ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির বহিষ্কার হিড়িকে এবার যুক্ত হলেন তৈমুর


প্রকাশ: 03/01/2022


Thumbnail

বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের নতুন বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এবার সামনে এসেছে নারায়ানগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। এর আগে, গত ২৬ ডিসেম্বর তৈমূর আলম খন্দকারকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যেই দলের ভিতরে বিশৃঙ্খলা-কোন্দল ক্রমশ প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে কুমিল্লা জেলার বিএনপির জনপ্রিয় মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকেও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার মধ্য দিয়ে। এরপর খুলনা জেলার বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং খুলনায় বিএনপির অন্যতম জনপ্রিয় নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার মধ্য দিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ পূর্ণতা পায়। শুধু তাই নয় সিলেটে বিএনপির মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথেও দলের সম্পর্ক ভালো নেই।

এসবের মাঝেই গতকাল রোববার (২ জানুয়ারি) তৈমুর আলম খন্দকারকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ থকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটি গতকাল গণমাধ্যমে না আসলেও আজ প্রকাশিত হয়েছে। যতই বিএনপি আন্দোলনমুখী হতে চাইছে ততই বিএনপির মাঝে যারা জনপ্রিয় নেতা তাদেরকে বেছে বেছে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে দলের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘নির্দেশিত হয়ে জানানো হচ্ছে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলরের সদস্য পদ থেকে আপনাকে (তৈমূর) প্রত্যাহার করা হয়েছে।’ কিন্তু বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী রুহুল কবির রিজভীর কোন সাংগঠনিক এখতিয়ার নেই কোন কেন্দ্রীয় নেতাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার। অথচ তাকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন রুহুল কবির রিজভী, যিনি বিএনপির একজন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। তাহলে তিনি কিভাবে এই চিঠি দিলেন তা নিয়ে বিএনপির ভেতর তোলপাড় চলছে। শুধু তাই নয় এর আগেও তিনি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন।

কেন তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপি'র নারায়ানগঞ্জের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা। তার হাত দিয়েই নারায়ানগঞ্জে এখন পর্যন্ত বিএনপি টিকে আছে বলে স্থানীয় জনগণ মনে করেন। সেই তৈমুর আলম খন্দকারকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো। মজার ব্যাপার হলো যে, এ ধরনের অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষেত্রে যে ন্যূনতম গঠনতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসরণ করা হয় না। সাধারণত একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলে কোন ব্যক্তিকে দল থেকে অব্যাহতি দিতে হলে তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হয়। তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গের কি অপরাধ করেছেন সে সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে তাকে জানাতে হয়, তারপর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু এখানে তৈমুর আলম খন্দকারকে ভৌতিকভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির অনেক নেতাকর্মীরাই জানিয়েছেন।

অব্যাহতি প্রসঙ্গে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, দল থেকে আমাকে কিছু জানায়নি। তবে আমি মনে করি যদি এটা সত্য হয়ে থাকে আলহামদুলিল্লাহ। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি আমাকে জনগণের জন্য মুক্ত করে দিয়েছেন। এখন আমি সবার তৈমূর। গণমানুষের তৈমূর গণমানুষের কাছে ফিরে যাবো। আমার ভাগ্যের মালিক আল্লাহ।

ক্রমশ বিএনপি তারেক জিয়ার অনুসারীদের দখলে চলে যাচ্ছে বলেই বিএনপি নেতারা মনে করেন। তার ফলাফল হিসেবে তৈমূর আলম খন্দকার, নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলেই বিভিন্ন মহল মনে করছে। হঠাৎ করে কেন তৈমূর আলম খন্দকারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে যে, তারেক জিয়ার সঙ্গে তাঁর বনিবনা হচ্ছিল না। তারেক জিয়ার বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে যারা সরাসরি আপত্তি করছিলেন, তাদের মধ্যে তৈমূর আলম খন্দকার ছিলেন অন্যতম।

তবে বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে তৈমূর আলম খন্দকারের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে খারাপ। উল্লেখ্য যে, তৈমূর আলম খন্দকার বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশনা অমান্য করে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে দাঁড়ায়। তবে সেটি তাঁর অব্যাহতির কারণ কিনা সেটি নিশ্চিত নয়। বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, বিএনপি সামনের দিনগুলোতে যত আন্দোলনের দিকে এগোবে ততই বিএনপির মধ্যে এ ধরনের ভাঙ্গন-কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিবে। কারণ বিএনপিতে এখন বিভক্তি একটি প্রকাশ্য ব্যাপার।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭