ইনসাইড পলিটিক্স

কেন তারা সেই নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি


প্রকাশ: 30/12/2021


Thumbnail

আজ ৩০ ডিসেম্বর। ২০১৮ সালের এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিল। যদিও ওই নির্বাচন নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন উত্থাপন করেছে বিএনপিসহ বিরোধী দল। রাতের অন্ধকারে ভোট নেয়া হয়েছে বলেও বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ করা হয়। কিন্তু তার সত্ত্বেও ওই নির্বাচনের পর বর্তমান সরকার তিন বছর অতিবাহিত করেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে এই নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে তেমন কোন প্রশ্ন করা হয়নি। তবে ২০১৮ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর নির্বাচন ছিল আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে সহজতম পরীক্ষা। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি এমনকি বিভিন্ন স্থানে বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকার পরও তারা ঠিকঠাকমতো প্রার্থীদের এজেন্টও  দিতে পারেনি। এরকম পরিস্থিতিতে ঐ নির্বাচনে বিএনপির পরাজয় ছিল অবধারিত। আওয়ামী লীগ ঐ নির্বাচনে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী অবস্থান থেকেই অংশগ্রহণ করেছিল। এই নির্বাচনে  যে ত্রুটি-বিচ্যুতি গুলোর কথা বলা হয় সেগুলো না করলে ওই ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় ছিল অবশ্যম্ভাবী। প্রশ্ন হল যে, ঐ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয় নি। যারা এমপি ছিলেন, দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা এরকম কয়েকজনের মনোনয়ন না পাওয়াটা ছিল ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক। কেন তারা সেই নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি এ নিয়ে বিভিন্ন রকম তথ্য পাওয়া যায়। ঐ নির্বাচনে যারা মনোনয়ন পাননি তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:

জাহাঙ্গীর কবির নানক: জাহাঙ্গীর কবির নানক সে সময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন এবং তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি আসন থেকে ২০০৯ এবং ২০১৪ এর এমপি ছিলেন। ২০০৯ এ তিনি স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হওয়ার পরও জাহাঙ্গীর কবির নানক সেসময় কেন মনোনয়ন পাননি সেটি ছিল একটি বিস্ময়। অনেকেই মনে করেন যে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের গাড়িতে হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে তাকে মনোনয়ন বঞ্চিত হতে হয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য যে, তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট সুশাসনের জন্য নাগরিক এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের মোহাম্মদপুরের বাসভবনে গিয়েছিলেন এবং সেখানে তার গাড়িবহরের উপর কে বা কারা হামলা করে। এটি জাহাঙ্গীর কবির নানকের মনোনয়নের না পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় কারণ বলে মনে করা হয়। অনেকে মনে করেন যে, তার কিছু ঋণ খেলাপির ঘটনা ছিল। এজন্য হয়তো তিনি মনোনয়ন না পেয়ে থাকতে পারেন। তবে যে কারণেই মনোনয়ন না পান না কেন ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তার  মনোনয়ন না পাওয়াটা ছিল একটি বিস্ময়।

আব্দুর রহমান: আব্দুর রহমান ছিলেন ফরিদপুর থেকে এমপি। ২০১৮ এর নির্বাচনে তিনিও মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। তার মনোনয়ন বঞ্চনার পেছনে সব চেয়ে বড় কারণ মনে করা হয় এলাকায় ঠিকমতো কাজ না করা, জনসম্প্রীতির অভাব এবং জনপ্রিয়তা হ্রাস।

বাহাউদ্দিন নাছিম: বাহাউদ্দিন নাছিম মাদারীপুর থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগের ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতা এবং কর্মীবান্ধব একজন নেতা হিসেবে তিনি পরিচিত। মাদারীপুরের আসন থেকে তার মনোনয়ন না পাওয়াটা ছিল একটি বিস্ময়। অনেকেই মনে করেন যে, শাহজাহান খান, আবদুস সোবহান গোলাপের ঐক্যবদ্ধ প্রক্রিয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত বাহাউদ্দিন নাছিম মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছিলেন।

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া: মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া চাঁদপুর থেকে এমপি ছিলেন। কিন্তু ২০১৮ নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। অনেকেই মনে করেন যে, দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হওয়ার কারণেই তাকে মনোনয়ন বঞ্চিত করা হয়। আবার কোনো প্রভাবশালী মহলের আপত্তি ছিল তার মনোনয়নের ব্যাপারে এটিও অনেকে মনে করেন। তবে যে কারণেই হোক না কেন মায়ার মনোনয়ন না পাওয়াটা ছিল বিস্ময়কর।

তবে এই চারজনই ২০১৮ নির্বাচনে মনোনয়ন না পেলেও রাজনীতিতে শক্তিশালীভাবে ফিরে এসেছেন। এরা প্রত্যেকেই এখন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারক হিসেবে কাজ করছেন এবং আওয়ামী লীগের সভাপতির আস্থাভাজন হিসেবেই কাজ করছেন।  রাজনীতিতে সাময়িকভাবে কোনো মনোনয়ন না পাওয়াটাই রাজনৈতিক জীবনের শেষ অধ্যায় নয় বরং অনেক ক্ষেত্রে এই মনোনয়ন না পাওয়াটাই শাপেবর হয়ে যায় যেমনটি হয়েছে এই পাঁচজনের ক্ষেত্রে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭