সংকুচিত হয়ে পড়ে। তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি গুলো ক্রমশ ঘরোয়া হয়ে যায় এবং ঘরোয়া সভা-সমাবেশ এবং আলোচনার মাধ্যমেই তাদের কর্মসূচিগুলো সীমিত হতে থাকে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সহিংসতায় ইতিহাস দীর্ঘ দিনের। বিশেষ করে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় থাকার পর তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করে। এ জন্য তারা প্রধান বিচারপতির বয়সসীমা বাড়িয়ে সংবিধানও সংশোধন করে। আওয়ামী লীগ সেই সময় বিচারপতি কে এম হাসানকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং নির্বাচন কমিশনকেও তারা পক্ষপাত পূর্ণ বলে অভিযোগ করে। বিচারপতি আজিজের নেতৃত্বে সেই নির্বাচন কমিশন প্রায় দেড় কোটি ভুয়া ভোটার তৈরি করেছিল। এই অবস্থায় সারা দেশে রাজনীতি সহিংস হয়ে ওঠে এবং ২৮ অক্টোবর বিএনপির আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির সহিংসতা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে। 

এরপরও রাজনীতিতে উত্তপ্ত অবস্থা চলতে থাকে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সহিংস রাজনীতির প্রেক্ষাপটেই আসে ওয়ান-ইলেভেন। এরপর দীর্ঘ দুই বছর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্বাসনে ছিল। অবশেষে ড. ফখরুদ্দীন আহম্মদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন দেয় ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে এবং ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যায়। এসময় আবার নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি আন্দোলনের ঘোষণা দেয় এবং এই আন্দোলনে ২০১৩ সালের শেষে শেষ দিক থেকে জ্বালাও-পোড়াও, বাসে আগুন সহ নানা কর্মসূচি পালন করে। ২০১৪তে বিরোধীদলের প্রতিবাদের মুখেই আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পন্ন করে। ওই নির্বাচনের পর বিএনপি রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে সরে আসে। কিন্তু ২০১৫ সালে বিএনপি আবার সহিংস আন্দোলনের পথে পা বাড়ায় এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সবকিছু অবরোধ ঘোষণা করে। কিন্তু সেই অবরোধ কার্যকর হয়নি মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রত্যাখ্যানের মধ্য দিয়ে বিএনপির কর্মসূচির যবনিকা ঘটে। বিএনপির এটি ছিলো শেষ রাজনৈতিক শক্তি পরীক্ষা। 

এরপর বিএনপি আস্তে আস্তে গুটিয়ে যায় এবং বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এক ধরনের ভাটার টান লক্ষ্য করা যায়। এরকম পরিস্থিতির মধ্যেই ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে এবং নির্বাচনে পরাজয়ের পরও বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে যায়নি। এখন আবার নতুন করে সারাদেশে বিএনপির বিভিন্ন ধরনের সভা সমাবেশের কর্মসূচি পালন করছে এবং এইসব কর্মসূচিগুলো ক্রমশই সহিংস হয়ে উঠছে। বিএনপি'র পক্ষ থেকে মনে করা হচ্ছে যে রাজপথ যদি উত্তপ্ত করতে না পারে তাহলে খালেদা জিয়ার মুক্তি বা সরকারের পতন কোনটাই হবেনা। এই জন্যই রাজনীতিতে অনেকটা জোর করেই সহিংসতাকে আমদানি করতে চাইছে রাজনৈতিক দলটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই সহিংসতার রাজনীতিতে সংকট সৃষ্টি করবে কিনা সেটি দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭