ইনসাইড পলিটিক্স

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: বাম দলগুলো নীরব কেন?


প্রকাশ: 09/01/2022


Thumbnail

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশের কয়েকজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞাসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই বেশ বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে স্বীকৃতি দিতে না চাওয়া এ রাষ্ট্রটি এখন বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকার নিয়ে গদগদ। এ যেন 'মা থেকে মাসির দরদ বেশি'। যে রাষ্ট্রে প্রতিনিয়ত গুম, খুন, হত্যা, বিশেষ করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলেছে, তাদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু নিয়ে এত মাথা ব্যথা কেন? এটি একটি মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। যে দেশ বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতা করেছিল, যে দেশ খাদ্য বোঝাই জাহাজ আটকে আমাদের দেশে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছিল, তারাই আজ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের চিন্তায় ঘুমোতে পারছে না!

বাংলাদেশের গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো সেনসিটিভ ইস্যু নিয়ে একের পর এক জঘন্য মিথ্যাচার করছে এবং কলঙ্কের কালিমা দেশের ললাটে লেপটে দিতে চাইছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু মার্কিনদের এ নিষেধাজ্ঞা ও আগ্রাসন নিয়ে কোনো ধরণের প্রতিবাদ নেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিশেষ করে এক সময়ে মার্কিন আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলন করা বামপন্থী দলগুলো এ নিয়ে যেন মুখে কুলুপ এঁটেছে। বাংলাদেশের বাম দলগুলোর এ আচরণকে মেনে নিতে পারছেন না দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকেই। এ নিয়ে ব্যপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও তাদের মিত্ররা ব্যতীত সব স্তরের মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা যে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, তা নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। কিন্তু এই প্রতিবাদে যাদের সামনের সারিতে থাকার কথা ছিল, যারা কথায় কথায় সমাজ বদলাতে চায়, সেইসব প্রগতিশীল দলগুলো কোনও এক দৈব কারণে চুপটি মেরে বসে আছেন। এটি শুধু এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই নয়, অনেকদিন ধরেই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে তারা কথা বলছেন না। পিন পতন নীরবতা চলছে তাদের। বিশেষ করে গত বছর ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সংঘাতের সময়ও তারা মাঠে নামেনি এবং কোনো ধরণের মিছিল, মিটিং করেনি। রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কাস পার্টি, হাসানুল হক ইনুর জাসদ, জোনায়েদ সাকির গণসংহতিসহ সিপিবি, বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, বাসদ (মার্ক্সবাদী), কিংবা জাতীয় গণফ্রন্ট, বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের মতো দলগুলোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে অবস্থান কি, তা এই দলগুলোর নেতা-কর্মীরাসহ কেউই জানে না।

সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞা কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের ওপর নয়, বরং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান র‌্যাব ও তার বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ফলে দল-মত নির্বিশেষে আমাদের র‍্যাবের পক্ষে থাকা দরকার। কেননা র‌্যাব তো আমাদেরই প্রতিষ্ঠান। র‍্যাবের কারণেই আমরা এখন শান্তিতে ঘুমোতে যেতে পারি। বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে ‍শুরু হওয়া জঙ্গিদের দৌরাত্ম্য শূন্যে নামিয়ে এনেছে রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটি। এমনকি খোদ যুক্তরাষ্ট্রও জঙ্গি নির্মূলে র‍্যাবের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। তারপরও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে এরকম হঠকারী একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। কিন্তু মার্কিনীদের এ সিদ্ধান্তের বিপরীতে আমাদের দেশে যতটা প্রতিবাদ,বিবৃতি, সভা-সেমিনার, সিম্পোজিয়াম হওয়ার কথা, তার এক ভাগও হয়নি। বিশেষ করে বাম দলগুলো, যারা জন্মগতভাবে মার্কিন আগ্রাসন বিরোধী তাদের চুপটি মেরে থাকাটা অনেক সন্দেহ সৃষ্টি করে।

তবে বাম দলগুলোর চুপ করে থাকার কারণ হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বামপন্থীরা শতধা বিভক্ত। সংগ্রামী রাজনীতির চেয়ে আরামদায়ক ঘরোয়া রাজনীতি বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নির্ভর রাজনীতিতে বর্তমানের বাম দলগুলো যে অধিক স্বাছন্দ্য বোধ করে, এ বিষয়ে খুব বেশি দ্বিমত করবার বোধহয় অবকাশ নেই। আমাদের কমরেডরা কার্ল মার্কসের ইন্ডাসট্রিয়াল রেভুলেশনকে কন্ট্রোল সি, কন্ট্রোল ভি, অর্থাৎ কপি পেস্টে মত্ত থেকেছেন। বামপন্থীরা যদি মস্কো, পিকিং জিগির না তুলে এ দেশের মাটি, মানুষ, ভূমি আর জলবায়ুর উপর আস্থা ও নির্ভর করে কৃষকদের নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চিন্তা করতেন তাহলে হয়তো আজ ‘পচে যাওয়া বাম’ বলা এত সহজ হতো না। হয়তো বা হতোই না। তাদের দেশের মানুষের কথা চিন্তা করা উচিত। দেশের কথা চিন্তা করা উচিত। দেশের স্বার্থের জন্য যে কোনও কিছু করার মানুষিকতা না থাকলে এইসব দলগুলোকে তো আর রাজনৈতিক দল বলা যাবে না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭