ইনসাইড পলিটিক্স

পঞ্চপাণ্ডবের প্রাথমিক বিজয়


প্রকাশ: 10/01/2022


Thumbnail

অবশেষে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিলেন নারায়ণগঞ্জের এমপি শামীম ওসমান। শামীম ওসমান আর সেলিনা হায়াৎ আইভীর দ্বৈরথ নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জে  তারা পরস্পর মুখোমুখি অবস্থায় আছে। এরকম পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের এবারের সিটি নির্বাচন শেষ পর্যন্ত কি হয় তা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল। তবে শামীম ওসমানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর অনেকটাই এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান ঘটলো। যদিও বলা হচ্ছে যে, শামীম ওসমান শেষ পর্যন্ত সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে থাকবেন না কিন্তু প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করা থেকে বিরত থাকবেন এটা মোটামুটি নিশ্চিত। আর এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগের পঞ্চপাণ্ডবকে। আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছ থেকে যে দায়িত্ব পেয়েছিলেন সে দায়িত্বের প্রথম বিজয় অর্জন করলেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

গত কিছুদিন ধরে আওয়ামী লীগের পরিচালনায় পঞ্চপাণ্ডবের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের অসুস্থতা এবং বিভিন্ন বিষয়ে তার সিদ্ধান্তহীনতার কারণে আওয়ামী লীগ সভাপতি আওয়ামী লীগের পাঁচজন নেতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। বিভিন্ন সাংগঠনিক বিষয়ে তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাঁচজন নেতা হলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজম এবং এস এম কামাল। এই পাঁচ নেতাই এখন দল পরিচালনার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে বলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহল মনে করেন।

সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের তফসিল যখন ঘোষণা করা হয় তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং মির্জা আজমকে নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন পরিচালনা এবং সমন্বয় করার দায়িত্ব দেন। জাহাঙ্গীর কবির নানক এই দায়িত্ব পাওয়ার পরেই আবার পঞ্চপাণ্ডবকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করেন। এই পাঁচ নেতাই নিয়মিত নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনের তদারকি করছেন, কর্মীদের সঙ্গে গণসংযোগ করছেন এবং নির্বাচনে যেন শেষ পর্যন্ত নৌকা প্রতীক বিজয় হয় সেজন্য কৌশল প্রণয়নের কাজ করছেন। এই পাঁচ নেতার দায়িত্ব পালন করার পর প্রায় প্রতিদিনই যারা এমপি নন তারা নির্বাচনী এলাকায় যাচ্ছেন। এদের মধ্যে একমাত্র মির্জা আজম এমপি, বাকিরা প্রতিদিনই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যাচ্ছেন, কর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন এবং বিভিন্ন কৌশল প্রণয়নের ক্ষেত্রে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সহায়তা করছেন। এদের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ সভাপতি জানেন যে, নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের পক্ষের সমর্থকরা আইভীর বিরোধিতা করছে এবং তৈমুর আলম খন্দকারকে প্রার্থী করার পিছনে শামীম ওসমানের একটি প্রচ্ছন্ন হাত রয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনী প্রচারণার পর পরই যখন শামীম ওসমানের লোকজন তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ শুরু করে তখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের টনক নড়ে। এরপরই আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির নানকের মাধ্যমে পঞ্চপাণ্ডবকে দায়িত্ব দেন যে শামীম ওসমানকে নিরস্ত করতে হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী তার কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলায় জেলায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল নতুন নয়। সারাদেশেই বিভিন্ন জায়গায় এই কোন্দল কম বেশি রয়েছে। তবে নারায়ণগঞ্জের কোন্দলটা অনেকটা প্রকাশ্যে এবং দীর্ঘদিনের। অনেকেই মনে করেন এটি পারিবারিক বিরোধের উত্তরাধিকার বহন। একটি পারিবারিক বিরোধের উত্তরাধিকার বহন করছেন শামীম ওসমান এবং সেলিনা হায়াৎ আইভী। সেজন্যই পঞ্চপাণ্ডব এই পরীক্ষায় পাশ করবেন কিনা বিশেষ করে শামীম ওসমানকে নিবৃত্ত করার অগ্নিপরীক্ষায় তাদের উত্তীর্ণ হওয়াটা ছিলো দেখার বিষয়। শেষ পর্যন্ত পারবেন কিনা এ নিয়েও অনেকে সংশয় ছিল। কিন্তু পঞ্চপাণ্ডব নির্বাচনের বেশ আগেই শামীম ওসমানকে আজ সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য করেন এবং শামীম ওসমান আইভীর পক্ষে আনুষ্ঠানিক সমর্থন দিতে বাধ্য হন। একই সঙ্গে শামীম ওসমানপন্থি যারা ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছিল তারাও শামীম ওসমানের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা অত্যন্ত প্রকাশ্যে আইভীর বিরোধিতা করতে পারবে না। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পঞ্চপাণ্ডবের প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হলো। সারাদেশে আওয়ামী লীগের যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দ্বন্দ্ব সেটি নিরসনের ক্ষেত্রেও যে ভবিষ্যতে পঞ্চপাণ্ডবরা দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন তা অনেকটাই নিশ্চিত হলো।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭