ইনসাইড বাংলাদেশ

চীন-ভারতের মধ্যে ভারসাম্যই কূটনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ


প্রকাশ: 01/01/2022


Thumbnail

নতুন বছরে বাংলাদেশের কূটনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে চীন-ভারতের সাথে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করা। বাংলাদেশে গত এক দশক ধরে চীন এবং ভারতের সঙ্গে সমান্তরালে সম্পর্ক রাখছে। এটি যেকোনো কূটনীতির ক্ষেত্রেই একটি বড় চ্যালেঞ্জিং বিষয়। সেই চ্যালেঞ্জটাকে বাংলাদেশে বেশ ভালোভাবেই মোকাবেলা করছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ দুই বিরোধপূর্ণ দেশের সঙ্গে সমান্তরাল সম্পর্ক কিভাবে রক্ষা করে চলবে সেটি একটি দেখার বিষয়। বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে মনোযোগী হয় এবং দুই দেশের মধ্যে বিবদমান অনেকগুলো সংকটের সমাধান হয়েছে এই সময়। যদিও এখনও দু'দেশের মধ্যে অনেকগুলো অনিষ্পন্ন বিষয়ে রয়ে গেছে কিন্তু দুই দেশই মনে করে যে, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই দুই দেশের জন্য লাভজনক। আর এ কারণেই নানা টানাপড়েনের মধ্যেও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে।

অন্যদিকে চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক পার্টনার। বাংলাদেশে যে বড় বড় মেগা প্রকল্প গুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেই সবগুলোতেই চীন একটি বড় অংশীদার। পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল সব জায়গায় চীনের কিছু না কিছু অংশগ্রহণ রয়েছে। আর এইরকম বাস্তবতায় বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে চীনের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু বাংলাদেশ সেই ব্যতিক্রমী দেশগুলোর একটি, যারা একাধারে ভারত এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। যদিও বৈশ্বিক কূটনীতিতে চীন এবং ভারত এখন মুখোমুখি অবস্থানে। দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন দীর্ঘদিনের এবং নতুন বছরে এই সম্পর্ক আরও নেতিবাচক দিকে মোড় নেবে সেটা বলাই বাহুল্য। এরফলে বিশ্বের অনেক দেশেই দেখা গেছে যে, চীন যে সমস্ত দেশ গুলো ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলে সেই দেশগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করে। যেমন- মালদ্বীপের কথাই ধরা যাক। মালদ্বীপের বর্তমান সরকার ভারতপন্থী হিসেবে পরিচিত। আর এই সরকারের ওপর চীন নানারকম ভাবে চাপ প্রয়োগ করছে যেন ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে লাগাম টেনে ধরে।

একই রকম ভাবে বিভিন্ন দেশকে চীন ভারতের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোরও সুস্পষ্ট চেষ্টা করে। কিছুদিন আগেও চীনের প্রধান লক্ষ্য ছিলো বাণিজ্যিক তৎপরতা। অর্থনীতির উপরই তারা জোর দিত কিন্তু রাজনীতির বিষয়ে তাদের তেমন কোন আগ্রহ ছিলো না। কিন্তু সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গেছে। এখন চীন রাজনীতির ব্যাপারেও আগ্রহী এবং সেই আগ্রহের ধারা দেখা গেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। শুধু ভারত নয় চীন অনেক দেশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি করার ক্ষেত্রে প্ররোচিত করছে এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। তার সর্বশেষ উদাহরণ হলো পাকিস্তান। পাকিস্তান এখন প্রকাশ্যে বলছে, চীনই তাদের প্রধান বন্ধু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়। এরকম অবস্থায় বাংলাদেশের ব্যাপারে চীনের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। বরং চীন বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এবং নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। তারা মনে করে যে, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো। এরকম পরিস্থিতি কতদিন চলবে সেটি দেখার বিষয়। বিশেষ করে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যখন ভারত চীনের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হবে যেটি চলতি বছরে হবে বলে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করছেন, তখন বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক ভারসাম্য কিভাবে রক্ষা করবেন সেটি হলো দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭