ইনসাইড বাংলাদেশ

তৃতীয় মেয়াদে তিন বছর: ৫ ব্যর্থতা


প্রকাশ: 07/01/2022


Thumbnail

আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১৩ বছর পূর্ণ করলো আজ। তৃতীয় মেয়াদে বর্তমান সরকারের তিন বছর পূর্তি হলো। একটি সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা দুটোই থাকে। সাফল্য ও ব্যর্থতা মিলেই একটি সরকার এগিয়ে যায়। বর্তমান সরকারের যেমন অনেক সাফল্য আছে তেমনি বেশকিছু ব্যর্থতাও রয়েছে। তৃতীয় মেয়াদে এসে প্রথম তিন বছরে সরকারের সবচেয়ে বড় যে ব্যর্থতাগুলো জনগণের চোখে পড়েছে এবং যে ব্যর্থতাগুলোর দিকে দ্রুত দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন বলে সাধারণ মানুষ মনে করেন তার মধ্যে রয়েছে:

১. দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি: গত ৩ বছরে বর্তমান সরকারের প্রধান মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল দ্রব্যমূল্য। দ্রব্যমূল্য যেন বেপোরোয়াভাবে বেড়ে গেছে। কখনো চালের দাম, কখনো পেঁয়াজের দাম, কখনো কাঁচা মরিচের দাম -এমনভাবে বেড়েছে যে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নআয়ের মানুষের জীবন হাঁসফাঁস করে উঠেছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপই তেমন কোনো কাজে লাগেনি। আর এটি সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় অস্বস্তির কারণ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে।

২. গণপরিবহনে নৈরাজ্য: তৃতীয় মেয়াদে তিন বছর গণপরিবহনের নৈরাজ্য ছিল সবচেয়ে আলোচিত বিষয় গুলোর অন্যতম। বিশেষ করে নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন গড়ে তোলে শিক্ষার্থী-তরুণরা। আর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার নতুন সড়ক আইন করলেও সেই আইনের বাস্তবায়ন করতে পারেনি। গণপরিবহন যেন একটা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি রয়েছে। একদিকে যেমন বেপরোয়া গাড়িচালকদের কারণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে, তেমনি গনপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি এবং নানারকম অব্যবস্থাপনা মানুষকে অস্বস্তির মধ্যে ফেলেছে। এই অবস্থা, পরিস্থিতির উত্তরণ সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে অনেকে মনে করছেন।

৩. আক্রান্ত সংখ্যালঘু, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প: তৃতীয় মেয়াদে তিন বছরে আওয়ামী লীগের অসাম্প্রদায়িক নীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজন্ম লালিত স্বপ্ন ছিলো অসাম্প্রদায়িক একটি বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বর্তমান সরকার সেই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পথে হাঁটলেও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প মানুষকে উৎকণ্ঠিত করেছে, করেছে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে মুজিববর্ষের শুরুতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর সময় যেভাবে হেফাজত সারাদেশে তাণ্ডব করেছে তা বিস্ময়কর। হেফাজতের এই উত্থান বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনার জন্য একটা বড় হুমকি বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এছাড়াও বিগত বছরের শারদীয় দুর্গোৎসবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা হয়েছে এবং সেই চেষ্টা প্রতিরোধে প্রশাসনের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেনি বলেই অনেকে মনে করেন। কাজেই সাম্প্রদায়িকতার উত্থান বর্তমান সরকারের একটি বড় ব্যর্থতা এবং এটিকে প্রতিহত করা সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ গুলোর একটি বলেই অনেকে মনে করেন।

৪. দুর্নীতি: তৃতীয় মেয়াদে দুর্নীতি একটি আলোচিত বিষয় হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ঘোষণা করেছেন দুর্নীতির ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সফরে যান এবং সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থাকার আহ্বান জানান। কিন্তু তারপরও তিন বছরই দুর্নীতি বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এসেছে। বিশেষ করে বালিশ কেলেঙ্কারি, করোনার সময় স্বাস্থ্যখাতে কেনাকাটায় ভয়াবহ দুর্নীতির ঘটনা কিংবা বিদেশে সরকারি কর্মকর্তাদের লুণ্ঠিত সম্পদ পাচারের ঘটনা বারবার আলোচনায় এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন নিজেরাও স্বীকার করেছে যে, দুর্নীতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আরও কার্যকর হতে হবে তাদেরকে। প্রধানমন্ত্রী দলের ভেতর শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করেছেন, বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির অভিযোগে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারপরও দুর্নীতির এই লাগামহীন ঘোড়াকে প্রতিহত করাই সরকারের একটি চ্যালেঞ্জ এবং এক্ষেত্রে সরকার এখনও তেমন সফল হতে পারেনি।

৫. আমলাতন্ত্রের উত্থান: সরকারের তৃতীয় মেয়াদে বড় ব্যর্থতার দিক হলো আমলা নিয়ন্ত্রিত সরকার। বিশেষ করে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর আমলারা যেন চালকের আসনে বসেছেন, রাজনীতিবিদরা ব্যাকফুটে চলে গেছেন। আর এটি একটি রাজনৈতিক সরকারের জন্য অশনিসংকেত বলেই অনেকে মনে করছেন। বিভিন্ন সময় আমলাদের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের বিরোধ তিন বছরই থেমে থেমে হয়েছে। আরে এই সমস্ত ঘটনাগুলো সরকারের জন্য ছিলো বিব্রতকর।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭