কালার ইনসাইড

একুশে শোবিজ অঙ্গন হারিয়েছে যাদের


প্রকাশ: 30/12/2021


Thumbnail

বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে ২০২১। দুয়ারে নতুন বছর। করোনার প্রকোপ কিছুটা কাটিয়ে ফের নিয়মিত জীবনে ফিরেছেন মানুষ। বিনোদন জগতের জন্য এ বছরটি ছিল বেশ ঘটনাবহুল। ২০২১ সালে সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকেই চলে গেছেন না ফেরার দেশে। এসব মানুষের শূন্যতা কখনও পূরণ হওয়ার নয়। চলতি বছরে চলে যাওয়া বরেণ্য তারকাদের প্রতি রইল বাংলা ইনসাইডারের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

এটিএম শামসুজ্জামান

একুশে পদকপ্রাপ্ত খ্যাতিমান অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে এই জাঁদরেল অভিনেতা উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমা। এটিএম শামসুজ্জামান ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে একজন অভিনেতা, পরিচালক, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকর, সংলাপকার এবং গল্পকার। আজীবন সম্মাননাসহ পেয়েছেন পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে পেয়েছেন একুশে পদক।

চলচ্চিত্র জীবনের শুরু ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে। প্রথম কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য। এ পর্যন্ত শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনী লিখেছেন। প্রথম দিকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন তিনি। অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালের দিকে। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর শুধু এগিয়ে যাওয়ার গল্প। বরেণ্য এই অভিনেতা ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান না ফেরার দেশে। তার শূন্যস্থান কখনও পূরণ হওয়ার নয়।

ফকির আলমগীর

কিংবদন্তি গণসঙ্গীত শিল্পী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক ফকির আলমগীর ২৩ জুলাই (শুক্রবার) রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে ১৪ জুলাই ফকির আলমগীরের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়। এর একদিন পর ১৫ জুলাই তার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ১৮ জুলাই থেকে তিনি ভেন্টিলেশনে ছিলেন। ২৩ জুলাই রাতে তার স্ট্রোক হয়। এর কিছুক্ষণ পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সারাহ বেগম কবরী

ঢাকাই সিনেমার ‘মিষ্টি মেয়ে’খ্যাত নায়িকা সারাহ বেগম কবরী চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল (শুক্রবার) দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি রুপালি পর্দায় দর্শকদের নয়নমণি ছিলেন। অভিনয় জীবন পেরিয়ে বাস্তব জীবনেও মানুষের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেছেন সংসদ সদস্য হিসেবে। চলচ্চিত্রে অভিনয় করে যশ-খ্যাতি, স্বীকৃতি-পুরস্কার থেকে শুরু করে এক জীবনে অনেক কিছুই পেয়েছেন। 

নায়িকা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করে পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন। চলচ্চিত্রের দর্শক নন্দিত অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী মঞ্চে আবির্ভাব মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে। ১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ সিনেমায় অভিনয়ের সুবাদে বড় পর্দায় যাত্রা শুরু। এ সিনেমার সাফল্যের পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক সিনেমায় অসাধারণ অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন কবরী। দর্শকের ভালোবাসায় খেতাব পান ‘মিষ্টি মেয়ে’। সব ধরনের সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।

চিত্রনায়ক ওয়াসিম

ঢাকাই সিনেমার সোনালি দিনের চিত্রনায়ক মেজবাহউদ্দীন আহমেদ ওয়াসিম। চিকিৎসাধীন অবস্থায় চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল (শনিবার) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই অভিনেতা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। নায়িকা কবরীর মৃত্যুর শোক না কাটতেই কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ওয়াসিমের চলে যাওয়া বাকরুদ্ধ করে দেয় চলচ্চিত্রাঙ্গনকে। এক সময় বাণিজ্যিক-অ্যাকশনের পাশাপাশি ফোক-ফ্যান্টাসি সিনেমার এক নম্বর আসনটি দখলে ছিল ওয়াসিমের। ১৯৭২ সালে ঢাকাই সিনেমাতে ওয়াসিমের অভিষেক হয় সহকারী পরিচালক হিসেবে ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’র মাধ্যমে। আর নায়ক হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয় মহসীন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ সিনেমার মাধ্যমে। দিন যতই যেতে থাকে ওয়াসিমের জনপ্রিয়তা ততই আকাশচুম্বী হয়। এক সময় বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমায় অপরিহার্য নায়ক হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

ড. ইনামুল হক

একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণী অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক ও শিক্ষক ড. ইনামুল হক। চলতি বছরের ১১ অক্টোবর (সোমবার) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাসাতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ড. ইনামুল হকের জন্ম ১৯৪৩ সালের ২৯ মে ফেনী সদরের মটবী এলাকায়। নটরডেম কলেজে পড়াশোনাকালীন তিনি প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন। ফাদার গাঙ্গুলীর নির্দেশনায় তখন তিনি ‘ভাড়াটে চাই’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। এরপর অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।

এস এম মহসীন

একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা এস এম মহসীন। প্রায় চার দশক ধরে মঞ্চ ও টেলিভিশনে অভিনয় করেন তিনি। চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল (রোববার) তিনি মারা গেছেন। এস এম মহসীন প্রায় চার দশক ধরে মঞ্চ ও টেলিভিশনে অভিনয় করেছেন। অভিনয়ে প্রশংসনীয় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২০ সালে একুশে পদক পেয়েছেন তিনি।

মাহমুদ সাজ্জাদ

প্রখ্যাত অভিনেতা মাহমুদ সাজ্জাদ। একাধারে মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন তিনি। জহির রায়হান পরিচালিত ‘সংসার’ সিনেমায় প্রথম অভিনয় করেন মাহমুদ সাজ্জাদ। পরে তিনি খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘ঝড়ের পাখি’, ‘আপন পর’, আজিজ আজহারের ‘চোখের জলে’-সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রতে অভিনয় করে পরিচিতি পান। চলতি বছরের ২৪ অক্টোবর (রোববার) তিনি মারা যান। এক সময় মঞ্চ নাটকে সরব হয়ে পড়েন মাহমুদ সাজ্জাদ। সেই সঙ্গে টেলিভিশন নাটকেও ব্যস্ততা বাড়ে। টেলিভিশনে তার অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘সকাল-সন্ধ্যা’। ৭৩ বছর বয়সী মাহমুদ সাজ্জাদ বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই নাট্যচক্রের সঙ্গে জড়িত। এই দলের হয়ে অভিনয় করেছেন ‘লেট দেয়ার বি লাইট’, ‘স্পার্টাকাস’ ও ‘জনক’-সহ বেশ কিছু নাটকে।

কায়েস চৌধুরী

নির্মাতা, অভিনেতা ও নাট্যকার কায়েস চৌধুরী ২১ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন। দীর্ঘদিন ধরেই কিডনি রোগে ভুগছিলেন তিনি। কায়েস চৌধুরী দীর্ঘদিন নির্মাতা ও অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছেন। নাট্যকার হিসেবেও অনেক দর্শকপ্রিয় নাটক উপহার দিয়েছেন তিনি।

ফরিদ আহমেদ

করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ এপ্রিল (মঙ্গলবার) সকালে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সঙ্গীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ। এর আগে ২০ মার্চ ফরিদ আহমেদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর ২১ ও ২৩ মার্চ টেস্ট করালে তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু শারীরিক অবস্থার উন্নতি না ঘটলে তিনি পুনরায় ২৫ মার্চ টেস্ট করান এবং তখন তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় ১১ এপ্রিল ফরিদ আহমেদকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকদের চেষ্টাকে ব্যর্থ করে তিনি না ফেরার দেশে চলে পাড়ি জমান।

মিতা হক

বরেণ্য রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মিতা হক চলতি বছরের ১১ এপ্রিল (রোববার) সকালে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে ৩১ মার্চ মিতা হক করোনায় আক্রান্ত হন। তার রিপোর্ট নেগেটিভ হলে হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে আসেন। তবে তিনি কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন।  

জানে আলম

‘একটি গন্ধমেরও লাগিয়া’ গানের শিল্পী জানে আলম ২ মার্চ (মঙ্গলবার) মারা গেছেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এর মাস খানেক আগে জানে আলম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। করোনামুক্ত হলেও তার নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। এরপর থেকে তার অবস্থার অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই গায়ক। 

শাহীন আলম

এক সময়ের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা শাহীন আলম চলতি বছরের ৮ মার্চ (সোমবার) মারা গেছেন। রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন শাহীন আলম। 

শামীম ভিস্তি

মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনেতা শামীম ভিস্তি। চলতি বছরের ২২ অক্টোবর (শুক্রবার) তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। মৃত্যুকালে শামীম ভিস্তির বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। তার গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার কবুতরখোলা গ্রামে। নাট্য সংগঠন নাট্য চক্রের সদস্য শামীম ভিস্তি ‘পরবাসিনী’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন।

আশা চৌধুরী

চলতি বছরের শুরুতেই ৪ জানুয়ারি (সোমবার) মধ্যরাতে মিরপুরের দারুস সালাম এলাকায় ট্রাক চাপায় মারা যান ছোট পর্দার অভিনেত্রী আশা চৌধুরী। বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিশুশিল্পী ছিলেন আশা চৌধুরী। একক নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতেন তিনি। টেলিফিল্ম ও ধারাবাহিক নাটকেও অভিনয় করতে দেখা গেছে তাকে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭