এডিটর’স মাইন্ড

কিভাবে সেদিন ভেস্তে গিয়েছিল ষড়যন্ত্র


প্রকাশ: 05/01/2022


Thumbnail

৫ জানুয়ারি ২০১৪, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং সংবিধানের এক অগ্নি পরীক্ষার দিন। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয় এবং তিন চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। দ্বিতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই শুরু হয় নানামুখী ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত। ষড়যন্ত্রের শুরু হয় পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে। পরিকল্পনা ছিল এরকম একটি ঘটনা ঘটিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করা হবে। কিন্তু শেখ হাসিনার অদম্য দৃঢ়তায় সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এরপর শুরু হয় একের পর এক ষড়যন্ত্র এবং এই ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত পরিণতি ছিল ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সংবিধানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন। প্রধান বিচারপতি খাইরুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণ ব্রাঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। ফলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল রাখা আওয়ামী লীগের পক্ষে সাংবিধানিকভাবে অসম্ভব হয়ে দাড়ায়। আওয়ামী লীগ তখন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যায় এবং ৭২ এর সংবিধানের আলোকে নতুন করে সংবিধান সংশোধনী করে। এর ফলে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে যায়। 

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয় যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা কোন নির্বাচনে যাবে না। এর মধ্যেই ২০১৩ তে অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং ৫ টি সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সবগুলোতেই বিএনপি জামায়াতের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়। ফলে বিএনপির মধ্যে এক ধরনের ক্ষমতার উত্তাপ ছড়িয়ে পরে। এ সময় নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করা হয় এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন যে, সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে এবং সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহ বিএনপিকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দেয়ার প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং বেগম খালেদা জিয়া নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক  সরকারের দাবিতে অনড় থাকেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে গণভবনে চায়ের দাওয়াত দেন, কিন্তু ঐ চায়ের দাওয়াতও প্রত্যাখ্যান করেন এবং একজন প্রধানমন্ত্রীকে অশ্লীল, নোংরা ভাষায় আক্রমণ করেন। এতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতটুকু হতাশ হননি বরং সংবিধান এবং গণতন্ত্র রক্ষার জন্য নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এ সময় বিএনপি জামায়াত জোট ঘোষণা করেন যে, তারা ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যেকোনো একটি দল যদি নির্বাচন থেকে সরে দাড়ায় তবে সেই নির্বাচন সমস্ত উত্তাপ এবং রং হারিয়ে ফেলে। বিএনপি মনে করেছিল এরকম অবস্থায় বিএনপি যদি নির্বাচন থেকে সরে দাড়ায় তাহলে সেই নির্বাচন অর্থহীন হবে এবং তৃতীয় কোন পক্ষ ক্ষমতা গ্রহণ করবে। বিশেষ করে সেই সময় সেনা প্রধান ইকবাল করিম ভুঁইয়া ছিলেন একজন নিরপেক্ষ পেশাদার সেনাকর্মকর্তা। বিএনপির মধ্যে থেকে কেউ কেউ আশা করেছিল, বিএনপি জামায়াত সহ প্রধান দলগুলো সরে দাঁড়ালেই অবৈধ ক্ষমতা দখলের পথ সুগম হবে। যেভাবে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি মইনুল আহমেদের সমর্থনে ফখরুদ্দিন ক্ষমতা দখল করেছিল। কিন্তু সেসময় বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। 

যখন সেনাবাহিনী নির্বাচন বা রাজনৈতিক বিষয়ে নাক না গলানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তখন সেনাবাহিনীর ভেতরেই কাউকে কাউকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করা হয়। চেষ্টার অংশ হিসেবেই হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ নাটকীয় ভাবে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ায়। কথা ছিল এরকম যে, এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেই অবৈধ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পথ পাকাপোক্ত হবে কিন্তু সেটি আর হয়নি। এসময় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের সংবিধান এবং গণতন্ত্রের সঙ্কট বোঝাতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে,  সেনাবাহিনীও চরম পেশাদারিত্বের মনোভাব দেখায়। ফলে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পরেও নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত হয়ে যায়। এই সময় এরশাদ আধা নির্বাচনে যাওয়া, আধা প্রত্যাখ্যানের অবস্থায় থাকে । জাতীয় পার্টির অনেক নেতা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাই শেষ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র ভেস্তে যায়। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন তাই গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষার দিন। সেদিন ষড়যন্ত্র  ছিল যে, বাংলাদেশের সংবিধান এবং গণতন্ত্রকে আরেকবার বাক্সবন্দি করা সেই ষড়যন্ত্র ভেস্তে গিয়েছিল। আর এই ভেস্তে যাওয়ার ফলে এখনও বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে চলেছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭