ইনসাইড পলিটিক্স

নতুন বছরে বিএনপির জন্য ৫ পরীক্ষা


প্রকাশ: 01/01/2022


Thumbnail

২০২১ সাল বিএনপির জন্য মিশ্র এক অনুভূতির সময় এনেছিল। বছরের প্রথম ভাগটি ছিল বিএনপির জন্য অস্তিত্বের শঙ্কার সময়। এ সময় অনেকেই আশঙ্কা করেছিল দল হিসেবে বিএনপি হয়তো বিলীন প্রায় হচ্ছে। বছরের দ্বিতীয় ভাগে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তার পুনরুজ্জীবনের একটি চেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। এই দুই ভাগকে বিশ্লেষণ করে ২০২২ সালে বিএনপির জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বছর হবে। বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। এখন ক্ষমতায় আসা তো দূরের কথা, রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকাটাই বিএনপির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বিএনপি টিকে থাকতে পারবে কিনা, সেটি হলো বিএনপির জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। বিএনপির সামনে পাঁচটি পরীক্ষা নতুন বছরে অপেক্ষা করছে।

১. বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশযাত্রা: বিএনপি এখন বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার দাবিতে আন্দোলন করছে। এই দাবিতে আন্দোলন ক্রমশ বিকশিত হচ্ছে। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরাই মনে করেন, এরকম আন্দোলন করে আর যাই হোক বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। বরং বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য কি করা দরকার, এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে নানারকম বিভক্তি রয়েছে।

২. সংগঠনের বিভক্তি-কোন্দল: বিএনপির মধ্যে বিভক্তি-কোন্দল ক্রমশ প্রকাশ্য রূপ ধারণ করেছে। যখনই বিএনপি আন্দোলনের পথে যাচ্ছে, তখনই দলের মধ্যে সংগ্রাম এবং বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে খুলনার জনপ্রিয় নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু, কুমিল্লা এবং সিলেট মেয়রের সাথে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের প্রকাশ্য বিরোধ দলকে উদ্বিগ্ন করেছে। এছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সিনিয়র নেতাদের সম্পর্কের টানাপোড়েনের কথা শোনা যায়। দলের তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের কোনো যোগাযোগ নেই। অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে কোনরকম চেইন অফ কমান্ড নেই। এই সংগঠনগুলো যে যার মতো করে চলছে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ক্ষতবিক্ষত বিএনপি শেষ পর্যন্ত ভাঙ্গনের মুখে পড়ে কিনা সেটা বোঝা যাবে নতুন বছরে।

৩. আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একাকীত্ব: বিএনপির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আন্তর্জাতিক বিশ্বে একাকীত্ব। বিএনপির নীতি-অবস্থানের সমালোচনা করে পশ্চিমা বিশ্বসহ প্রায় সব আন্তর্জাতিক বিশ্ব। ভারত যেমন বিএনপিকে বিশ্বাস করে না, তেমনি চীনের সাথেও বিএনপির এখন আগের মত সুসম্পর্ক নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে জঙ্গিবাদের মদদদাতা সংগঠন হিসেবে মনে করে। ইউরোপের সঙ্গেও বিএনপির সম্পর্ক বিশ্বাসযোগ্যতার পর্যায়ে নেই। এরকম একটি পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একঘরে থাকা একটি রাজনৈতিক সংগঠন শেষ পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা, সেটিই হল সবচেয়ে বড় ইস্যু।

৪. তারেকের নেতৃত্ব: বিএনপির মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন দাঁড়িয়েছে তারেকের নেতৃত্ব। লন্ডনে থেকে বিএনপির মতো একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল পরিচালনা করা সম্ভব কিনা, এ প্রশ্ন এখন বিএনপিতে প্রকাশ্যেই উঠছে। বিশেষ করে যখন তারেক জিয়ার একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তখন তারেকের নেতৃত্ব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। বিএনপির মধ্যে অনেকে মনে করে যে, তারেক জিয়া থাকার কারণেই বিএনপি সঠিক আন্দোলন করতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে তারেক জিয়া বিএনপির জন্য আর কতদিন ভার হয়ে থাকবেন, এটি এখন বিএনপির মধ্যে অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জিং ইস্যু।

৫. নির্বাচন এবং আন্দোলন: বিএনপির এখন প্রধান লক্ষ্য হলো আন্দোলন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়াও এই আন্দোলনের অন্যতম ইস্যু হিসেবে তারা বেছে নিয়েছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু এই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য যে জনসম্পৃক্ত করা দরকার, সেই ব্যক্তি তাদের মধ্যে নাই। এরকম পরিস্থিতিতে বিএনপি আগামী নির্বাচনে কি করবে? ২০১৪ সালে নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। আবার ২০১৮ সালের নির্বাচনে কোনো শর্ত মানা ছাড়াই বিএনপি অংশগ্রহণ করেছে। এই পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালের নির্বাচন বিএনপির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এখন দেখার বিষয় বিএনপি এই চ্যালেঞ্জগুলো উত্তরণ করে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে কিনা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭