ইনসাইড পলিটিক্স

দীর্ঘ হচ্ছে আওয়ামী লীগের এমপিদের কালো তালিকা


প্রকাশ: 06/01/2022


Thumbnail

একটি করে ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আর আওয়ামী লীগের কালো তালিকার ফর্দ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। সর্বশেষ পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো গতকাল। এই ৭০৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনেও আরো ১৪ জন এমপি কালো তালিকাভুক্ত হয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর ফলে আওয়ামী লীগের এখন ৭৮ জন এমপি কালো তালিকাভুক্ত হলেন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে যারা প্রার্থী হবেন তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং যে সমস্ত নেতা, এমপি বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন দিবেন তাদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের এ ব্যাপারে নজর রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই প্রেক্ষিতেই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকরা বিভিন্ন পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যারা নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করেছে, নৌকাকে হারানোর জন্য বিভিন্ন রকম কৌশল গ্রহণ করেছে তাদের তালিকা তৈরি করেছে।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। ফলে এ নির্বাচন হয়ে উঠেছিল আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের লড়াই। অনেক স্থানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিপরীতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন। এখন পর্যন্ত পাঁচ দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিজয়ের হার প্রায় ৪০ শতাংশ, এটি আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অনেক স্থানে কিছু বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে, বিভিন্ন স্থানে তারা পরাজিত হয়েছেন।

আর বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার কারণে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সহিংসতাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ইউনিয়ন পরিষদের সর্বশেষ ধাপের নির্বাচনেও ১১ জন মারা গেছে। এর ফলে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১০৭ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো। এই পুরো ঘটনাগুলো আওয়ামী লীগকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের পরেই আওয়ামী লীগ সভাপতি স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সম্পর্কে কতগুলো সুস্পষ্ট অনুশাসন দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ছিলো, প্রথমত নৌকা প্রতীক যাকেই দেওয়া হোক না কেন তাকেই সকলকে সমর্থন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করতে হবে। তৃতীয়ত, এই বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে যারা মদদ দিয়েছেন, পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকের সাংগঠনিক সম্পাদকরা অভিযোগ করেছিলেন যে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনেককেই মদদ দিচ্ছেন এমপি এবং প্রভাবশালী নেতারা। তাদের মদদের কারণেই বিদ্রোহী প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করছেন না, বরং নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে কোণঠাসা করে রাখছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি যে সমস্ত এমপি বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন দিচ্ছেন তাদের তালিকা করার নির্দেশ দেন এবং ভবিষ্যতে তাদেরকে নৌকা প্রতীক দেয়া হবে না বলেও ঘোষণা দেন। এরপর সাংগঠনিক সম্পাদকরা সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কারা বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছেন এবং কারা নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করছেন তার একটি তালিকা তৈরি করেন। ওই তালিকায় এখন পর্যন্ত ৭৮ জন এমপির নাম পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন যে, যে সমস্ত স্থানে এমপিদের পছন্দের ব্যক্তি মনোনয়ন পাননি সে সমস্ত স্থানে এমপিরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন এবং বিদ্রোহী প্রার্থীকে জেতানোর জন্য সব রকমের অপকৌশল গ্রহণ করেছেন। এই সমস্ত স্থানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বড় ধরনের ভরাডুবি ঘটেছে। আর এই প্রেক্ষিতে যে সমস্ত স্থানে এমপিরা বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদ দিয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, এই তালিকাটি এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া হবে এবং এই কালো তালিকা থেকে কারা কারা আসলে প্রকৃত দোষী সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭