ইনসাইড বাংলাদেশ

মাহবুব তালুকদারের অনৈতিক অবস্থান


প্রকাশ: 06/01/2022


Thumbnail

মাহবুব তালুকদার বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের একজন সদস্য। তিনি নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই যেন একটি স্বাতন্ত্র্য এবং পৃথক অবস্থান রাখছেন। তিনি গণমাধ্যমের কাছে এমন সব বক্তব্য রাখেন যে বক্তব্যগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা, ভোটের অধিকার এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা-বিশ্বাসের পরিপন্থী। তিনি এ সমস্ত কথাগুলো বিরামহীনভাবে বলছেন, প্রথমদিন থেকেই বলছেন। যদি মাহবুব তালুকদার মনে করেন যে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ, নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট, তাহলে তিনি নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন না কেন।

একজন ব্যক্তি যখন রাষ্ট্রের কাছ থেকে বেতন-ভাতা, গাড়ি-বাড়ি, সুযোগ-সুবিধা সবকিছু নেন এবং তিনি যদি মনে করেন যে, রাষ্ট্র তাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে সেই দায়িত্ব তিনি প্রতিপালন করতে পারছেন না তাহলে নৈতিক অবস্থান থেকে তার পদত্যাগ করা উচিত। কিন্তু পদত্যাগ না করে, কোনো দায়িত্ব পালন না করে মাহবুব তালুকদার যেভাবে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন তা কতটা সমর্থনযোগ্য এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন কমিশন। একের পর এক নানা রকম বিভ্রান্তিমূলক সিদ্ধান্ত, ভোট নিয়ন্ত্রণে সীমাহীন ব্যর্থতা সহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত এ নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ রয়েছে সে সমস্ত অভিযোগের দায় থেকে মুক্ত নন মাহবুব তালুকদারও। বরং এই ধরনের অভিযোগের বিরুদ্ধে তিনি কমিশনে কি করেছেন এবং এই সমস্ত অভিযোগ দূর করার জন্য তিনি কতটুকু দায়িত্ববান আচরণ করেছেন এটি খতিয়ে দেখা যেতে পারে। যদি খতিয়ে দেখা যায় তাহলে দেখা যাবে, মাহবুব তালুকদার আসলে কিছুই করেননি। বরং তিনি নির্বাচন কমিশনার হিসেবে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন।

মাহবুব তালুকদার গতকাল পঞ্চম দফায় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের পর গণমাধ্যমের কাছে আবার একই সুরে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, এখন ভোট যুদ্ধে যুদ্ধ আছে, ভোট নেই। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এখন উৎসবের বাদ্যের বদলে ইউনিয়ন পরিষদে বিষাদের করুন সুর বাজছে। নির্বাচন ও সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না। এছাড়াও মাহবুব তালুকদার বলেছেন যে, স্মরণযোগ্য ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট পেপারের ঘটনাটি বিবিসি প্রকাশ করার পর নির্বাচন কমিশন দিনের ভোট রাতে করে বলে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হই। এটি কোনোভাবেই কাম্য ছিলনা।

দুইটি স্পর্শকাতর বিষয় এখানে উত্থাপন করেছেন মাহবুব তালুকদার। প্রথমত, তিনি বলেছেন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রক্তারক্তি, খুনোখুনি হচ্ছে -এটি কখনো কাম্য নয়। কিন্তু আমরা যদি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পরিসংখ্যানগুলো দেখি তাহলে দেখবো যে, বাংলাদেশের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সব সময় সহিংসতায় ভরপুর ছিল। বিশেষ করে বিএনপি জামাতের সময় অনুষ্ঠিত ২০০৪ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রাণহানি ঘটেছিল ৭০০ এর উপর। কাজেই বাংলাদেশের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে খুনোখুনি এবারই হচ্ছে এটি অসত্য বক্তব্য। মাহবুব তালুকদার বক্তব্যের মাধ্যমে কি বোঝাতে চাইছেন তা স্পষ্ট নয়। আবার ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেছেন যে, ভোট রাতের বেলা হয়েছে। রাতের বেলা যদি ভোট হয় তাহলে নির্বাচন কমিশন হিসেবে তিনি কি করলেন? তিনি কি এই নির্বাচন বাতিলের জন্য লিখিতভাবে কোন সুপারিশ করেছিলেন? তিনি কমিশনের বৈঠক এ ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিলেন? তিনি কি এসব আপত্তি জানানোর পরও যদি না হয়ে থাকে তাহলে কি তিনি পদত্যাগ করেছিলেন? পদত্যাগ না করে দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপানো কতটুকু যুক্তিসঙ্গত -এটি একটি বড় প্রশ্ন।

বিভিন্ন সময় দেখা যায় যে, এই ধরনের অবস্থানে থেকে কিছু কিছু ব্যক্তি গাছেরটা এবং তলারটা দুটোই খেতে চান। মাহবুব তালুকদার একদিকে যেমন বিএনপির রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন, বিএনপির ভাষায় কথা বলছেন, অন্যদিকে তিনি এই নির্বাচন ব্যবস্থাকে কলুষিত করছেন। জনগণের উপর থেকে নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে সমস্ত আস্থা-বিশ্বাস উপড়ে ফেলার চেষ্টা করছেন। একটি নির্বাচন কমিশন খারাপ হতেই পারে। কিন্তু ভোট ব্যবস্থা বা ভোটাধিকার একটি সাংবিধানিক অধিকার। এই ব্যবস্থার ওপর যদি মানুষের আস্থা চলে যায় তাহলে তা হবে ভয়াবহ। মাহবুব তালুকদার কি খুব নিভৃতে-নীরবে সেই কাজটি করছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭