এডিটর’স মাইন্ড

শামীম ওসমান কি পারবেন আইভীকে হারাতে?


প্রকাশ: 08/01/2022


Thumbnail

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন আসলে কার বিরুদ্ধে কার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে? রাজনৈতিক অঙ্গনে এই প্রশ্ন ক্রমশ বড় হয়ে উঠেছে। এটি কি সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে তৈমুর আলম খন্দকারের প্রতিদ্বন্দ্বীতা নাকি সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে শামীম ওসমানের লড়াই? এই প্রশ্নটি এখন নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় যত এগুচ্ছে, ততোই দেখা যাচ্ছে যে, শামীম ওসমান এবং ওসমান পরিবারের সদস্যরা তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষে কাজ করছে। যদিও তৈমুর আলম খন্দকারের সঙ্গে ওসমান পরিবারের বিরোধ দীর্ঘদিনের। কিন্তু আইভীকে ঠেকানোর জন্য সেই বিরোধ যেন এখন বন্ধ হয়ে গেছে। বরং আইভীকে ঠেকাতে শত্রু-শত্রু এখন বন্ধু হয়ে গেছে। গত কয়েক দিনে ওসমান পরিবার সমর্থিত বিভিন্ন ব্যক্তিদের তৎপরতার পর প্রশ্ন উঠেছে, এই নির্বাচন আসলে তৈমুরের বিরুদ্ধে আইভীর নির্বাচন নয়, বরং এই নির্বাচন আসলে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে আইভীর নির্বাচন। আর সে কারণেই এই নির্বাচনে শামীম ওসমান না থেকেও আছেন। শামীম ওসমানপন্থি বা ওসমান পরিবারের সদস্যদের মনে করছেন যে, এই নির্বাচন তাদের জন্য অস্তিত্বের লড়াই। কারণ এই নির্বাচনে যদি শেষ পর্যন্ত যদি আইভী বিজয়ী হন তাহলে তা নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের আধিপত্যের উপর একটি চরম আঘাত হিসেবে বিবেচিত হবে। আর সে কারণেই ওসমান পরিবার এই নির্বাচনের ক্ষেত্রে কৌশল অবলম্বন করছে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবর দেখা গেছে যে, শামীম ওসমান পরিবারের যারা ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচন করছেন তারা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে তৈমুর আলম খন্দকারকে সমর্থন করেছেন। সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে ওসমান পরিবার তো নেই, এমনকি শামীম ওসমানের সমর্থক গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত বা শামীম ওসমানের প্রভাব বলয়ে যারা নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি করেন তারা কেউই এই নির্বাচনে এখন পর্যন্ত কোনো রকম কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করছে না। নির্বাচনের মাঠে আইভী একাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে তৈমুর আলম খন্দকার এই নির্বাচনে বেশকিছু বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও বিএনপির পুরো সমর্থন পাচ্ছেন এবং বিএনপি নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবেই কাজ করছে। যদিও তৈমুর আলম খন্দকারকে নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে কিন্তু বিএনপির যে সমস্ত নেতা এখন তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষে কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা এই নির্বাচন মনিটরিং করছেন, তৈমুর আলম খন্দকারকে নানারকম পরামর্শ দিচ্ছেন এবং প্রতিনিয়ত নির্বাচন সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, গত কয়েকদিনের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একটি অংশ তৈমুর আলম খন্দকারকে সমর্থন দিচ্ছে। ফলে সেলিনা হায়াৎ আইভী খণ্ডিত আওয়ামী লীগ নিয়ে নির্বাচন করেছে।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শামীম ওসমানকে নিষ্ক্রিয় করা এবং তিনি যেন আইভীর বিরুদ্ধে কোনো কাজ না করে, সেটিকে নিশ্চিত করার জন্য হেভিওয়েট নেতাদের নামানো হয়েছে। জাহাঙ্গীর কবীর নানক, মির্জা আজমের মত জনপ্রিয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এখন নারায়ণগঞ্জে যাচ্ছেন, তবে নির্বাচনী প্রচারণা নয়, তারা মূলত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আইভীর বিরুদ্ধে যেন আওয়ামী লীগের কোনো অংশ কাজ না করে সেটাই এখন নানক-আজমের প্রধান লক্ষ্য। এই পরিস্থিতিতে সেলিনা হায়াৎ আইভীর প্রতিদ্বন্দ্বী আসলে তৈমুর আলম খন্দকার নন, শামীম ওসমানই। প্রশ্ন উঠেছে, শামীম ওসমান কি পারবেন আইভীকে হারাতে? আইভীকে হারানোর পর তার রাজনীতি যে ঝুঁকিতে পড়বে সেই ঝুঁকি তিনি কীভাবে সামলাবেন? নারায়ণগঞ্জের সিটি নির্বাচনের উত্তাপ ছাপিয়ে এটি এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭