ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

করোনায় বেহাল ভারত, দিন দিন জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি


প্রকাশ: 05/01/2022


Thumbnail

প্রতিবেশী দেশ ভারতে বেড়েই চলছে করোনার সংক্রমণ। পাশাপাশি বাড়ছে ওমিক্রনের প্রকোপ। গত ৭ দিন ধরে উর্ধ্বমুখী করোনার সংক্রমণ। 

গতকাল মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) প্রকাশিত কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে গত চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমিতের সংখ্যা ৩৭,৩৭৯ জন। ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ১৮৯২। করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১২৪ জনের। চিকিৎসকদের অভিমত সংক্রমণের এই বৃদ্ধির হার মোটেও সন্তোষজনক নয়। 

সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আক্রান্তের তালিকায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মহেন্দ্র নাথ পান্ডে, মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী একনাথ শিন্ডে, তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-গায়ক বাবুল সুপ্রিয়, পশ্চিমবঙ্গের সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ও ক্রিকেটার লক্ষীরতন শুক্লা, দিল্লির বিজেপি সাংসদ মনোজ তিওয়ারির মতো মন্ত্রী-রাজনৈতিক নেতারা। এছাড়াও দেশজুড়ে চিকিৎসক ও মেডিকেল স্টুডেন্টসদের আক্রান্তের সংখ্যাও কয়েক শতাধিক। ফলে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়েই এখন বড়সড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 

কোভিড টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ডি. কে. অরোরা বলেন, ভারতে তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গিয়েছে। মুম্বাই, দিল্লি, কলকাতার মতো মেট্রো শহরগুলির ৭৫ শতাংশ কোভিড রোগীই করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনে আক্রান্ত হচ্ছেন।

এদিকে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি মহারাষ্ট্রে। গত সোমবার একদিনে আক্রান্ত ১২,১৬০ জন, মৃত্যু ১১ জনের। ওমিক্রনে আক্রান্ত ৫৭৮ জন। এর মধ্যে রাজ্যটির রাজধানী মুম্বাইয়ে নতুন করে আক্রান্ত ৭৯২৮। পজিটিভিটি রেট ১৬.৩ শতাংশ। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে দৈনিক সংক্রমণ ২০ হাজার পেরোলেই মুম্বাই শহর লকডাউনের পথে হাঁটতে পারে আগাম জানিয়েছেন সেখানকার মেয়র। ইতিমধ্যেই রাজ্যটিতে একাধিক বিধিনিষেধ চালু রয়েছে।

অন্যদিকে, রাজধানী দিল্লিতেও আক্রান্তের সংখ্যা নেহাত কম নয়। মঙ্গলবার নতুন করে আক্রান্ত ৫৪৮১, মৃত্যু ৩। সংক্রমণ বৃদ্ধির হার ৮.৩৭।  কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মানসুখ মান্ডব্য জানিয়েছেন এই মুহুর্তে যা পরিস্থিতি তাতে ৮ জানুয়ারীর মধ্যেই দিল্লিতে দৈনিক ৮ থেকে ৯ হাজার করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলবে। সংক্রমণে লাগাম টানতে না পারলে ১৫ জানুয়ারীতেই সেটা বেড়ে ২০-২৫ হাজার হতে পারে। করোনায় আক্রান্ত অরবিন্দ কেজরিওয়াল নিজেই ট্যুইট করে জানান তার মৃদু উপসর্গ রয়েছে। শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। আপাতত হোম আইসোলেশনেই রয়েছেন।

বর্তমানে দিল্লিতে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে ইতিমধ্যেই রাত ১০ টা থেকে পরদিন ভোর ৫ টা পর্যন্ত ‘নাইট কারফিউ’ জারি রয়েছে। এর পাশাপাশি সপ্তাহ শেষে কারফিউ লাগু করা হয়েছে সেখানে। শুক্রবার রাত ১০ টা থেকে সোমবার ভোর ৫ টা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। 

গত সোমবার পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬০৭৮ জন। সংক্রমণের শীর্ষে কলকাতা। এই শহরে আক্রান্ত ২৮০১। কোভিডে মৃত্যু ১৩ জন। বর্তমানে পজিটিভটি রেট ১৯.৫৯ শতাংশ। করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে প্রায় বিশ হাজারের মতো মানুষ এই মুহূর্তে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন।  

করোনায় আক্রান্ত গায়ক বাবুল সুপ্রিয় এদিন ট্যুইট করে জানান তার স্ত্রী, ৮৪ বছর বয়সী বাবা এবং বাড়ির কয়েকজনের কর্মীর শরীরেও মিলেছে করোনার ভাইরাস। তবে হোম আইসোলেশনেই আছেন বাবুল। এনিয়ে তৃতীয়বার তার শরীরে থাবা বসিয়েছে এই ভাইরাস। 

কয়েকদিন আগেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী, রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। দুইজনই সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন।

করোনার থাবায় জর্জরিত কলকাতা পুলিশেও। এখনও পর্যন্ত লালবাজারের এক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, দুইজন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, ওসিসহ প্রায় ৯০ জন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত। সেই কারণে লালবাজারের তরফে প্রত্যেক সদস্যদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি থানাগুলিতেও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নতুন করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও কলকাতা সহ গোটা রাজ্যের একাধিক হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্যেও করোনার প্রকোপ সমানে বাড়ছে। তবে করোনা সংক্রমন রোধে সোমবার থেকে রাজ্য জুড়েই জারি করা হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ, যা বহাল থাকবে আগামী ১৫ জানুয়ারী পর্যন্ত।  

এদিকে করোনার প্রভাব রুখতে মানুষের মধ্যে ওষুধ কেনার ধুম পড়েছে। কলকাতার বাগরি মার্কেটে ওষুধের পাইকারী বাজারে ছোট দোকানদারদের লাইন পড়ে যায়। সেক্ষেত্রে ভিটামিন সি ও জিঙ্ক ট্যাবলেটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। জেলার বিভিন্ন ওষুধের দোকানগুলিতেও ভিটামিন ক্যাপসুল ও অ্যান্টোবায়োটিক ওষুধের প্রচুর চাহিদা। ক্রেতাদের ধারনা ‘ভিটামিন সি’ ট্যাবলেটে করোনার হাত থেকে নাকি রক্ষা পাওয়া যায়। সেই সাথে মাস্ক, স্যানিটাইজারের চাহিদাও অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭