ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

৬ জানুয়ারি ২০১৪: কি হয়েছিল বেগম জিয়ার?


প্রকাশ: 06/01/2022


Thumbnail

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বেগম খালেদা জিয়া ঐ নির্বাচন বর্জন করেছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। সরকার গঠনের পরপরই বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপর রায় দেয়। ঐ রায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করে পরে। পরে বিচারপতি খায়রুল হক পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। এর ফলে সরকারের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করতে হয় এবং ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যেতে হয়। ৭২ এর সংবিধানে ফিরে গিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থায় দেশ যখন ফিরে যায় তখন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোট এই ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে। তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি করে আর এই দাবিতে তারা আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন যে,  সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হবে এবং বিএনপিকে প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দেয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া সেই প্রস্তাবও নাকচ করে দেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করেন এবং তাকে গণভবনে চায়ের নিমন্ত্রণ করেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া সে নিমন্ত্রনও প্রত্যাখ্যান করেন।

এরকম প্রেক্ষিতে ২০ দলীয় জোট নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। একইসাথে বামমোর্চাও ঐ নির্বাচন বর্জন করে। সকল রাজনৈতিক দলগুলো যখন নির্বাচন বর্জন করার পরও ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। যদিও ঐ নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বেগম খালেদা জিয়া সারাদেশে লাগাতার অবরোধের ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং ভোট প্রতিরোধের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু এই ভোট প্রতিরোধের ডাকের পরও বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অনেকেই মনে করেছিল যে, এই নির্বাচনের পর জ্বালাওপোড়া, ভাঙচুর অব্যাহত থাকবে। কিন্তু নাটকীয় ভাবে ৬ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়া তার সমস্ত আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন এবং বিএনপি প্রচ্ছন্নভাবে ওই নির্বাচনকে মেনে নেন। 

কেনো সেদিন বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিলেন, কি হয়েছিল তার, কি কারণেই বিএনপি নির্বাচনের পর আন্দোলন থেকে সরে আসলো। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা যায় যে, বেগম খালেদা জিয়াকে আন্তর্জাতিক মহল এবং দেশের বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয়েছিল যে, এই নির্বাচন নিয়ে যদি তিনি লাগাতার আন্দোলন করেন তাহলে এটি বিএনপি'র জন্য নেতিবাচক হবে এবং তারা বেগম জিয়াকে আন্দোলন থেকে সরে এসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়েছিলেন। বিএনপির একজন নেতা বলেছেন ওই সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং ভারতের রাষ্ট্রদূত বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং তাকে জ্বালাও-পোড়াও, ধ্বংসাত্মক রাজনীতি যদি করা হয় সেক্ষেত্রে বিএনপি'র প্রতি সব ধরনের সহানুভূতি প্রত্যাহার করা হবে বলে প্রচ্ছন্ন হুমকি দেয়া হয়েছিল। এই হুমকির পরেই বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছিলেন বলে অনেকে মনে করেন। তবে বিএনপির নেতারা এ সম্পর্কে ভিন্ন ধরনের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সম্প্রতি বিএনপির নেতারা বলছেন যে,  ওই সময় বেগম খালেদা জিয়াকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, এই নির্বাচনের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি নতুন নির্বাচন দেয়া হবে এবং নতুন নির্বাচনের আগে যেনো কো্নো রকম আন্দোলনের কর্মসূচি না নেয়া হয়। তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র এই ধরনের বক্তব্যকে অস্বীকার করছেন। তারা বলেছেন যে, এ ধরনের কোনো কিছুই হয়নি। কারণ রাজনৈতিক সংলাপ সেটি নির্বাচনের আগেই অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং বিদেশি রাষ্ট্রদূতরাও শেষ পর্যন্ত এ নির্বাচনকে মেনে নিয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পাওয়া খবরে জানা গেছে যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল যখন ২০১৪ নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয় তখন বেগম খালেদা জিয়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজের অবস্থান অব্যাহত রাখার জন্যই ওই নির্বাচনের পরদিন আন্দোলনের কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭