ইনসাইড পলিটিক্স

তারেকের স্বেচ্ছাচারিতায় বিপর্যস্ত বিএনপি


প্রকাশ: 05/01/2022


Thumbnail

একটি রাজনৈতিক দল চলে তার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। গঠনতন্ত্র কতগুলো নিয়মকানুন আছে, যে নিয়ম কানুন অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশের অন্যতম বিরোধী দল বিএনপিতে যেন গঠনতন্ত্র বলে কোন শব্দ নেই। এখানে তারেকের কথায় এখন শেষ কথা। তারেক যা বলছেন সেই ভাবেই দল চলছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বা অন্যরা কেউ কিছু জানেন না। বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের সর্বময় ক্ষমতা চেয়ারপার্সনের উপর ন্যস্ত। চেয়ারপার্সনের কোন ভারপ্রাপ্ত পদ নেই এবং ভারপ্রাপ্ত পদ করারও কোনো বিধান গঠনতন্ত্রে নেই। চেয়ারপারসনের উপস্থিতিতে দল পরিচালিত হবে স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে এবং স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সম্মিলিতভাবে যা সিদ্ধান্ত নিবেন সেটি দলীয় সিদ্ধান্ত। তাছাড়া দলের গঠনতন্ত্র বলা হয়েছে দলের কোন কেন্দ্রীয় নেতাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে শুধুমাত্র চেয়ারপার্সনের এবং সেটি অনুমোদন নিতে হবে স্থায়ী কমিটির সভায়। কিন্তু বিএনপি একের পর এক বিভিন্ন নেতাদেরকে যে অব্যাহতি দিচ্ছে তাতে গঠনতন্ত্র কোন তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। এমনকি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এ সম্পর্কে অন্ধকারের থাকছেন। সবকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে লন্ডন থেকে। তারেক জিয়ার যা মনে হচ্ছে সেভাবে দল পরিচালিত হচ্ছে। বিএনপি'র নেতারাই এখন ত্যক্ত-বিরক্ত। তারা মনে করছেন এই রকম স্বেচ্ছাচারী কায়দায় দল পরিচালিত হতে পারে না। 

বিএনপির ভেতর একনায়কতন্ত্র এমন একটা অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও দল পরিচালনার ক্ষেত্রে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। সর্বশেষ দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারকে। জানা গেছে যে তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে পরামর্শ করেই নির্বাচনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তৈমুর আলম বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্থায়ী কমিটির সদস্য ড খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সহ একাধিক নেতার সাথে পরামর্শ করার পর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি যখন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠে নামেন তখন তাকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর টেলিফোন করে অভিনন্দনও জানান এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তৈমূর আলম খন্দকার কে জনতার প্রার্থী হিসেবে অভিহিত করেন। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা পরেই এই সিদ্ধান্ত পাল্টে যায়, তাকে দলের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। জানা গেছে যে, লন্ডন থেকে তারেক জিয়ার টেলিফোন করে তৈমুর আলম খন্দকারকে অব্যাহতি প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। এই নির্দেশ কেন দেয়া উচিত নয় এনিয়ে তারেককে যখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন সেসময় তারেক জিয়া ফোন কেটে দেন এবং এরপর পরই এই নির্দেশ কার্যকর হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন এভাবে একটি রাজনৈতিক দল চলতে পারে না, যে রাজনৈতিক দলকে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে। ওই নেতা বলেন যে আমরা গণতন্ত্রের কথা বলছি, আমরা স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশের কথা বলছি অথচ দলের ভেতরেই স্বৈরাচারের বসবাস। এখন বিরোধীদলে থেকেই বিএনপি যেভাবে চলছে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি কিভাবে চলবে তা বলাই বাহুল্য। 

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে শুধু তৈমুর আলম খন্দকার নয় এর আগে খুলনার জনপ্রিয় নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুকেও দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে একক নির্দেশে। এই ধরনের সিদ্ধান্ত প্রদানের এখতিয়ার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেই। বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেছেন দলের কোনো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদই নেই, তাহলে কিভাবে তিনি একজন নেতাকে দল থেকে অব্যাহতির দিলেন। আর এ নিয়ে চলছে এক তুলকালাম কাণ্ড বিএনপিতে। তারেক জিয়ার কারণেই বিএনপি নেতারা হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন। তারা কোন কিছু করতে ভয় পাচ্ছেন। নির্দেশ ছাড়া কোন কিছু করলেই দল থেকে বহিষ্কারের, এটি কোন নিয়ম-নীতি হতে পারে না বলে বিএনপির অনেক নেতা মনে করছেন। এ নিয়ে বিএনপিতে এখন গৃহদাহ তীব্র আকার ধারণ করেছে বলেই বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭