চীনের লকডাউনে মানুষ যেনো ফিরে গেলো আদিম যুগের বিনিময় প্রথায়

চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মাঝে এক নতুন চিত্র দেখলো বিশ্ব। করোনার প্রভাব বিস্তার রোধে দেশটির করোনার নতুন উপকেন্দ্র জিয়ান শহরের এক কোটি ৩০ লাখ মানুষকে গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিধি নিষেধের কঠোরতা এতটাই ব্যাপক যে কোনও বাসিন্দাই তাদের বাড়িঘর থেকে বের হতে না পারায় এক চরম মানবিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। আর এতেই আদিম যুগের বিনিময় প্রথায় জীবন বাঁচাতে শহরের বাসিন্দারা একটি পণ্য বিনিময়ে অন্য আরেকটি পণ্যর লেনদেন করছেন নিজেদের মাঝে। 

মঙ্গলবার (০৪ জানুয়ারি) জিয়ানের বাসিন্দাদের এমন দুর্বিষহ চিত্রর প্রতিবেদ তুলে ধরেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। 

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের নতুন প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ায় জিয়ানের প্রায় দেড় কোটি বাসিন্দা বর্তমানে এমন কঠোর বিধি-নিষেধের মাঝে আছেন যে, খাবার কেনার জন্যও কেউ বাড়ির বাইরে যেতে পারছেন না। কোয়ারেন্টাইনে থাকা কিছু বাসিন্দা অব্যাহত খাদ্য সংকটের মুখে সরবরাহের জন্য বিনিময় পন্থা অবলম্বন করছেন। 

চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে শেয়ার করা ভিডিও এবং ছবিতে দেখা যায়, লোকজন বাঁধাকপির জন্য সিগারেট, আপেলের জন্য থালা-বাসন ধোয়ার লিকুইড এবং সবজির জন্য স্যানিটারি প্যাড বিনিময় করছেন। 

গত কয়েক দিনে জিয়ানের অনেক বাসিন্দা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ করেছেন। শহর কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক পরিবারে বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ করলেও কেউ কেউ বলছেন, খাবারের সরবরাহ অনেক কম অথবা তারা এখন পর্যন্ত কোনও সহায়তাই পাননি।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একজন বাসিন্দা তার গেইম খেলার একটি সরঞ্জামের বিনিময়ে ইন্সট্যান্ট নুডলসের একটি প্যাকেট এবং দু’টি স্টিমড বান নিচ্ছেন।

ওয়াং নামের একজন বাসিন্দা আরএফএ নিউজকে বলেছেন, লোকজন একই ভবনে অন্যদের সাথে জিনিসপত্র অদলবদল করছেন। কারণ তাদের খাওয়ার মতো আর পর্যাপ্ত খাবার নেই। চালের জন্য অন্য একজন ব্যক্তি তার একটি স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট বিনিময় করেছেন বলে জানিয়েছে এই সংবাদমাধ্যম।

একজন উইবো ব্যবহারকারী বলেছেন, অসহায় নাগরিকরা বিনিময় প্রথার যুগে পৌঁছেছে। তুলার সোয়াবের জন্য অনেকে আলু বিনিময় করছেন। অন্য একজন জিয়ানের এমন ঘটনাকে ‘প্রাচীন সমাজে প্রত্যাবর্তন’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

তবে অনেকে এখনও আশাবাদী। অনেক প্রতিবেশী নিজেদের খাবার অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন। আর এমন ঘটনা ছুঁয়ে গেছে অনেকের হৃদয়।

চীনে বর্তমানে করোনার যে প্রাদুর্ভাব চলছে তার উপকেন্দ্র জিয়ান। কর্তৃপক্ষ প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার জন্য অত্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কিন্তু স্থানীয় কর্তৃপক্ষের লকডাউন ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনলাইনে অনেকেই ব্যাপক সমালোচনা করছেন।

গত ১ জানুয়ারি জিয়ানের দক্ষিণাঞ্চলের মিংদে-৮ ইংলি আবাসন ভবনের বাসিন্দাদের মধ্যরাতে বাড়ি ছেড়ে সরকারি কোয়ারেন্টাইন স্থাপনায় যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। মাঝরাতে বাসিন্দাদের কোয়ারেন্টাইন স্থাপনায় যাওয়ার এই নির্দেশ নিয়ে অনেকেই অনলাইনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

গত কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের মুখোমুখি হওয়ায় চীনা কর্তৃপক্ষ জিরো-কোভিড নীতি গ্রহণ করেছে। আগামী চীনা নতুন চন্দ্রবর্ষ এবং আগামী মাসে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিতব্য শীতকালীন অলিম্পিকের আগে এই প্রাদুর্ভাব পুরোপুরি নির্মূলের আশা করছে দেশটির সরকার।