ইনসাইড পলিটিক্স

তারেকের হস্তক্ষেপ: তৃণমূলে ক্ষোভ, বড় নেতারা চুপ


প্রকাশ: 01/01/2022


Thumbnail

গণপদত্যাগ, দল থেকে অব্যাহতিসহ সারাদেশে বিভিন্ন শাখা কমিটি বিলুপ্তির নাটকীয় সব কাণ্ডে টালমাটাল বিএনপি। এ যেন বঙ্কিমচন্দ্রের বিখ্যাত সেই উক্তি ‘পথিক তুমি পথ হারাইয়াছো’র মতো-ই অন্ধকারের কৃষ্ণ গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে দলটি। পথিক সাধারণত অজ্ঞতায় কিংবা বিভ্রমে পথ হারালেও বিএনপির সংকট ও পথ হারানোর পেছনে লন্ডনী বার্তা মুখ্য ভূমিকা পালন করছে বলে অনেকেই মনে করছেন। এ নিয়ে দলের সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। 

তৃণমূলের কর্মীরা বলছেন, লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার নির্দেশেই দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তিনি যেভাবে দল পরিচালনা করছেন তাতে এই দলের কোনো ভবিষ্যৎ নেই এবং এই দলটি আস্তে আস্তে নিঃশেষিত হবে। বিশেষ করে তারেকের নির্দেশে হওয়া এসব বহিষ্কারাদেশ কাণ্ডে আতঙ্কে আছেন দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। কখন কার উপর তারেকের খড়গ নেমে আসে, এ নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠিত। তারেকের এসব অন্যায্য হস্তক্ষেপে ‍তৃণমূলে ক্ষোভ জন্মালেও এ নিয়ে নির্বাক বড় নেতারা। অন্যদিকে নির্বাচনের আগে তারেকের এসব অন্যায্য হস্তক্ষেপের কারণে বিএনপি নিশ্চিত ভাঙ্গনের মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

গত শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে হঠাৎ করে বিলুপ্ত করা হয় খুলনা মহানগর বিএনপির পাঁচটি থানা কমিটি। পাশাপাশি খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে খুলনার জনপ্রিয় নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ঘটনার জেরে অস্থিরতা চলছে খুলনা বিএনপিতে। ইতোমধ্যে খুলনায় ৫৬১ জন পদত্যাগ করেছে। এর আগে ঢাকায় ১৫৪ জন, চট্টগ্রামে ৭৫ জনসহ নারায়ণগঞ্জে ৫১ জন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন দলের চেয়ারপারসনের বরাবরে। এর আগেও আন্দোলন- সংগ্রামে যেসব নেতা-কর্মী ভূমিকা রেখেছেন তাদের অবমূল্যায়ন করার নতিজা সরূপ গণপদত্যাগ চলে দলটিতে। তবে এবারের মত ব্যাপক আকারে গণপদত্যাগের ঘটনা ঘটেনি। এ নিয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেছেন, দলের কর্তৃত্ব নিতে চায় এমন কিছু মানুষ আছে, যারা রাজনীতি করে না। কিন্তু রাজনীতির ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে চায়। তারা মিশন নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আমরা এ প্রক্রিয়াকে বাধা দিয়েছি। 

নজরুল ইসলাম মঞ্জু ছাড়াও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে গত কয়েক মাসে তিনজন জনপ্রিয় নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এরা হচ্ছেন, বরিশাল বিভাগ বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও দলের যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, কুমিল্লা সিটির মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং সবশেষ নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক থেকে সরানো হয়েছে তৈমুর আলম খন্দকারকে। তবে তৈমুর আলম বলছেন যে, সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে তার সঙ্গে দলের হাইকমান্ড আলোচনা করে একজনকে কিছু দিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করেছে। 

তবে জনপ্রিয় নেতাদেরকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়াতে দলে তেমন কোনো প্রভাব পরবে না বলে মনে করছেন বিএনপির সাবেক সাংসদ মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন। তিনি বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, বিএনপিকে নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। বিএনপি তার আপন গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে। একটি দলে পরিবর্তন তো আসবেই। দলে নতুনের আগমন, পুরাতনের চলে যাওয়া, দলীয় শৃঙ্খলার জন্য বহি:ষ্কার করা, এটি যে কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য একটি চলমান প্রক্রিয়া। 

এ দিকে দলের ‘গুরুত্বপূর্ণ ও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য’ নেতাদের অব্যাহতি দেওয়ার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, একজন নেতা, নেতা হয়ে উঠতে অনেক সময় লাগে। আপনি চাইলেন, আর নেতা বানিয়ে দিলেন, এভাবে নেতা হয় না। কয়েক যুগ রাজনীতি করার পর একজন নেতা তৈরি হয়। কিন্তু তুচ্ছ কারণ তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কারণে দলেরই বেশি ক্ষতি হচ্ছে। এতে নিরুৎসাহিত হন ত্যাগী নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা নেতিবাচক মন্তব্য করতে নারাজ। আবার কেউ কেউ অব্যাহতির বিষয়ে জেনেছেন পত্রিকা পড়ে বা অন্য কোনো ভাবে। দলীয় ফোরামে অব্যাহিত বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে নেতারা জানিয়েছেন।

ভাঙ্গন ঠেকাতে পারবে বিএনপি?

দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি দলের অভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবেলা করতে পারবে কিনা, এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বিশেষ করে সিনিয়র নেতাদের অভ্যন্তরীণ গৃহদাহ কিছুতেই থামছে না। দলের ভিতরে বিশৃঙ্খলা-কোন্দল ক্রমশ প্রকাশ্য রূপ নিতে শুরু করেছে। এক কথায় নেতৃত্ব সংকটেও ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপি। সিণ্ডিকেট ও বিভিন্ন মেরুকরণের কারণে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা কয়েক খণ্ডে বিভক্ত। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য স্পষ্ট মতানৈক্যর ইঙ্গিত বহন করে। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর সাথে 'হরিহর আত্মা'র সম্পর্কও ভুগাচ্ছে দলটিকে। এ ছাড়া বিএনপির জোট-ফ্রন্ট ছাড়াই সামনে চলার সিদ্ধান্তও হিতের বিপরীতে কাজ করেছে। তারেক জিয়ার স্বাধীনতা ও দেশবিরোধী চক্রের সাথে আঁতাত ও তাদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী দল চালানোর নতিজা সরূপ বিএনপি নিশ্চিত ভাঙ্গনের মুখে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তারেক জিয়া এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলকে ভুল পথে পরিচালিত করছেন। যার মাশুল দিতে হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়াকে। বেগম খালেদা জিয়ার এই পরিণতির জন্য তারেক জিয়া এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই দায়ী। তারা বেগম খালেদা জিয়ার লাশের ওপর রাজনীতি করতে চাইছেন। এ জন্যই এই রকম আন্দোলনের নাটক করছেন। কুমিল্লার মেয়র মনিরুল হক সাক্কু স্থানীয় ও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। বরিশালের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত মজিবুর রহমান সরোয়ার। নজরুল ইসলাম মঞ্জুও খুলনার রাজনীতিতে প্রভাবশালী। বড় কোনো ত্রুটি ছাড়া তাদের বাদ দেওয়ার কারণে সাংগঠনিকভাবে ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিএনপি। এর প্রভাব দলীয়ভাবেই টের পাবে বিএনপি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭