ইনসাইড পলিটিক্স

নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান যুগের অবসান ঘটলো?


প্রকাশ: 10/01/2022


Thumbnail

আজ নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সমর্থন করেছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে যখন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল সারা দেশের রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, ঠিক সেই সময় শামীম ওসমানের এই সংবাদ সম্মেলন ছিল চাঞ্চল্যকর। স্পষ্টতই শামীম ওসমান স্ব-ইচ্ছায় এই সংবাদ সম্মেলন করেনি। এ সম্পর্কে গতকাল বাংলা ইনসাইডার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। বাংলা ইনসাইডারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, নারায়ণগঞ্জের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কঠোর অবস্থানে আছেন এবং শামীম ওসমানকে অবশ্যই সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধাচরণ বন্ধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতির এই বার্তা শামীম ওসমানকে জাহাঙ্গীর কবির নানক জানিয়ে দিয়েছিলেন। এর পরপরই দৃশ্যপটের পরিবর্তন ঘটে। স্পষ্টতই এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে শামীম ওসমানের প্রথম পরাজয়ের ঘটলো। শামীম ওসমান নিজেও সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেছেন যে, এটি তার জীবনের সবচেয়ে তিক্ত একটি সংবাদ সম্মেলন এবং তিনি অনন্যোপায় হয়ে যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তার কথাতেই সেটি স্পষ্ট হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আইভী বনাম শামীম ওসমানের দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান ছিল। আওয়ামী লীগ দুই নেতাকেই সমান্তরাল গতিতে রেখে একটি ভারসাম্যের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জে জনপ্রিয়তার প্রভাব বলয় বজায় রেখেছিল। সিটি নির্বাচনে যেমন আইভী মনোনয়ন পাচ্ছিলেন তেমনি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে শামীম ওসমান নির্বাচিত হচ্ছিলেন। তবে শামীম ওসমান একা না, ওসমান পরিবারের একটি প্রভাব নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আছে। আর এ কারণেই শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের যেকোনো নির্বাচনে একটি বড় ফ্যাক্টর। এবার এই গুরুত্বটি আরো বেড়েছিল যখন আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপি হেভিওয়েট নেতা তৈমুর আলম খন্দকার প্রার্থী হয়েছিলেন। সেলিনা হায়াৎ আইভী সরাসরি বলেছিলেন যে, তৈমুর আলম খন্দকার গডফাদার শামীম ওসমানের প্রার্থী। তিনি যে জেনে-বুঝে এটি বলেছিলেন এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কোন দ্বিমত নেই। তার পরপরই দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি। বিশেষ করে গত শুক্রবার ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত চারজন ওয়ার্ড কমিশনার তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করলে আইভীর সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এর পরপরই ছাত্রলীগের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তখন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে কেন্দ্র থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতিকে প্রস্তাব দেন এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি তাতে সম্মতি দেন। এর পরপরই নারায়ণগঞ্জের ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়। এই বিভক্তির মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনার কঠোর বার্তা নারায়ণগঞ্জে পৌঁছে যায়।

এই ঘটনার পর শামীম ওসমানকেও একই বার্তা দেওয়া হয় যে, দলের জন্য শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়। অর্থাৎ শামীম ওসমান একরকম বাধ্য হয়েই নারায়ণগঞ্জে শেষ পর্যন্ত আইভীকে মৌখিক সমর্থন দিলেন। এখনও আইভীর সমর্থক এবং কর্মীরা মনে করে যে, এটি শুধুমাত্র লোক দেখানো। বাস্তবে শামীম ওসমান ভেতরে ভেতরে আইভীর বিরুদ্ধেই কাজ করবেন। কিন্তু যেহেতু তিনি প্রকাশ্যে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সমর্থন করেছেন, সে কারণে এখন ভেতরে কলকাঠি নাড়ালেও সেটি খুব একটা লাভবান হবে না। এই সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এই প্রথমবারের মতো শামীম ওসমান বশ্যতা স্বীকার করলেন এবং তাঁর অবস্থান থেকে সরে আসলেন। এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের প্রভাব-প্রতিপত্তির অবসান ঘটলো বলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শামীম ওসমান নিজেই প্রমাণ করলেন, তিনি দলের জন্য অপরিহার্য নয় এবং তিনি যদি এবার নির্বাচনে আইভীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করতেন অন্যান্যবারের মতো তাহলে তার করুণ পরিণতি হত। আর সেকারণেই নারায়ণগঞ্জ এই নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, এই নির্বাচনের পর শামীম ওসমানের কর্তৃত্বের অবসান ঘটবে নারায়ণগঞ্জে, সেটি হলফ করেই বলা যায়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭