এডিটর’স মাইন্ড

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন: শেষ মুহূর্তে সরে যাবেন তৈমুর?


প্রকাশ: 07/01/2022


Thumbnail

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন জমে উঠেছে। একাধিক প্রার্থী থাকার পরও এই নির্বাচনের মূল আকর্ষণ এখন বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং বিএনপির হেভিওয়েট নেতা তৈমুর আলম খন্দকার। তৈমুর আলম খন্দকারের এবারের নির্বাচনে দাঁড়ানোটা ছিল নাটকীয়, চাঞ্চল্যকর। বিএনপি ঘোষণা করেছিল যে তারা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনেই যাবে না। সেই প্রেক্ষিতে এই নির্বাচনে তাদের না যাওয়ার ঘোষণা ছিল। কিন্তু বিএনপির সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তৈমুর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর পরও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাকে টেলিফোন করেন এবং তাকে জনতার প্রার্থী হিসেবে অভিনন্দন জানান। এর পরপরই ঘটে নাটকীয় ঘটনা। তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপির কেন্দ্রীয় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য যে, তৈমুর আলম খন্দকার ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। এই অব্যাহতি দেওয়ার পরও তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচনের মাঠে আছেন এবং তিনি বলেছেন যে, এই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রশ্নই আসে না। গত ১৩ বছরের বিভিন্ন নির্বাচন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, বিএনপি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার ক্ষেত্রে চরম অনাগ্রহ দেখিয়েছে। এর আগে দুই দফা নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের একবার তৈমুর আলম খন্দকার প্রার্থী হয়েছিলেন এবং নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরুর কয়েক ঘণ্টা পরই তিনি নির্বাচন থেকে সরে যান। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দুই ভাগে বিভক্ত করার পর প্রথম নির্বাচনেও বিএনপির উত্তর এবং দক্ষিণের দুই প্রার্থী নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে আসেন। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন পর্যায়ে দেখা গেছে যে, বিএনপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ঠিকই কিন্তু ভোটগ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন কারচুপি এবং পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেন। এমনকি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে টিকে থাকেননি। তাহলে ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে কি হবে? শেষ পর্যন্ত কি স্বতন্ত্রের মোড়কে বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার এ নির্বাচনে থাকবেন নাকি নির্বাচন শুরু হওয়ার পরপর সরে যাবেন। এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে নানারকম আলোচনা এবং বিচার-বিশ্লেষণ চলছে।

তৈমুর আলম খন্দকার এবং সেলিনা হায়াৎ আইভীর সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। দুজনে দুই মেরুর রাজনীতি করলেও শামীম ওসমান বিরোধী নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির মেরুকরণে তৈমুর আলম খন্দকার সেলিনা হায়াৎ আইভীর একজন সহযোগী। এই বাস্তবতায় সেলিনা হায়াৎ আইভীকে জেতানোর জন্য কিংবা নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি থেকে শামীম ওসমানকে চিরতরে বিতাড়িত করার জন্য এটি আইভি-তৈমুরের নতুন প্রয়াস কিনা সে নিয়েও নারায়ণগঞ্জে নানারকম আলোচনা আছে। কারণ, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে যদি সেলিনা হায়াৎ আইভী একা দাঁড়াতেন তাহলে এই নির্বাচন একপেশে-পানসে হয়ে যেত এবং জাতীয় রাজনীতিতে কোন গুরুত্ব বহন করত না। বরং এই নির্বাচনের পর শামীম ওসমানই আরো বেশি ক্ষমতাবান হয়ে উঠতেন। সেক্ষেত্রে তৈমুর আলম খন্দকার প্রার্থী হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জের সিটি নির্বাচন জাতীয় রাজনীতির আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এই নির্বাচন সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। এরকম বাস্তবতায় তৈমুর আলম খন্দকার প্রার্থী হওয়ার পর শামীম ওসমানপন্থিদের মধ্যে একধরনের চাঞ্চল্য দেখা গেছে। তারা সেলিনা হায়াৎ আইভীকে হারানোর একটা সুযোগ গ্রহণ করতে চাইছেন। আর এই সুযোগ তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য বুমেরাং হয়ে উঠছে।

ইতিমধ্যেই নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন নিয়ে শামীম ওসমানকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতারা নামরকম মন্তব্য করেছেন। এরকম বাস্তবতায় সেলিনা হায়াৎ আইভী এই নির্বাচনের মাধ্যমে এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করছেন কিনা সে নিয়েও নারায়ণগঞ্জের ভোটারদের মধ্যে নানারকম আলোচনা শোনা যায়। অনেকেই মনে করছেন যে, তৈমুর আলম খন্দকারকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে শামীম ওসমানকে সেলিনা হায়াৎ আইভী এক্সপোজ করেছেন। এরপর নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন নানা অজুহাত দিয়ে তৈমুর আলম খন্দকার সরে দাঁড়াবে এবং আইভীর বিজয় নিশ্চিত হবে। তাহলে একদিকে আইভীর বিজয়ী হলো, অন্যদিকে শামীম ওসমানও কোণঠাসা হয়ে পড়লেন নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে। এরকম কোন কৌশলেই তৈমুর আলম খন্দকার প্রার্থী কিনা সেটি নিয়ে নানারকম আলোচনা চলছে। ১৬ জানুয়ারির নির্বাচনের ভোটের দিন শেষ পর্যন্ত তৈমুর আলম খন্দকার থাকেন কিনা তা নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ভোটারদের অনেকের মধ্যেই সংশয় রয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭