ইনসাইড পলিটিক্স

যে সব ঘটনার অপেক্ষায় বিএনপির আন্দোলন


প্রকাশ: 09/01/2022


Thumbnail

বিএনপি এখন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নয়, বরং সরকার পতনের আন্দোলনেই ব্যস্ত। সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে সমাবেশ করছে বিএনপি। যদিও কর্মসূচি হিসেবে বলা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি কিন্তু আসলে বিএনপি এখন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সামনে নিয়ে আসছে। এ ধরনের জনসমাবেশ বা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে দলের নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হচ্ছে বটে কিন্তু সাধারণ মানুষের এখনো বিএনপির আন্দোলনের ব্যাপারে কোনো রকম আগ্রহ সৃষ্টি হয়নি। বিএনপির নেতারা নিজেরাও স্বীকার করছেন যে, সাধারণ মানুষ যদি আন্দোলনে আগ্রহী না হয় এবং সাধারণ মানুষ যদি আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয় তাহলে এই আন্দোলন কোন চূড়ান্ত পরিণতি পাবেনা। আর এই কারণেই আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতির লক্ষ্যে বিএনপি প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন যে, প্রস্তুতির চেয়ে বিএনপি কিছু ঘটানোর অপেক্ষা করছে যে ঘটনাগুলো আন্দোলনকে একটা করে ধাপে উত্তরণ ঘটাবে। বিএনপি মনে করছে মোটামুটি তিনটি ঘটনা বিএনপির আন্দোলনকে নতুন পথে নিয়ে যাবে এবং আন্দোলনকে বেগবান করবে। এই ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে-

১. নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন: নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে অংশগ্রহণ করছে না। তবে বিএনপির হেভিওয়েট নেতা তৈমুর আলম খন্দকার এই নির্বাচনে প্রার্থী। তিনি জনতার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তৈমুর আলম খন্দকার প্রার্থী হওয়ার পর প্রথমে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাকে টেলিফোন করে অভিনন্দন জানালেও পরবর্তীতে তাকে দলের কেন্দ্রীয় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন। কিন্তু তাকে অব্যাহতি দেয়ার পরও নারায়ণগঞ্জে বিএনপির সকল নেতা-কর্মী তার পিছনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছে এবং এই নির্বাচন বিএনপির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। বিএনপি মনে করছে যে, এই নির্বাচনের পরে রাজনীতিতে একটি নতুন মেরুকরণ ঘটবে। এই নির্বাচনে যদি শেষ পর্যন্ত তৈমুর আলম খন্দকার বিজয়ী হন তাহলে তারা সরকার জনপ্রিয় নয় এবং সরকারের অবস্থান এখন খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে এই বক্তব্য দিয়ে মাঠ গরম করার চেষ্টা করবে। আবার এই নির্বাচনে যদি তৈমুর আলম খন্দকার পরাজিত হন তাহলে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে এই বক্তব্যকে তারা সামনে নিয়ে আসবে। অর্থাৎ নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন এটি তাদের আন্দোলনের একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হবে বলে বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছেন।

২. নতুন নির্বাচন কমিশন: নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন রাষ্ট্রপতি। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছেন। আগামী ১৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সাথে সংলাপের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শেষ হবে এবং এটা সার্চ কমিটি গঠিত হতে পারে। তবে নতুন নির্বাচন কমিশন যেভাবেই গঠিত হোক না কেন, নতুন নির্বাচন কমিশনে যারাই থাকুক না কেন, এটি বিএনপির আন্দোলনের আরেকটি টার্নিং পয়েন্ট বলে মনে করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা মনে করছেন যে, নির্বাচন কমিশন যে প্রক্রিয়ায় গঠিত হচ্ছে তা অধিকাংশ রাজনৈতিক দল মেনে নেবে না। ফলে নির্বাচন কমিশন গঠনের পরে রাজনীতি নতুন একটি মোড় নিবে এবং এর ফলে রাজনৈতিক আন্দোলন শুরুর একটি সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর এ কারণেই বিএনপি এখন মাঠ করে রাখছে যেন যখনই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে তখনই তাকে প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে। বিএনপি এই কর্মসূচির সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও সম্পৃক্ত করার চিন্তা ভাবনা করছে। এই প্রক্রিয়ায় যেন সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে সেজন্য বিএনপির মধ্যে নানারকম চেষ্টা-তদবির চলছে।

৩. খালেদা জিয়ার চূড়ান্ত পরিণতি: বেগম খালেদা জিয়ার চূড়ান্ত পরিণতি বা শারীরিক অবস্থার যদি চূড়ান্ত অবনতি ঘটে সেটি বিএনপির আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট বলে মনে করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা মনে করছেন যে, দলের নেতাকর্মীরা এখন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে থাকছে। যদি বেগম খালেদা জিয়ার সেরকম কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয় তাহলে সারা দেশ অচল করে দেওয়াসহ সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের পথে যাবে বিএনপি এবং সেটি হবে বিএনপির চূড়ান্ত আন্দোলনের পদক্ষেপ।

আর এ কারণে এটি বিএনপির আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় হিসেবে বিবেচনা করছে। অর্থাৎ এই তিনটি ঘটনার উপর বিএনপির আন্দোলন নির্ভরশীল এবং বিএনপির নেতাকর্মীরা এই তিনটি ঘটনার উপর নির্ভর করেই আন্দোলনের ছক কষছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭